দক্ষিণমুখী যানবাহনগুলো সেতু পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে মুহূর্তে চলে যাচ্ছে দক্ষিণের শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে। কিন্তু সংকট বেড়েছে যানবাহন পেতে আর জ্যাম ঠেলে সেতুঅ্যাপ্রোচ সড়কে উঠতে। পদ্মা সেতুর মতো এতো বড়মাপের প্রকল্প চালু করার সময় কিছু নতুন দাঁত ওঠার বেদনা থাকবেই। পদ্মা সেতুমুখী সেতুর স্রোতের কারণে আরিচা পথে যাত্রী চাপ অনেক কমেছে।
আশা করা যায়, আগামী ঈদ নাগাদ কমলাপুর-ভাঙ্গা রেলযোগাযোগ চালু হবে। ঈদ-পার্বণসহ স্বাভাবিক সময়ে যাতায়াতের সমস্যাগুলো দূর হবে। সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে এই সময়ের মাঝে ঢাকা প্রান্তে ঢাকা সার্কুলার রিংরোডের কাজ শেষ করে যুক্ত করা যেতো। যতোদিন অবশিষ্ট কাজ শেষ না হয় দক্ষিণ থেকে দ্রুত আসা যানবাহনের বহর ঢাকার যানজট আরো বাড়িয়ে তুলবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, ঢাকা মেট্রো উত্তরা থেকে-মতিঝিল ২০২৩ শেষ নাগাদ চালু হলেও ঢাকার যানজটের ওপর শুভ প্রভাব ফেলবে। যতোটুকু দেখলাম দক্ষিণের যাত্রা অনেক সহজতর হলেও উত্তরের সমস্যা, রেল যাতায়াতে সংকট রয়ে গেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতুমুখী সড়কে বিপুল যানজট দেখছি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। রেলযাত্রা বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের হাইড সিক খেলা কবে দূর হবে কে জানে? ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রতি ঈদের সময় কেন অযথা হয়রানি করা হয়? আর যাত্রীদেরও কেন প্রতি ঈদে গ্রামগঞ্জে যেতে হয়? অবশ্য সরকারকেও প্রশাসন প্রকৃত অর্থেই বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ঢাকা কিন্তু কোনোভাবেই বর্তমান বা দ্রুত বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাপ নিতে পারবে না।
প্রসঙ্গে ফেরায় যাই। ঈদের ছুটির শেষে দক্ষিণাঞ্চলে ঈদ করতে যাওয়া জনগোষ্ঠী ঢাকায় ফেরার পর নিবিড় মূল্যায়ন করা প্রয়োজন কতটুকু শুভ প্রভাব ফেলেছে ২৫ জুন ২০২২ চালু করা সড়ক যোগযোগ। এই সময়ের মাঝে সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়ে যাবে। সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হলে আগামী ঈদের আগে অধিকাংশ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় শুধু যে যাত্রীরা উপকৃত হচ্ছেন তা নয়, এ সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের গরুভর্তি বহু ট্রাক রাজধানীতে এসেছে। যেগুলো আগে আসতে নানা দুর্ভোগ পোহাতো ট্রলার,ট্রাক বিভিন্নভাবে। যেমনটা এবারো উত্তরবঙ্গ থেকে আসা গরুভর্তি ট্রাক দীর্ঘ জ্যামে পড়ে। কিন্তু পদ্মা সেতুতে সেটা হয়নি। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গরু ব্যবসায়ীরা সহজেই ঢাকার বাজারে তাদের গরু নিয়ে এসে বিক্রি করে পরমানন্দে আবার ফিরে যেতে পেরেছেন।
হাহাকার শুরু হয়েছে, সদরঘাটে লঞ্চ যোগাযোগে। যাত্রীর চাপ নেই। ঈদে অবশ্য মোটামুটি হয়েছে। কিন্তু এটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনায় ওই হাহাকার। তবে লঞ্চে চরম অব্যবস্থাপনাও আছে। বাসে এখন অনলাইনেই টিকেট ক্রয় করা যায়, যা আগে ছিলনা। লঞ্চ আধুনিক হলেও টিকেটিং সেকেলের। মানুষ সদরঘাটের মতো ব্যস্ততম এলাকায় যেয়ে টিকেটের সন্ধান লাভের মতো দুরূহ কাজ করতে চায় না। তাই মানুষ বিরক্ত হয়ে বাসমুখী। লঞ্চের এসব সুযোগ সুবিধা না বাড়ালে মানুষ ক্রমশ বিমুখ হবে লঞ্চযোগাযোগ থেকে। এ ব্যাপারেও সরকারের কাছে ভর্তুকি চায় কেউ কেউ। এটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছেনা?