গুম-খুন মামলা হামলা করে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 13-07-2022

গুম-খুন মামলা হামলা করে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার

বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেছেন, দেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে কোনো আলোচনা ছাড়াই মাত্র ১১ মিনিটে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমান প্রজন্ম বাকশালী শাসন দেখেনি। আমরাও তখন বেশ ছোট ছিলাম। তবে ইতিহাস থেকে যা জেনেছি, যা বুঝেছি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাকশালের চেয়েও ভয়াবহ। ১৯৭৫ সালে চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল।

আর এখন অনেকগুলো প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া চালু রেখেই বাক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে সাধারণ জনগণের। রাজনীতি করার সকল পরিবেশ বন্ধ করা হয়েছে। খুন, গুম এবং মামলা-হামলার মাধ্যমে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে বর্তমান সরকার। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিলেও তাকে চাকরি হারাতে হচ্ছে, হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। মাত্র ক’দিন আগে দেখলাম একজন সরকারি কর্মকর্তা কবিতা লেখার অপরাধে চাকরি হারিয়েছেন। দুঃশাসন, কুশাসন, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বর্তমান সরকার। কিন্তু তা বলা যাবে না। বর্তমান সরকারের সোনার ছেলেরা ধর্ষণ করলেও ধর্ষকের শাস্তি হয় না।

কিন্তু ধর্ষণের কথা যে প্রকাশ করবে তার জীবন বিপন্ন। রাজনৈতিক সকল শিষ্টাচার থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে অবস্থান করছে বর্তমান সরকার। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন জানতে চাইলে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বাংলাদেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ^াসী শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাবেক উপদেষ্টা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির দুইবার সাধারণ সম্পাদক, দুইবার যুগ্ম-সম্পাদক, পাঁচবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে পাঁচবার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতিও ছিলেন। তিনি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার অধিবাসী। বাগেরহাট-৪ আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন। নিচে তাঁর সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 

দেশ: শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আপনার বক্তব্য কি?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি তো ভয়াবহ। গত কয়েক বছর আগে টিআইবির রিপোর্টে সব উল্লেখ আছে। টিআইবির রিপোর্টে দেখা যায় যে, শিক্ষাঙ্গন সরকারের সোনার ছেলেদের দখলে। ভিন্ন মতের ছাত্র-সংগঠনের কোনো স্থান বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে নেই। হলে হলে চর্টার সেল আছে। সোনার ছেলেরা ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের তাদের নির্দেশমতো না চললে তারা মানুষ বানানোর দায়িত্ব নিয়ে টর্চার করে। শিক্ষক নিয়োগে চরম দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয় লোক নিয়োগ ও ভোটার নিয়োগের পাল্লা। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার কোন মূল্যায়ন নেই। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিও সম্পূর্ণ দলীয় এবং দলান্ধ লোকদের দিয়ে যাদের কাজ দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া। নিয়োগবাণিজ্য এখন টেন্ডারবাণিজ্যের মতো চলছে। মেধাবী শিক্ষকরা নিয়োগ পান না। এর বাইরে আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা, মারামারি ও সন্ত্রাস। ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে হামলাসহ গুলিবিদ্ধ হবার মতো ঘটনার মোকাবিলা করছে। ছাত্রের ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে ছাত্র কর্তৃক শিক্ষক হত্যাও এই সরকারের আমলে সামান্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

দেশ:বর্তমান সরকারের আমলের চেয়ে বিএনপির শাসনামল কি খুব ভালো ছিল?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:বর্তমান সরকারের চেয়ে বিএনপির শাসনামল সর্বদিক দিয়েই ভালো ছিল। সবচেয়ে বড়কথা বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসেছে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে। কোনো নির্বাচনে কারচুপি করে অন্য কারো সহযোগিতায় বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি। ভোটারবিহীন নির্বাচন বা মধ্যরাতের ভোটের মাধ্যমে বা মঈন-ফখরুদ্দীনের সহযোগিতায় বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি। তখন মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নিশ্চয়তা ছিল। খুন, গুমের রাজনীতি তখন ছিল না। দুর্নীতি, দুঃশাসন, কুশাসন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুট, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের কাহিনি তখন ছিল না। পিকে হালদার তখন ছিল না। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ছিল না। মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতা তখন ছিল। মিডিয়াগুলো মুক্তভাবে লিখতে পারতো। 

দেশ: শিক্ষাঙ্গন কি বিএনপির আমলে দলীয়করণমুক্ত ছিল? 

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:বিএনিপি আমলে শিক্ষাঙ্গনে সকল ক্রিয়াশীল সংগঠনের সহাবস্থান ছিলো। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছিলো। দলীয় কর্মীদের নিয়োগের পরিবর্তে মেধাকে মূল্যায়ন করা হতো। শুধুমাত্র দলীয় লোকজন দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি ছিলো না। সমাজের শিক্ষানুরাগীরা ছিলেন ম্যানেজিং কমিটিতে। নিয়োগবাণিজ্য ছিল না। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে মূল্যায়ন করা হতো। শিক্ষক নিয়োগের নামে ভোটার নিয়োগ করা হতো না। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির সুযোগ ছিল না। 

দেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির আমলে হস্তক্ষেপ হয়নি?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম: বিএনপি আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক পদে আমি ছিলাম না। তাই বিস্তারিত বলা যাবে না। তবে আমার দেখামতে তখনকার শিক্ষক নিয়োগ দলীয় বিবেচনায় না নিয়ে মেধাকে বিবেচনা করা হতো। 

দেশ: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ঘটনায় আপনার নাম এসেছে। অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসে আপনি সরকার হটাতে ষড়যন্ত্র করেছেন। এ ব্যাপারে কি কিছু বলুন?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:ষড়যন্ত্র তারাই বেশি বোঝে, যারা সারাক্ষণ ষড়যন্ত্র করে সবকিছু পেতে চায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধির চর্চা কেন্দ্র। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জায়গা। কিন্তু সেই স্বাধীন মত প্রকাশের জায়গাটুকুও এখন আর অবশিষ্ট নেই। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখন চাকরি হারাতে হয়, অ্যাকাডেমিক কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, নানাভাবে হয়রানি করা হয়। শুধুমাত্র বর্তমান সরকার বা প্রশাসনের তাবেদারি করলেই তার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় চমৎকার জায়গা, ষড়যন্ত্র করার জন্য কেউ যে উন্মুক্ত স্থানে যায় না এটা বোঝার ক্ষমতাও বুঝি হারিয়ে ফেলেছেন কিছু দলকানা তাবেদার শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বা ক্লাব সবার জন্য উন্মুক্ত। সিসি টিভি ক্যামেরার আওতাধীন। এমন উন্মুক্ত স্থানে কেউ ষড়যন্ত্র করতে আসে না। এটা যে কোনো ব্যক্তির মগজেই ঢোকার কথা। অনেকে অভিযোগ করেছেন আমি নাকি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কিছুদিন আগে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন ঠেকাতে তথা, সরকার হটাতে ষড়যন্ত্র করেছি। সাভারে রানা প্লাজা যখন ধসে পড়ে তখন একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, বিএনপি ঝাঁকি দিয়ে রানা প্লাজা ভেঙে ফেলেছে। এখনো তাহলে ঝাঁকি দিয়ে পদ্মা সেতু ভেঙে ফেলতে চাচ্ছি। এমন কথাও তাদের মগজে ঘুরপাক খায়। ষড়যন্ত্র করতে চাইলে কেউ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ক্লাবে না গিয়ে বরং গোপন জায়গায় বসে যেখানে কেউ কিছু জানতে পারবে না। এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার রুচি নেই। 

দেশ:কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের বেলায় একজন রাজনীতিবিদকে এভাবে আমন্ত্রণ জানানো ঠিক কি-না? অন্য দল বা ব্যক্তি অতীতে একাজটি করে থাকলেও কি ঠিক হয়েছে কি-না?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার অংশীদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং এ জাতি গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এর সবকিছুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই ক্লাবে জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিচরণ সবসময়ই ছিলো। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এসে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আরো অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ। ক্লাবের কোড অব কন্ডাক্টে কোথাও বলা নেই যে কে কে আসতে পারবেন আর কে কে পারবেন না। আবার একথাও বলা নেই যে, দিনের বেলায় আসবেন নাকি রাতে আসবেন? এমন কিছুই উল্লেখ নেই। এই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতঅবধি আড্ডা চলে। আড্ডার ভিতরে লেখাপড়া, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি মেধাবিকাশে রাজনৈতিক আড্ডা কোনোটাই বাকি থাকে না। বর্তমান প্রশাসনের লোকজন এই ক্লাবে রাত ১টা-২টা পর্যন্ত আড্ডা মারেন, খেলাধুলা করেন, তখন শিক্ষক ছাড়াও কারা কারা ক্লাবে আসেন এ ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন করেন না। কিন্তু আমি কাকে নিয়ে আড্ডা মারলাম, সেটা নিয়ে তাদের খুব মাথাব্যথা। আমার দাওয়াতে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন সস্ত্রীক এসেছিলেন। রাতের খাবার খেয়েছেন। এটা নিয়ে প্রশ্ন করার মতো কিছুই থাকতে পারে না বলে আমি মনে করি। কারণ স্ত্রীসহ বেড়াতে গিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করে এমন কথা কখনো শুনিনি।

দেশ: একজন শিক্ষক হিসেবে ঢাকাসহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে কি করণীয় বলে আপনার মতামত।

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:ঢাকাসহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে ১ম কাজ হবে বর্তমান সরকারের সোনার ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা। তারা লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সোনার ছেলেরা সব অপকর্মের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিপক্ষ বা ভিন্নমতের শিক্ষার্থীদের প্রতি তারা চরম অসহিষ্ণু আচরণ করছে। ২য় কাজ হবে দলীয় কর্মীদের শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া। দলবাজির রাজনীতি থেকে শিক্ষকদের দূরে রাখতে পারলে শিক্ষার পরিবেশ অনেক উন্নত হবে। একজন শিক্ষক এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত নিজের যোগ্যতায় ভালো ফলাফল করে। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবার আগে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় কে কত বেশি দলীয়ভাবে অনুগত। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবার পর বেশি বেশি দলীয়ভাবে অনুগত হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে বলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পায়। ফলে তারা অন্যায়কে অন্যায় বলতে ভুলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নগ্ন দলীয়করণ ও লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। গবেষণার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। 

দেশ:এ সরকারেরের আমলে কি ভালো কিছু হয়নি? 

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:সেতু ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেই তাকে উন্নয়ন বলে না। ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করলে শুধু সরকারের লোকদের নিজেদের পেটের উন্নয়ন হয়, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করা যায়। কিন্তু কি পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে সেদিকে নজর থাকে না।সরকারের বক্তব্য হচ্ছে আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। কিন্তু গণতন্ত্রকে তারা ভয় পায় কেন? নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে? 

দেশ: বিএনপি এতো ভালো কিছু করে থাকলে তাদের কর্মসূচিতে জনগণ তো ঝাঁপিয়ে পড়তো, সরকারকে হটিয়ে দিতো। তা কি হচ্ছে?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম:আমি আগেই বলেছিলাম যে, রাজনীতির শিষ্টাচার মেনে রাজনীতি করতে হবে। আগে সরকারবিরোধী মিছিল-মিটিং করলে, আন্দোলন করলে আন্দোলন দমানোর জন্য টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট, জলকামান ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন সরাসরি গুলি করা হয়, হত্যা করা হয়, গুম করা হয় যার লাশটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। খুন, গুম আর সন্ত্রাসের রাজনীতির সংস্কৃতি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করলে দেখা যেতো বিএনপির কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণ কীভাবে সম্পৃক্ত হয়। 

দেশ: তাহলে কি বিএনপি পুলিশের ভয়ে ঘরোয়া রাজনীতি করে সরকার হটানোর হাঁকডাক মারছে? স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কি এমন দেখেছেন? আসলে বিএনপির ওপর জনগণ এখনো ভরসা রাখতে পারছে না। তাই মাঠে নামছে না বা আপনাদের পাশে নেই। আপনার বক্তব্য কি?

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম: না ঠিক না। বিএনপি সবসময় জনগণের দাবি নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছে। এতো হামলা মামলার পরও জনগণ বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে জনতা। বিএনপি দেশপ্রেমিক, উদার রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক দল। জনসম্পৃক্ত বিষয়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি সবসময় সোচ্চার। দু’মাস ধরে বিএনপি বন্যাকবলিত জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে,সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এতেও সরকার ভয় পেয়ে গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের দ্বারা ত্রাণকাজেও সরকার বাধা দিয়েছে। তবে নির্বাচন যেহেতু কাছাকাছি, তাই বিএনপির আন্দোলনের তীব্রতাও নিশ্চয়ই বেড়ে যাবে। কোনো কিছুই বিএনপির আন্দোলনকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। সরকার পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জনগণ বিএনপির আন্দোলনে অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)