ডেডলাইন ১০ : খেলা অমীমাংসিত


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 14-12-2022

ডেডলাইন ১০ : খেলা অমীমাংসিত

যতো গর্জে ততো বর্ষে না। ডেডলাইন ১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ গোটা দেশ অচল হয়নি। সরকার বিরোধীদলের সমাবেশ পণ্ড করতে পারেনি নানা ফন্দিফিকির করেও। বলা যায়, ৯০ মিনিটের খেলার ফলাফল (০-০)। টাইব্রেকার ছিল না। তাই সরকারের মন্ত্রীদের যেমন তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা অনুচিত আর বিরোধীদলের আন্দোলন কিছুটা এগিয়ে গেলেও জিতেছে- সেটিও বলা যাবে না।

ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ‘জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ’বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনে যোগদানের জন্য বাংলাদেশে এসেছি। ইচ্ছা ছিল কাতারে অনুষ্ঠানরত ফুটবল বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল, ফাইনাল দেখার।  ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে অবস্থান আমাকে ১৯৭১ ডিসেম্বরের অম্ল মধুর স্মৃতি স্মরণ করিয়ে শিহরণ জাগায়, এই মাসে যেমন মুক্তিযুদ্ধের সান্নিধ্যে থেকে বিজয় দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, ঠিক তেমনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছেলেবেলার খেলার সাথী নাসিম নওফেল (ফরিদপুর) এবং পরিচিতজনদের আশুগঞ্জে শহিদ হবার ঘটনা আছে। 

এবার কিন্তু আমার সহধর্মিণী আর ছেলেদের খুব আপত্তি ছিল এই সময় বাংলাদেশে আসার। ওদের ভয় ছিল ১০ ডিসেম্বর সরকার আর বিরোধীদলের মুখোমুখি মোকাবিলায় সংঘর্ষ সংঘাতের আশঙ্কা। বলাবাহুল্য, কোনো বিষয়ে মনস্থির করলে কেউ আমাকে দাবায় রাখতে পারে না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংকক হয়ে ঢাকা এলাম। আমার সরকারি এবং বিরোধীদল উভয়পক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে সৌহার্দ্য আছে। সাংবাদিক মহল, সুধীজনদের সঙ্গেও সংযোগ আছে। শুনলাম-জানলাম, দেশের ৯টি বিভাগে সরকারের নানাধরনের বাধা সত্ত্বেও মোটামুটি সফল সমাবেশ করেছে বিএনপি এবং ফ্রন্ট। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সমাবেশস্থল পরিকল্পনায় ছিল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক। বেশ কিছুদিন থেকেই এখানে নিয়মিত ছোটখাটো সমাবেশ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকার যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা বিকল্প স্থানে করার পরামর্শ দেয়, উভয়পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় জনগণ ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পেলো। এমনি যখন অবস্থা তখন সরকারি সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তথাকথিত চাল, ডাল এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের গল্প সাজিয়েছে। রেল, সড়ক, জলযানে ঢাকা আসা পুরোপুরি স্তব্ধ করে ঢাকাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হলো।

৯ তারিখ রাতে বিএনপি সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম আলমগীর আর কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। কৌশল আর অপকৌশল পাকিস্তান সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনকারী নেতাদের জেল-জুলুমের কার্বন কপি। আমি কিন্তু জানি, ইতিহাসের বড় শিক্ষা ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। বিরোধী আন্দোলন যে নির্যাতন-নিপীড়নে বেগবান হয় সেটি সবাই জানে। যাহোক বলা হয়, ৭ লাখ মোবাইল সিম ঢাকায় আসে, উভয়পক্ষের সমঝোতায় বিকল্প স্থানে কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন স্থানে সমাবেশ করে বিএনপি। নিরপেক্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ৩-৫ লাখ মানুষ সমবেত হয় সমাবেশে। ১০ দফা দাবি ঘোষণা হয় সমাবেশ থেকে।

আমি যেমন মুক্তিযুদ্ধ কাছে থেকে দেখেছি, ঠিক তেমনি রাজপথের সংগ্রামে সম্পৃক্ত থেকেছি ছাত্রজীবনে, ভালোভাবে জানি জেল-জুলুম, নির্যাতন করে শুধু আন্দোলনকেই বেগবান করা হয়। আমি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি হলেও বিরোধী মত দমনে নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয়টি আত্মঘাতী বলে মনে করি।

বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। জ্বালানি সংকট শীতের আগমনে কিছুটা সহনীয় হলেও ফেব্রুয়ারি মাসে আবারো তীব্র হতে পারে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্য, কিন্তু সীমিত আয়ের মানুষদের কোণঠাসা করে ফেলেছে। সাধারণ ভাত, ডাল, সবজি খেলেও একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসিক খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অনেক বড় বড় কথা বলা হলেও মাথাপিছু আয় কিন্তু ৫০ হাজার না, একটা অবস্থা রাজপথে রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকলে সরকারপ্রধানের অনুমিত দুর্ভিক্ষ হতেও পারে বাংলাদেশে।

জানি না, সরকার আর বিরোধীদল কি খেলা খেলতে চাইছে। উচিত উভয়পক্ষকে সংযত হয়ে রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধান। ১০ ডিসেম্বর ডেডলাইন খেলা অমীমাংসিত।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)