কথার কথকতা


মাইন উদ্দিন আহমেদ , আপডেট করা হয়েছে : 13-10-2022

কথার কথকতা

নির্ধারিত কলামের এ সপ্তাহের লেখাটা পাঠানো হয়নি এখনো। পত্রিকাটি ছাপা হয় বুধবারে, রোববারের মধ্যে পাঠালে মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হয় না। পাঠাবো কি, ওটাতো এখনো লেখাই হয়নি। প্রকাশক সাহেবের একটা ফোনও পেয়েছিলাম। এ বিষয়ে ওনাকে আশ্বস্ত করে আরো দুয়েকটা বিষয়ে কথা হয়েছে। লেখার বিষয়বস্তু আমি ভেবেও রেখেছিলাম, কিন্তু আমি এতোই ‘বিজি ফর নাথিং’ অবস্থায় থাকি, যার জন্য লেখা হয়ে ওঠেনি। আপনারা জানেন যে, এই জাতীয় ব্যস্ত লোকদের ব্যস্ততা একটু বেশি বেশিই হয়। কারণ ‘বিজি ফর নাথিং’ওয়ালারা আসলে থাকেন ‘বিজি ফর মেনি থিংস্’! তো চলে আসি আসল কথায়। আমার কিন্তু মনে আছে যে, পাঠকের মন খারাপ হয় এমন লেখা লিখবার চেষ্টা না করার জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। আজকের লেখার সাবজেক্টটা অবশ্য নেহায়েতই স্বাভাবিক নয়, জটিল আছে, কিন্তু পাঠকের মন তাতে খারাপ হবে না। তাহলে শুরু করা যাক লেখার আসল অংশটি।

নিউইয়র্ক ইদানীং কিছু রহস্যজনক ঘটনা অবলোকন করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়! তবে ভালো কথা হলো, পুলিশের ডিউটি বর্ধিতহারে এবং সংখ্যায় দৃশ্যমান হচ্ছে। তাতে আশা করা যায়, শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে। গ্র্যান্ট অ্যাভিনিউ সাবওয়েতে ঢুকবার সময়ও দেখি ডিউটিরত পুলিশের অবস্থান ভালো, আবার জ্যাকসন হাইটে গিয়ে যখন পাতালপুরী থেকে ওপরে উঠি তখনও দেখি আইনের লোকজনের অবস্থান সচেতন ও সুন্দর। তবে আমি ইদানীং যে নতুন নতুন বিষয়গুলোর মুখোমুখি হচ্ছি তাতে মনে হয় মতলববাজ চক্র আমাকে টার্গেট করেছে অথবা কোনো মহল বা কোনো সংস্থা আমাকে বাজিয়ে দেখছে। আমি কয়েকটি ঘটনার কথা আপনাদেরকে জানালেই আপনারা বুঝতে পারবেন। শুনলে মনে হবে এগুলো স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু আমি অনুরোধ করবো এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে না নেয়ার জন্য। কারণ খেয়াল রাখতে হবে যে এগুলো ঘটছে কিন্তু আমার সাথে!

একদিন ট্রেনে জ্যাকসন হাইট গিয়ে ডাইভারসিটি প্লাজায় উঠতেই এক ভদ্রলোক একটা সেলফোনের প্যাকেট আমাকে দেখিয়ে ওটা আমার কাছে বিক্রি করতে চাইলেন। শুনে আপনারাই বুঝতে পারছেন, নিউইয়র্কে এটা স্বাভাবিক কিছু নয়। না, না, ডাইভারসিটি প্লাজায় সিনিয়র সিটিজেনদেরকে যে সংস্থাগুলো ফ্রি ট্যাব দেয়, ওরা নয়। এই লোকটি একা এবং সাবওয়ে থেকে ওঠার মুখেই আমাকে আহ্বান করে। আমি জানি না আমাকে কি দেখতে খুবই নির্বোধ মনে হয় কিনা! তবে এটা নিশ্চিত যে, আমি খুব চালাক মানুষও নই। তবে জীবনে এতো বেশি বার প্রতারিত হয়েছি যে, ওই অভিজ্ঞতার আলোকে এখন অনেক কিছু বুঝতে পারি। লোকটাকে বললাম, আই ডু নট নিড ইট। ভাগ্য ভালো, লোকটা বলে বসেনি, ওই বেটা নিবি না কেন? নিতেই হবে! গুলিস্তান হলে হয়তো বলতো। যাক, ওই কথা বলেই আমি দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করলাম।

আরেক দিন, সাবওয়ে থেকে উঠে নবান্ন রেস্টুরেন্ট এরিয়ার দিকে যাচ্ছি, বার্চউড হাইজিংয়ের পাশে আসতেই আমার ফোনে আওয়াজ হলো, দেখলাম বেশ কয়েকটা মেসেজ আছে। একপাশে নিরিবিলি স্থান দেখে দাঁড়ালাম আর মেসেজগুলোর জবাব দিতে শুরু করলাম। এরই মধ্যে হঠাৎ কীসের যেন একটা আওয়াজ পেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি পাগলের বেশে এক সুদর্শন যুবক ফ্লোরে বসে পাকার ওপর কাপ থেকে চা ঢালছে। আমি তাকানোর পর সে চমৎকার করে হেসে এক মহিলা দেখিয়ে আমাকে বললো, ‘ওম্যান ওম্যান’। আর মুখ ব্যাদান করে হাসছে! সে কি আমাকে অফার করছিলো! কিন্তু ছেলেটিকে পাগল নয়,  নায়কোচিত যুবক মনে হচ্ছিলো। আমি হেসে একটা নিঃশব্দ তিরস্কারের ভঙ্গি করে খুব দ্রুত সরে গেলাম।

আরেকটি ঘটনা বলি। একদিন আমি এলডার্ট লেন থেকে এসে গ্লেনমোর অ্যাভিনিউতে মোড় নিয়ে গ্র্যান্ট অ্যাভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিলাম, ট্রেন ধরতে সাবওয়েতে ঢুকবো। হঠাৎ একটা হাইরুফ কার গ্লেনমোরে ব্রেক করলো, গাড়িটি চালাচ্ছিলো মধ্যবয়সী এক নারী, পাশে বসা এক মধ্যবয়সী সুঠাম মানুষ, মহিলার স্বামী বা প্রেমিক হবে। মাঝ রাস্তায় ব্রেক করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো, ‘হ্যালো উই নিড হেল্প’। আমি ওয়াকওয়েতেই থামলাম, ভদ্রলোক বললেন, ‘প্লিজ কাম হিয়ার’। আমি থেমে গেলাম এই ভেবে যে, রাস্তার মাঝখানে অবস্থানরত এই লোকটির ডাকে আমার এগোনো উচিত হবে কিনা। এটা ভাবতে ভাবতে আবার লোকটার দিকে তাকালাম, তিনি তখন একটা নেকলেস দু’হাতে মেলে ধরে আমাকে বলছিলেন, ‘গোল্ড গোল্ড!’ আমি নিশ্চিত হলাম, এটি স্বাভাবিক ঘটনা নয়। আই ডু নট নিড  ইট, এই কথাটি বলে অতিদ্রুত সম্পূর্ণ নির্জন ওই স্থানটা ত্যাগ করলাম।

জ্যাকসন হাইট গেলে আমি সাধারণত তিনটা জায়গায় যাই- সাকিল সাহেবের গ্রাফিক্স ওয়ার্ল্ড, দেশ পত্রিকা অফিস অথবা ড্রিম লাইটার অফিস। উল্লিখিত এই তিনের এক জায়গায় ওই ঘটনাগুলোর পর স্বাভাবিক নয়, এরকম কিছু বিষয় পরিলক্ষিত হবার পর আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিরাপত্তার বিষয়টি এবং কোনো কোনো মহলের গোয়েন্দা তৎপরতার দিকটি সম্পর্কে আভাস দিয়ে সজাগ থাকার অনুরোধ জানাই। সত্যি কথা বলতে কি, আমি মানুষটা মোটেই বুদ্ধিমান কেউ নই, কিন্তু চার দশকেরও বেশি সময় মিডিয়ায় কাজ করার পর এবং প্রচুর অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের মানব নামক প্রাণি দেখার পর এখন বুঝতে পারি কোনটা মানুষ আর কোনটা জন্তু। অনেকে বলে, মানুষ চেনা খুবই কঠিন। এটা বলে এই জন্য যে, অমানুষগুলোও দেখতে মানুষের আকৃতি হয়! না, আমি কাউকে গালি বা অভিশাপ দেবো না, বরং সবাইকে অনুরোধ করবো এই দোয়া করতে যে, সব মানুষ যেন সত্যিকার অর্থেই মনুষ্য পদবাচ্য হতে পারে। এক ভদ্রলোকের একটা কবিতা পড়েছিলাম, যার বিষয়বস্তু ছিলো মানুষের প্রতি চতুষ্পদের অভিযোগ। একটা চতুষ্পদ প্রাণি মানুষকে প্রশ্ন করছে, তোমরা কোনো মানুষ খারাপ কিছু করলে তাকে ‘জানোয়ার’ বলো! আমরা কি কোনো প্রাণি খারাপ কিছু করলে তাকে কি ‘মানুষ’ বলে গালি দেই? দারুণ প্রশ্ন। ও হ্যাঁ, রহস্যময় মানুষেরা, আমাকে অনুসরণ করে কোনো লাভ নেই, আমি পুরোটাই স্পষ্ট- ওপিঠ হলে জিরো আর এপিঠ হলে কোলন-ড্যাস। নিজের কাজ করো গিয়ে, মানবসেবায় মনোনিবেশ করো।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)