সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইস্যুতে সক্রিয় আওয়ামী লীগ


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 03-08-2022

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইস্যুতে সক্রিয় আওয়ামী লীগ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইস্যুতে সরকারের ইমেজ রক্ষায় সক্রিয় হয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশের ভিতরে ও বাইরে চাপের মুখে পড়ে দলটি এখন এই ইস্যুতে শক্তভাবে মাঠে নেমেছে। এক একের পর এক সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় সরকার দেশের ভেতরের পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বেশ চাপের মুখে পড়ে। সংখ্যালঘুদের ওপর এধরনের হামলার দায় সরকারকেই নিতে বলেছেন রাজনৈতিক সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে অভিযোগ করে বলেছেন,সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাঁদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অভিযোগ করা হয় যে,দেশে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে, তা পূর্বপরিকল্পিত। 

সরকার বা রাষ্ট্র কোনোভাবেই এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িক হামলাকে যত দিন পর্যন্ত রাষ্ট্র ও প্রশাসন স্বীকার না করবে, তত দিন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না। অন্যদিকে নড়াইলের দিঘলীয়ার সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গ্রুপিংকেই দায়ী করছে বিএনপি। নড়াইলের ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করে আসা দলীয় তদন্ত টিমের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী এই অভিযোগ করেন।গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় দীঘলিয়ার সাহাপাড়ারয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে, দোকান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে এর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই নড়াইলে ফেসবুকে এক কলেজ ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে একজন কলেজ অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনা ঘটে। আর এধরনের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় হয়ে যায়। 

নড়ে চড়ে বসেছে সরকার

জানা গেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের সব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের বার্তা দিতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে। সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের সব অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থানের বার্তা দিতে নড়াইল যায় দলটির একটি প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা মোকাবিলায় সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ। সম্প্রতি সংগঠনের এক আলোচনা সভায় এই সাতটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের কাছে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তবারের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলার মামলাগুলো  ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২’ এর মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনে ট্রাইব্যুনালে মামলা পাঠানোর সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। তাই সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে এই আইনে যুক্ত করতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নবী বা রাসুলদের (স:) নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে তাকেও এই আইনের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। যে অঞ্চলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় আছে সে এলাকাগুলোতে সম্প্রীতি কমিটি গঠন করতে হবে। 

এই কমিটি ধর্ম গুরু ও তাদের উপাসনালয় কমিটির সভাপতি (উদাহরণস্বরূপ ইমাম ও মসজিদ কমিটির সভাপতি), পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এই কমিটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারকে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। প্রস্তাবে রয়েছে সকল ধর্মীয় উপাসনালয় সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে।এক্ষেত্রে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনই যথেষ্ট। কারণ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অর্থের অভাব হওয়ার কথা নয়। প্রস্তাবে এর পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আরও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। ইমামদের মসজিদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে মসজিদে মাসে একদিন হলেও বয়ান করতে হবে। প্রস্তাবে বলা হয় বাঙালি সংস্কৃতি শক্তিশালী করতে হবে।

টেলিভিশন, বেতার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর শিক্ষণীয় কর্মসূচিও নাটিকা প্রচার করতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়ের ওপর ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ নির্মাণ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ৩ শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায়। প্রাচীন কাঠামোভিত্তিক দরসে নিজামি, পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত পাঠক্রমভিত্তিক দরসে নিজামি ও আলিয়া নেসাব। এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা বোর্ডকে শক্তিশালী করতে হবে। যেকোনো নতুন মাদ্রাসা খুলতে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। যে শ্রেণির হোক না কেন সকল মাদ্রাসাই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হতে হবে। 

শেষ কথা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইস্যুতে সরকারি দল ভোটের মাঠে বেশ নাজুক অবস্থায় পড়েছে। তাছাড়া রাষ্ট্রের সুশাসন প্রশ্নেদল ও সরকার বেশ কোনঢাসা হয়ে পড়ে একের পর পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায়।  চারিদিক থেকে আওয়াজ উঠে হিন্দুদের ভোট পেতে এবার কষ্ট হবে। এমনি সময়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির দাবি করেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি সিদ্ধান্ত নেয় ভোট দেবে না, তাহলে জাতীয় সংসদের নির্দিষ্ট ৬২টি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারবে না। ফলে এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নড়ে চড়ে বসে,নিয়েছে নানান পদক্ষেপ। 



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)