বঙ্গবন্ধুর খুনি ও স্যাঙ্কশনের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূত


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 18-11-2022

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও স্যাঙ্কশনের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূত

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ ইমরান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়ার ঠিক একদিন আগে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বরে এসেই প্রধানমন্ত্রী থাকায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ব্যস্ততা কমার পর তিনি গত ১২ নভেম্বর নিউইয়র্ক আসেন। নিউইয়র্কে তার কর্মসূচি ছিলো নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত এবং প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিধি, নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স প্রদানকারী প্রধান এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে বিকেলে। প্রথমেই তিনি রেমিট্যান্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে বৈঠক করেন। তাদের অনুরোধ জানান, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য। এবং যারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করেন তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য।

এর পরপরই তিনি সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাফ সাফ বলে দেন যেন অনুষ্ঠানটি সরাসারি না দেখানো হয়। সেই সাথে আরো অনুরোধ করেন পুরো অনুষ্ঠানটি রেকর্ড না করার জন্য। সরাসরি বলেই দিলেন, আপনারা আগেই ভিডিও করে নিন। কথা বলার সময় ভিডিও করা যাবে না। আপনাদের সাথে আমার এটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক। তার সাথে সুর মেলান কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম। প্রশ্ন হলো অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করার জন্য ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক আসা কেন? বিষয়টি সাংবাদিকদের আগে জানিয়ে দিলেই হতো। কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে যখন সাংবাদিকদের ফোনে আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন তো বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। আমন্ত্রণ জানানোর সময় যদি বলে দেয়া হতো অনানুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময়, তাহলে অনেকেই হয়তা যেতেন না। আবার অনানুষ্ঠানিক হলে সাংবাদিকদের কাছে থেকে আবার প্রশ্ন নেয়া কেন? আবার প্রশ্ন যদি নিয়েই থাকেন তাহলে উত্তর দেবেন না কেন? তেল মারার প্রশ্নই যদি প্রত্যাশা করেন, তাহলে পছন্দের সাংবাদিকদেরই ডাকতেন! প্রশ্নের উত্তর দেয়া দেখে মনে হলো গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের স্বার্থ যেখানে জড়িত- সেগুলো এড়িয়ে গেলেন! এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূতকে খুশি রাখার কাজটি চতুরতার সাথে করে গেলেন কন্স্যাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম। স্যারের খুশিই যেন তার খুশি। স্যারের ইচ্ছার প্রতিফলনই যেন কন্স্যাল জেনারেলের ইচ্ছা। যে করেই হোক স্যারকে খুশি রাখতেই হবে, উনার ঢোল যারা বাজায় তাদের প্রশ্নের জন্য বারবার সুযোগ দিতে হবে। কথায় আছে না নিজের ঢোল উপরের বসের সামনে পেটালে কার না ভালো লাগে!

রাষ্ট্রদূত প্রায় সকল প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন, পরামর্শ নিলেন। তাকে সহযোগিতার আহ্বান জানালেন। বললেন, নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের জন্য ভালো একটি অফিস প্রয়োজন। সেই সাথে বললেন, কনস্যুলেট সেবার বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। কনস্যুলেটের ভুলগুলো আপনারা ধরিয়ে দেবেন। প্রবাসীদের এনআইডি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বললেন, এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ। প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়ন হয়নি, বাস্তবায়ন হলে আমেরিকাতেও দেয়া হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট নিয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে বললেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট মেশিন এখানে বসানো হবে না, পাসপোর্ট আসবে বাংলাদেশ থেকে। তবে কীভাবে সময় কমানো যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বলেন, আমি এখানে সরকারের প্রতিনিধি আর আপনারা হচ্ছে দেশের প্রতিনিধি। মজার উত্তর আপনারা দেশের প্রতিনিধি? কিন্তু এনআইপি নেই! আনআইডি ছাড়াতো এখন বাংলাদেশে কোনো কিছু করা সম্ভবই না। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন, তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেও প্রবাসীদের অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয় (অনেক সময় বছরের বেশি)। আর এনআইডি না থাকলেতো জমি সম্পত্তি নিয়েও সমস্যা হয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন, এই বিষয় সুরাহা করতে একটি পন্থা নিশ্চয় বের করা হবে। হুন্ডিতে অর্থ প্রেরণ নিয়ে বললেন, আপনারা সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। যাতে করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে তাদের নিয়ে সরকারিভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সুপারিশ তিনি গ্রহণ করেন। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি। সেই দুটো প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রশ্ন ছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন, তাকে ফিরিয়ে নিতে আপনার ভূমিকা কী থাকবে? গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাব কর্মকর্তাসহ র‌্যাবের বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশন দিয়েছে- সে ব্যাপারে আপনার ভূমিকা কী? স্যাংশনের প্রশ্নের উত্তরটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ- তারপরেও তিনি এড়িয়ে গেলেন, কিন্তু কেন? র‌্যাবের প্রশ্ন নিয়ে তার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে কিন্তু জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিকে ফেরতের প্রশ্নে তার সমস্যা কোথায়? তিনি কি চান না বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফিরিয়ে নিতে বা ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে? দ্বিতীয়বার প্রশ্নটি স্মরণ করে দিতে চাইলে- কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম বাধা দেন। তাদের সমস্যাটা কোথায়? তারা কি.. পন্থী?


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)