সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রধান বাধা


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 15-09-2022

সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রধান বাধা

দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫১ বছর পর অনেক পাল্টে গেছে। সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটির বেশি। খোদ ঢাকায় বাস করে আড়াই কোটির বেশি মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করেও জাতি হিসাবে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নানা কারণে বিশেষভাবে পরিচিত। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর জাতির পিতার ১০০তম জন্মদিন বিপুল সাড়ম্বরে পালন করেছে। অনেক অর্জন নিয়েই বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। অন্তত দেশে খাদ্য সংকট নেই, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। পরিশ্রমী শ্রমিক সমাজ হার ভাঙা পরিশ্রম করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে রফতানি খাত থেকে। সমস্যা সুশাসনের, সীমাহীন লুটপাট আর দুর্নীতির। 

১৯৭৫-১৯৯০ স্বৈরশাসন ১৯৭২-৭৫ অর্জনগুলোকে ভূলুণ্ঠিত করে বেপথু না করলে জাতি হয়তো এই মুহূর্তে আরো আগুয়ান থাকতো। ১৯৯০ -২০২২ বলবো না গণতন্ত্র গতি পেয়েছে। চ্যালেঞ্জ আর সংকট আছে বিস্তর। তবে আমলাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, মেধাহীন ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৌতিক দুর্বৃত্তায়ন আর সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিপুল সম্ভাবনার দেশে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি।

এক সময়ের তিলোত্তমা ঢাকা এখন বসবাসের জন্য অন্যতম নিকৃষ্ট রাজধানী, যানজট, দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানিতে জলজট, শব্দদূষণ আর বায়ুদূষণের শীর্ষস্থানীয় নগরী। সীমিত এলাকায় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সমান জনসংখ্যা নিয়ে সবকিছু সামাল দেয়ার চ্যালেঞ্জগুলো অনুমেয়। জানি ঢাকার গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ অবকাঠামো সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জগুলো। জানি এই শহরের কেন্দ্রস্থলে সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, পিলখানা বিজেবি হেডকোয়ার্টার, পুরোনো বিমান বন্দর, ঢাকা সেনানিবাস বিকল্প স্থানে স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জ। সীমিত স্থানের শহরে ফ্লাই ওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, মেট্রো সমস্যার সমাধান কতটুকু দিবে তর্কসাপেক্ষ। 

উদ্যমী কৃষক সমাজের উদ্ভাবনী ভূমিকার কারণে জাতি আজ খাদ্যপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্তত মাছে-ভাতে তুষ্ট বাংলাদেশিদের খাদ্য সংকট নেই। দুর্নীতি আর সুশাসনের অভাবে অত্যাধিক খরচ হলেও গোটা দেশ এখন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায়। তবে সমন্বয়ের অভাবে জ্বালানি সংকট থেকে সৃষ্ট বিদ্যুৎ সংকট অর্জনকে মøান করেছে। বিপুল পরিমাণ জ্বালানিসম্পদ মাটির নিচে রেখে কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীকে অবধারিত সুযোগ দেয়ার জন্য আমদানির দিকে হাত বাড়ানোই এখন জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটের মূল কারণ। পেট্রোবাংলা এখন আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে ঃযঁঁফড় লড়মড়হহধঃয. না পারছে উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা মাফিক জ্বালানির জোগান দিতে, না পারছে জ্বালানি আমদানি অবকাঠামো গড়ে তুলতে। জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার অতলান্তে ধাবমান হচ্ছে।

অথচ এখনো সুযোগ আছে সর্বস্তরে আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে সঠিক পেশাদারদের নিয়োগ করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। জলে স্থলে থাকা বিপুল পরিমাণ প্রাথমিক জ্বালানি সম্পদ আরোহন করে কাজে লাগালে ১০ বছরে দেশকে জ্বালানি সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায়। সেটিই হবে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।  

আর একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ নিয়ন্ত্রণহীন, সীমাহীন দুর্নীতি। এখানেও আমলা নিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি দমন সংস্থা পুরোপুরি ব্যর্থ। দুর্নীতির রাঘব-বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী দেশের বাইরে পাকেটস্থ করে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া করেছে। অনেকের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করছে না। চট্টগ্রামের একজন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকার বিপুল দুর্নীতির বিষয়গুলো উদঘাটন করলেও উল্টো তাকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে আমলাদের রক্ষার জন্য।

সমস্যাগুলোর রাতারাতি সমাধান নেই। তা হলেও বর্তমান সরকারের উপর্যুপরি তিন টার্মে বড় বড় দুর্নীতির ঘটনাগুলো ধরি মাছ না ছুঁই পানি ভূমিকার কারণে বিপুল সম্ভাবনা নিয়েও দেশের অর্থনীতিতে এখন অস্থিরতা। অনেকে বলেন, ২২ ধনী পরিবারের সোহোসনের প্রতিবাদ থেকেই বাংলাদেশ সৃষ্টি। এখন ২ লাখ পরিবারের দুর্নীতির কারণে দেশ হয়তো দেউলিয়া হয়ে যেতেও পারে। সরকার প্রধানের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল এখন প্রশ্নবিদ্ধ। 

যাই হোক, আশা করি সরকার প্রধান বিভিন্ন সূত্রে সংকটের মূল কারণসমূহ বুঝতে পেরেছেন। অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বৈষয়িক রাজনৈতিক পরিম-লে বিরাজিত পরিস্থিতির কারণে বৈদেশিক নীতিতে ভারসাম্য রেখে বর্তমান সরকার এবং পরবর্তী সরকার উন্নয়ন ধারা বজায় রাখবেন। মেধা বিবেচনায় সঠিক পেশাদারদের সঠিক অবস্থানে পদায়ন করে, সৃজনশীল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন। তাহলেই বিপুল সম্ভাবনার দেশ নবীন প্রজন্মের অবদানে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)