খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলন


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 06-10-2022

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলন

আবারো সংলাপে নেমেছে বিএনপি। আন্দোলনে সহযোগী দলসমূহের সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করেছিল দলটি। এবার দ্বিতীয় দফায় সংলাপের উদ্দেশ্য ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে একটা যুগপৎ বা কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য। ইতিমধ্যে এ নিয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর সাথে সংলাপ সেরে ফেলেছে। তবে বিএনপি এ সংলাপে একটা নতুন বিষয় সংযোজন করেছে। সেটা হলো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলন হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া তো গৃহবন্দি। তাহলে কে? এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে হবে এবারের আন্দোলন। তবে তিনি অন্তরীণ থাকায় তার স্থানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃত্ব দেবেন দলের।  





রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের কারণ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রথম দফা সংলাপে আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছিলাম যে, একটা যুগপৎ আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবো। দ্বিতীয় দফা সংলাপে আমরা কোন কোন দাবিতে বা কোন কোন ইস্যুতে আন্দোলনটা করবো সেই বিষয়ে আলোচনা করে ঐকমত্যে এসেছি। দ্বিতীয় দফার এ সংলাপে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করার তার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন। সেখানে জাতীয় পার্টি (জাপা) বা জামায়াত ইসলামী থাকবে কি-না এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। 

বিএনপির প্রথম দফায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে। সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেই প্রস্তাবগুলোসহ দলের কর্মপরিকল্পনা যুক্ত করে একটা খসড়া তৈরি করে ফেলেছে দলটি। আগামী দিনের আন্দোলন ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে করণীয় রয়েছে এ খসড়ায়।  তবে বিএনপির তরফ থেকে বারবার যে বিষয়টা নিশ্চিত করা হচ্ছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে যেসব দল যুক্ত হবেন, তাদের সবাইকে নিয়েই একটা সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে। 





এদিকে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফা সংলাপে রাজনৈতিক দলের কাছে এ খসড়া তুলে দেয়া হবে। এরপর তাদের নতুন কোনো প্রস্তাব থাকলে তা যুক্ত করা হতে পারে। সংলাপ শেষে সবার মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হবে চূড়ান্ত রূপরেখা, যা জাতির সামনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।  

দ্বিতীয় দফার ওই সংলাপের প্রথম বৈঠকটি গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। এতে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। অন্য সদস্যরা হলেন- দলটির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুন, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল কবির পিন্টু, আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব, রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্যা, মাহবুবুর রহমান শামীম, জামাল হোসেন, আবু হানিফ, আবু ইউসুফ। বিএনপি পক্ষে মহাসচিবের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। 




সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, বেশ কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্যের মধ্যে রয়েছে, আমরা এই সরকারের পদত্যাগ চাই। বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। 

একইসঙ্গে আমরা গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া যাকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে, তিনিসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি এবং যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে সেই মামলা প্রত্যাহারের বিষয়েও একমত হয়েছি।




জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) 

সংলাপের দ্বিতীয় দিনে (গত সোমবার) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সঙ্গে সংলাপ হয় বিএনপির। সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার হটানোর ‘যুগপৎ আন্দোলন’ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই হবে।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলন চলা অবস্থাতেই সকলের নেতৃত্বে সকলে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগে হয়েছে। আমাদের নেতৃত্বে বা নেতা আগেই ঘোষণা করেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেত্রী। তার অবর্তমানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নেতা। মির্জা ফখরুল ঘোষণা দেন, সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষ করে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবে। সংলাপে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) দলটির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস, মাওলানা রুহুল আমীন, সেলিম মাস্টার, কেন্দ্রীয় নেতা হান্নান আহমেদ খান, এএসএম শামীম, কাজী মো. নজরুল ও গোলাম মোস্তফা। অপরপ্রান্তে বিএনপির পক্ষে ছিলেন যথারীতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলম খান।

সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দ্বিতীয় গণআন্দোলনের দফা নির্ধারণ করার বিষয় নিয়ে আজকে জাতীয় পার্টি মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে তার দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমাদের দাবিনামার মধ্যে যেটা কমন সেটা হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ, পদত্যাগ করে সংসদ বাতিল করতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে তাদেরকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তার অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি। তিনি আরো বলেন, আমরা একমত হয়েছি যে, এই দাবিগুলোতে আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবো। সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেই এটা আমরা শুরু করবো। 

এ সময় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) শীর্ষনেতা মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এ-টু-জেড সকল ইউনিফাইড করা, একত্রিত করা। আল্লাহ রহমতে আমরা সেই পথে অনেকখানি অগ্রসর হয়েছি। আমরা আওয়ামী লীগবিরোধী সকল রাজনৈতিক সাথে আলোচনায় সফলকাম হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ এই সংগ্রাম জয়যুক্ত হবেই। 






এলডিপির সঙ্গে সংলাপ 

গত সোমবার তৃতীয় দল হিসেবে সংলাপ করে বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সাথে। এতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের লক্ষ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিএনপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। সোমবার রাতে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের বাসায় সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, স্বৈরাচারী কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা জাতীয় ঐক্য গড়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি তারই অংশ হিসেবে কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি যে, আমরা সবাই মনে করি সরকার যেহেতু পুরোপুরিভাবে অনির্বাচিত এবং কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। সে কারণে সরকারের পতন অত্যন্ত প্রয়োজন সেজন্য আমরা প্রথমে দাবি করেছি এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকার অথবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। 

ফখরুল বলেন, একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে যারা বন্দি রয়েছেন তাদের মুক্তি এবং একই কারণে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা রয়েছে সেগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। 

এ সময় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, এখন একটাই দাবি- এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। জাতির এই সন্ধিক্ষণে মুক্তির জন্য আমরা একতাবদ্ধ হয়েছি। বহুদিন ধরে বিএনপি এককভাবে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এখন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেতে চাই।

সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের বীর বিক্রম, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক সাংসদ নুরুল আলম, ড. নেয়ামুল বসির, ড. আওরঙ্গ জেব বেলাল ও মাহবুব মোর্শেদ।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)