নদী খননের মাটি সেই নদীতেই


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 09-11-2022

নদী খননের মাটি সেই নদীতেই

নদের কাটা মাটি নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে না। ফেলা হচ্ছে নদী গর্ভেই, যা বর্ষায় নদীকে আবার ভরাট করে ফেলবে। ফলে নদী খালে রূপান্তরিত হচ্ছে। এসব অভিযোগ উঠে আসে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে। গত ৭ নভেম্বর সোমবার সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাসের পক্ষে ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহিম। সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, কেশবপুর উপজেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু বক্কার সিদ্দীকি, বিমল ঘোষ, সুভাস চন্দ্র ভক্ত, জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিম-উর-রহমান, আলাউদ্দিন, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ। 

এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের লাগাতার আন্দোলনের ফলে কপোতাক্ষ নদ সংস্কার কর্মসূচি গৃহীত হয়, বর্তমানে তা চলমান। এখন ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে সাতক্ষীরার পাখিমারা বিলে টিআরএম ও খনন কর্মসূচির কারণে নদের প্রবাহ ও তালার নিম্নাংশের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। নদীতে ট্রলার চলাচল শুরু হয়। যশোর অংশ জলাবদ্ধা মুক্ত হয়। জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। দুঃখজনক হলেও সত্য সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতার কারণে পাখিমারা বিলে টিআরএম প্রকল্প অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে এবং তালা থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী ভরাট হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।

কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন শুরু থেকে দাবি করে আসছে উজানে নদীসংযোগ ও মোহনায় পলিমুক্ত রাখার সাথে নদীর প্রবাহ নির্ভর করে, সে কারণে উজানের নদীসংযোগ দিতে হবে এবং ভাটিতে টিআরএম চালু রেখে নদের নাব্য রক্ষা করতে হবে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ পরিকল্পনায় তালার নিম্নাংশে পর্যায়ক্রমে টিআরএম করার প্রস্তাব করা হলেও দীর্ঘস্থায়ী লুটপাট অব্যাহত রাখতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যোগসাজশে প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এক্ষেত্রে সরকার নীরব। সরকারের সরকারের গৃহীত নীতির বিরুদ্ধেই সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকারের এই দ্বিচারিতায় দুর্ভোগের শিকার আমরা এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট নিশ্চিত করা হচ্ছে। এই দ্বিচারিতার আমরা প্রতিবাদ করে আসলেও সরকার কর্তপাত করছে না। সংকট আরও গভীর হচ্ছে।

তিনি বলেন, চলমান ২য় পর্যায়ে খনন কাজের অনিয়ম অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি নিয়ে আপনাদের বিভিন্ন মিডিয়া সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন আকারে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ে এই কাজের অসঙ্গতি, প্রকল্প সাইন বোর্ড প্রদানে তালবাহানা, খননের পরিমাণ স্থানীয় জনগণকে অবহিত না করা, কাজের তদারকি ও সহযোগিতায় জনগণকে সংশ্লিষ্ট না করা এমনকি স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে উপেক্ষা করা সংক্রান্ত অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তা কর্তপাত করছে না।

লিখিত বক্তব্যে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয় কর্র্ম এলাকায় জনসমক্ষে সাইনবোর্ড প্রদান না করা, চাপাচাপির ফলে কোথাও কোথাও দিলেও তা স্থাপন করা হয়েছে জন চলাচলের আড়াল করে। খননের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপের বিষয় জনগণ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অগোচরে রাখা হচ্ছে। নদের কাটা মাটি নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে না, ফেলা হচ্ছে নদী গর্ভেই। যা বর্ষায় নদীকে আবার ভরাট করে ফেলবে। ফলে নদী খালে রূপান্তরিত হচ্ছে। সরকার গৃহীত নদীতট আইন লঙ্ঘন করে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের বিপরীতে তাদের স্বার্থসংরক্ষণ করা হচ্ছে। খনন মাপ অনুযায়ী হচ্ছে না- তা জনগণ সাদা চোখে অনুভব করতে পারছে। উজানে মাথাভাঙ্গা ভৈরব নদী সংযোগের গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।  উপরোক্ত পরিস্থিতিতে স্পষ্ট যে, নদী খননের নামে বরাদ্দকৃত টাকা দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অপচয় হবে। যদি উজানে নদীসংযোগ দেয়ার কাজটি আগে করা হতো, তাহলে এই অর্থ অপচয় হতো না।

সংবাদ সম্মেলন থেকে  বলা হয় প্রস্তাবিত উজানে নদীসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পাখিমারা বিলে টিআরএম চালু কররেত হবে। নদীতট আইন কার্যকর করে নদীতটের বাইরে খননের মাটি ফেলতে হবে। সে মাটি চাষের জমিতে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। প্রকল্প এলাকায় কাজের তদারকির জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আন্দোলনকারী সংস্থা ও স্থানীয় জনগণকে সংশ্লিষ্ট করে কমিটি করতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা অপচয় লুটপাট শুধু নয়- নদীকে প্রকারান্তরে হত্যা করা হবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)