যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় অনিশ্চিত ২০২৬ বিশ্বকাপের লাখো সমর্থক


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 10-12-2025

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় অনিশ্চিত ২০২৬ বিশ্বকাপের লাখো সমর্থক

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী যখন ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের অপেক্ষায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন এক বিশাল বিতর্কের জন্ম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনে হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ, কিন্তু আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহু দেশের সমর্থকদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বকাপ সাধারণত আয়োজক দেশের সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব প্রদর্শনের সুযোগ। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ১৯টি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অভিবাসন তৎপরতা জোরদারের কারণে সেই বার্তা উল্টো হচ্ছে অর্থাৎ বিশ্ব যখন টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে থাকবে, যুক্তরাষ্ট্র তখন নিজেকে বিশ্বের থেকে আরো আলাদা করে তুলছে। ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিটের দাম রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছায় অনেক সমর্থক আগেই নিরুৎসাহিত হয়েছেন। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা সীমাবদ্ধতা ফুটবলপ্রেমীদের সামনে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যে তারা কি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নিজেদের দলকে সমর্থন করতে পারবেন, নাকি নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতির কারণে ঝুঁকিতে পড়বেন?

২০২৫ সালের ৪ জুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন, যাতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বেশিরভাগসহ ১৯ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ বা সীমিত করা হয়। এসব দেশের সমর্থকেরা ২০২৬ বিশ্বকাপের যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ম্যাচেই উপস্থিত থাকতে পারবেন না,যদি না তারা ৯ জুনের আগে ইস্যুকৃত বৈধ ভিসা নিয়ে থাকেন।

সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ১২ দেশ-আফগানিস্তান, চাদ, কঙ্গো রিপাবলিক, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। আংশিক নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ৭ দেশ : বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা। একই সঙ্গে আরো ৩৬টি দেশকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার বিষয়টিও প্রশাসন বিবেচনা করছে। এর সিদ্ধান্ত হবে ৬০ দিনের পর্যালোচনা শেষে। এই তালিকার মধ্যে রয়েছে ঘানা, সেনেগাল, আইভরি কোস্ট, কেপ ভার্দে ও মিশরের মতো বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা আফ্রিকার পাঁচ দেশ। এমন পরিস্থিতি বিশ্বকাপকে ঘিরে আফ্রিকান ফুটবল কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।

২০২৬ বিশ্বকাপের ১০৪টি ম্যাচের মধ্যে ৭৮টিই যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচগুলোর স্থানও যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলো। ফলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যত পুরো ফুটবল উৎসব থেকে বহু দেশের সমর্থকদের বাদ দিয়ে দিচ্ছে। হাইতি ও ইরান এই দুটি দেশই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় এবং পাশাপাশি ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। হাইতি ৫০ বছরের বেশি সময় পর বিশ্বকাপে জায়গা পেলেও তাদের বেশিরভাগ সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এর ওপর ট্রাম্প প্রশাসন হাইতিয়ানদের জন্য দেওয়া টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস বাতিল করেছে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ৩ লাখ ৪০ হাজার হাইতির নাগরিক ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বৈধ মর্যাদা হারাবেন। ফলে অনেকের জন্য স্টেডিয়ামে গিয়ে ম্যাচ দেখা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। ইরান : যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ভিসা প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ তুলে ইরান বিশ্বকাপ ড্র-এ অংশগ্রহণই করেনি। এছাড়া সিয়েরা লিওন, কঙ্গো ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, ক্যামেরুনসহ বহু ফুটবলপ্রেমী দেশ থেকেও সমর্থকরা ম্যাচ দেখার সুযোগ হারাতে পারেন।

এর পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ অভিবাসন অভিযানও প্রতিনিয়ত আতঙ্ক তৈরি করছে। এ বছর শুধু লস অ্যাঞ্জেলেস হলো একটি বিশ্বকাপ আয়োজক শহর, সেখানে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়েছে। শিকাগো, নিউ অরলিন্স, শার্লট ও টুইন সিটিতেও অভিযান হয়েছে, যেখানে অনেক ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকরাও ভুলবশত গ্রেফতার হয়েছেন। গত গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপেও বর্ডার প্রটেকশন সংস্থার নজরদারি সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)