প্রবাসীদের পক্ষেই সম্ভব এ চ্যালেঞ্জ নেয়া


ইশতিয়াক রূপু , আপডেট করা হয়েছে : 15-07-2022

প্রবাসীদের পক্ষেই সম্ভব এ চ্যালেঞ্জ নেয়া

চলতি বৎসরের মহাপ্রলয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাস্তা ঘাটসহ অধিকাংশ সেতু-সাঁকো ভেসে গেছে, নয়তো ধংসপ্রায়। সরকারি পরিসংখ্যানে জানা যায়, এবারের বন্যায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ লক্ষ মানুষ সুনামগঞ্জ সিলেটের নি¤œাঞ্চলে বসবাসকারি স্বল্পআয়ের মানুষ। বন্যা পরবর্তী সময়ে এখনো বিশাল জনগোষ্ঠি বাস করছে সড়ক- মহাসড়কের মত উঁচু জায়গায়। বন্যার্তদের পাশে এখনো শত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবকদের ছোট বড় দল মানবিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন। পাশাপাশি সরকারের নানা বিভাগ রেডক্রসের বিভিন্ন ইউনিট সব বয়সী বানভাসীদের দিয়ে চলছেন চিকিৎসা সেবা। থেমে নেই প্রবাস থেকে আসা ডলার পাউন্ড। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য থেকে  হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীসহ পুরো দুনিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসী অকাতরে বাড়িয়েছেল সাহায্যর হাত। বিশেষ এই সহায়তায় সম্ভবত এগিয়ে আছেন বৃহত্তর সিলেটের সর্বস্তরের প্রবাসীরা। বন্যা শুরুর প্রথম থেকে প্রবাসীদের উৎকন্ঠা উদ্বেগ ছিলো কল্পনাতীত। দেশের লাখ লাখ স্বজন ভালবাসার নিকটজনের জন্য সকল প্রবাসী ছিলেন নিদ্রাহীন। কাল বিলম্ব না করে জাতি- ধর্ম নির্বিশেষে সকলে বানভাসীদের সহায়তায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা নানা স্থানে নেমে যান খাদ্য সহায়তার আয়োজনে। যা আজ বন্যার পানি নেমে যাবার পরও থেমে নেই। বন্যা পরবর্তী সময়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের। যা দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়। এই সময়ে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি বেশি প্রয়োজন চিকিৎসা সেবা। কথাটি মাথায় রাখা জরুরি বলে বানভাসীদের পাশে যারা আছেন তাদের অভিমত। চলতি বন্যায় উজানের নেমে আসা ঢলের পানি আটকে ছিলো স্বাভাবিক সময়েরও বেশি। আটকে থাকা পানিতে বাধ্য হয়ে হাঁটা চলা করতে হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের বেশি। ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ বিশেষ করে হাত- পা পায়ে ক্ষতিকর চর্মরোগের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। ছাড়া অনিয়মিত খাওয়া- দাওয়াসহ নিরাপদ পানীয় জলের অভাবে দেখা দিচ্ছে পেটের পীড়া। সাথে রয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। যদিও সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী সর্ব্বোচ চেষ্টা চালাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত অসুখ- বিসুখে জর্জরিত বানভাসীদের পাশে দাঁড়াতে। এমন এক মহাদুর্যোগকালে এলো ঈদুল আজহা। এবারের বন্যায় প্রথমে বসতবাড়ি এবং সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র বানের জলে ভেসে গেলো, কারোর পুরো সংসার গেলো ডুবে। কান্নায় ভারি হলো আকাশ- বাতাস। জনদরদী মানুষ নামের কতিপয় ফেরেশতা নামলো বানের জলে। কেউবা কোমর পানি কেউবা হাঁটু পানি ভেঙ্গে বানভাসীর পাশে দাঁড়িয়ে আহার দিলো। ভাসমান জলের পাশ থেকে শুকনো স্থানে নিয়ে এসে প্রাণ বাঁচালো। প্রবাসসহ সারা দেশের মানুষের প্রাণ কেঁদে উঠলো। ব্যাক্তি সংস্থাসমূহ জীবনবাজি রেখে ছুটে এলো বানভাসীর পাশে। সরকারের শীর্ষ মহল উদ্বিগ্ন হলেন। ছুটে এলেন বানভাসীদের দেখতে। দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা দিলেন যে কোন মূল্যে বানভাসী অসহায় জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য অন্যান্য ব্যবস্থা হবে। সরকারের সকল সেবামূলক সংস্থা নির্দেশ দিলেন সময় ব্যয় না করে জরুরি ব্যবস্থা নিতে, সবাইকে ছুটে আসতে বন্যার্তদের পাশে। সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনী আর সংস্থা ছুটে এলেন জীবনবাজি রেখে। সময়মত এসব মানবিক পদক্ষেপ নেয়াতে সর্বস্ব হারানো বন্যার্তরা পেয়েছে প্রয়োজনীয় সহায়তাসহ স্বাস্থ্য সেবা। যা আজো চলছে বিরামহীন। এখন সময় এসেছে মাত্র দুসপ্তাহ পূর্বে ঘটে যাওয়া মহাপ্রলয়ের শিকার লক্ষ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আরো নিবিড় করে দাঁড়ানোর, তাগিদ সৃষ্টি করতে হবে নিজেদের মধ্যে। তেমনি মুহূর্তে বানভাসী মানুষের যা বেশি প্রয়োজন তা হলো মাথা গুজার ঠাঁই। সরকারি পরিসংখানে জানা যায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকায় নিজস্ব বাড়ি ঘর হারানোর সম্ভাব্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫ হাজার।

ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা ক্রমে বেড়ে চলছে শংকাজনক হারে। এমতাবস্থায় দেশে দেশে চলছে কৃচ্ছতা সাধন। সরকার অবশ্যই যে কোন মূল্যে বাড়ি ঘর হারা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে। অসহায় বানভাসী মানুষকে এমন সংকটে রেখে সরকার মুখ ফিরিয়ে নিবে না তা যেমন সত্যি। তেমনি দেশের এমন সংকটকালে প্রবাসীদের উচিত দ্রæ এগিয়ে আসা। আমরা বিশ্বাস করতে চাই- দেশ বিদেশের স্বচ্ছল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান চাইলে সরকারের দেওয়া হিসাবে মাত্র ৮৫ হাজার ভিটে মাটি হারা বন্যার্তের জন্য মাথা গুজার ঠাঁই করে দেয়া অসম্ভব কিছু নয়। সব হারানো সহায় সম্বলহীন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর পাশে প্রতিবারের ন্যায় আবার দাঁড়িয়ে প্রমাণ করি- মানব ধর্ম বড় ধর্ম। দেশমাতৃকার এমন সংকটকালে প্রবাসীদের পাশাপাশি দাঁড়াবেন দেশের স্বচ্ছল সামর্থবান পরিবার এবং ধনবান শিল্পের মালিকগণ। শুধু একটিবার ভাবুন আপনি অট্টালিকা বা দালান কোঠা কিম্বা সুসজ্জিত ফ্লাটে সুখে ঘুমিয়ে আছেন। অথচ আপনার দেশের অসহায় জনগণ সড়ক নয়তো মহাসড়কের পাশে নড়বড়ে খুপড়ি ঘরে দিন রাত কাটাচ্ছে অবর্ননীয় কষ্ট আর অনিশ্চয়তার মধ্যে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)