জনতা এক্সপ্রেসের অর্থ কেলেঙ্কারিতে তাবাস্সুমের দোষ স্বীকার


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 19-10-2022

জনতা এক্সপ্রেসের অর্থ কেলেঙ্কারিতে তাবাস্সুমের দোষ স্বীকার

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক জনতা ব্যাংক লিমিটেড। নিউইয়র্কে এই ব্যাংকের ‘জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানি আইএনসি’ নামে একটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ছিলো। এটি জেইসিআই-ইউএসএ নামে পরিচিত। জনতা এক্সচেঞ্জটি বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে কার্যক্রম পরিচালনা করতো। সেই জনতা এক্সচেঞ্জের কর্মচারী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য, ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এমডি আবু বক্কর সিদ্দিকীর কন্যা জনতা এক্সচেঞ্জের কর্মচারী সুস্মিতা তাবাস্সুমকে প্রায় ৬ লাখ ডলার (বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ৫ কোটির ওপর) জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। সুস্মিতা তাবাস্সুমকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ২০২১ সালের ১৩ মার্চ জেএফকে এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার করে। ১৫ মার্চ তাকে কোর্টে তুললে জামিন দেয় মাননীয় আদালত। বর্তমানে সুস্মিতা তাবাস্সুম জামিনে থাকলেও নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে তার মামলা চলছে। জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আমেরিকান সরকার মামলা দায়ের করে। মামলার ইনডেক্স নম্বর: সিআর-০০১৯৪ (ডিজি) (ভিএমএস)। মামলাটি দায়ের করা হয় ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল। মামলা দায়েরের পর মাননীয় আদালতে শুনানি চলে। গত ১০-৬-২০২২ অক্টোবর সুস্মিতা তাবাস্সুম আদালতে তার দোষ স্বীকার করেছেন। যদিও মামলার প্রথমে সুস্মিতা তাবাস্সুম নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবি করেছিলেন। ৬ অক্টোবর তিনি তার দাবিটি তুলে নেন এবং দোষ স্বীকার করেন। এই সময় রাষ্ট্রপক্ষের ডিফেন্ডার, সুস্মিতা তাবাস্সুমের আইনজীবী এবং ইন্টারপ্রেটার মাধু মিশ্রা উপস্থিত ছিলেন। মামলার নথিতে দেখা যায়, মাননীয় আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি।

আদালতের নথিপত্রে দেখা যায়, সুস্মিতা তাবাস্সুম ২০১৫ সালের জুলাই মাসে জনতা এক্সচেঞ্জে টেলিফোন অপারেটর কাম টেইলার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। জনতা এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই অবসরে যান। তিনি অবসরে গেলে সুস্মিতা তাবাস্সুম জনতা এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিইও ও ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন।

ঘটনা যেভাবে ধরা পড়ে

ঘটনাটি ধরা পড়ে জনতা এক্সচেঞ্জের বর্তমান সিইও মাহবুবুর রহমান যোগ দেয়ার পর। তিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। কাজে যোগ দেয়ার পরদিনই তিনি দেখতে পান যে, জনতা এক্সচেঞ্জের হিসাবে গরমিল এবং প্রতিষ্ঠানটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। মাহবুবুর রহমান গত ১৫ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি দুটো আলাদা ই-মেইলে জনতা ব্যাংককে পুরো ঘটনা জানান। তিনি উল্লেখ করেন জেইসিআইয়ের তহবিল থেকে প্রায় ৬ লাখ ডলার চুরি হয়ে গিয়েছে।

জেইসিআইয়ের ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হচ্ছিল নিউইয়র্কের হাবিব আমেরিকান ব্যাংকের (হাব ব্যাংক) জ্যাকসন হাইটস শাখায়। প্রথমদিনই সিইও মাহবুবুর রহমান বিষয়টি জানতে চান সুস্মিতা তাবাস্সুমের কাছে। সুস্মিতা তাবাস্সুম সদ্য যোগদান করা সিইও মাহবুবুর রহমানকে জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় জেইসিআইয়ের তহবিল হালনাগাদ করতে পারেননি। তাই হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় চান। এরই মধ্যে সুস্মিতা তাবাস্সুম হাবিব ব্যাংকে ৫ লাখ ৯ হাজার ৮২০ ডলার জমা দিয়েছেন বলে তিনি রশিদ জমা দেন মাহবুবুর রহমানের কাছে। রশিদ অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি ১ লাখ ৯৭ হাজার ১০ ডলার, ১৫ জানুয়ারি ১ লাখ ৪৮ হাজার ২০৩ ডলার এবং ২১ জানুয়ারি ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬০৭ ডলার। পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি মাহবুবুর রহমান সুস্মিতা তাবাস্সুমকে নিয়ে হাবিব ব্যাংকে যান। ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই তিনটি রশিদের অর্থ ব্যাংকে জমা হয়নি। এটা মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতা তাবাস্সুম। সেখানেই তিনি স্ট্যান্ডবাজি করেন। জালিয়াতির বিষয়টি ধামাচাপা এবং মাহবুবুর রহমানকে দেখাতেই হাব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন সুস্মিতা তাবাস্সুম। ২১ ফেব্রুয়ারি আবারো হাব ব্যাংকে যান। মাহবুবুর রহমান বিষয়টি ঢাকা জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জানান।

এদিকে হাব ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, যেসব রশিদ দেখানো হয়েছে সেগুলো ছিল দুই নম্বর অর্থাৎ জাল। সুস্মিতা তাবাস্সুম হাব ব্যাংকের সাথে জালিয়াতি করেছে এবং ৬ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। এর সত্যতা পেয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিও। 

ওই সময়ে অবস্থা বেগতিক দেখে সুস্মিতা তাবাস্সুম ২০২০ সালের জুন মাসে জেএফকে এয়ারপোর্ট দিয়ে বিমানযোগে কাতারের দোহারে চলে যান। জানা গেছে, সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশে চলে গিয়েছিলেন। এদিকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সুস্মিতা তাবাস্সুমকে আইডেনটিফাই করার চেষ্টা করে। ফেসবুকের মাধ্যমে তারা উদ্ধার করে সুস্মিতা তাবাসসুমকে। ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা দেখতে পান যে, সুস্মিতা তাবাস্সুমের ফেসবুক আইডি পরিবর্তন করা হয়েছে। সবকিছু পরিবর্তন করে সুস্মিতা তাবাস্সুম আবারো আমেরিকায় আসার দিন ঠিক করে। অন্যদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা সবখানেই তার ইনফরমেশন দিয়ে দেয়। অবশেষে সুস্মিতা তাবাস্সুম গত ১৩ মার্চ জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণ করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৫ মার্চ তাকে মাননীয় আদালত জামিন দিয়েছে। 

উল্লেখ্য, সুস্মিতা তাবাস্সুম জনতা এক্সচেঞ্জের কোনো নিয়মিত বা স্থায়ী কর্মচারী ছিলেন না। জানা গেছে, সুস্মিতা তাবাস্সুমের জন্ম ১৯৮২ সালে। তিনি ঢাকা বারের সদস্য। তার সদস্য নম্বর ১৬ হাজার ৭৭। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া। ঢাকার মোহাম্মদপুরের খিলজি রোডের একটি বাসা তার বর্তমান ঠিকানা। তার বাবা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এমডি আবু বক্কর সিদ্দিকী। এই কেলেঙ্কারির কারণে জনতা এক্সচেঞ্জের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় হাব ব্যাংক। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় জনতা এক্সচেঞ্জ।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)