উদীচী-প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ও মহিলা পরিষদের প্রতিবাদ সভা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 13-04-2022

উদীচী-প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ও মহিলা পরিষদের প্রতিবাদ সভা

 কপালে টিপ পরা নিয়ে পুলিশের অসদাচরণ এবং মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত ৮ এপ্রিল নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র সংসদ, প্রোগ্রেসিভ ফোরাম ইউএসএ ও মহিলা পরিষদের মিলিত উদ্যোগে প্রতিবাদ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। উদীচীর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ^াসের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসের প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সাপ্তাহিক আজকালের সম্পাদক মঞ্জুর আহমদ, সাপ্তাহিক প্রথম আলোর সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খুরশেদুল ইসলাম ও জাকির হোসেন বাচ্চু, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা সুদ্রিতা পাল, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম জিকু, উদীচী জ্যামাইকা শাখার সভাপতি বাবুল আচার্য, প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব রতন কর্মকার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব চাকি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আলীম উদ্দীন।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, আমি কি পরবো না পরবো, কি খাবো না খাবো তা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। মৌলবাদী গোষ্ঠী আজ এসবের গায়ে ধর্মীয় মোড়ক পরিয়ে মানুষকে ধর্মীয় অনুশাসনে আটকিয়ে নিতে চাইছে। কিছুদিন আগে একজন সচিব তার মন্ত্রণালয়ে ধর্মীয় বিশেষ পোষাক পরে আসার নির্দেশ প্রদান করেন। প্রতিবাদ উঠলে তা প্রত্যাহার করা হয়, কিন্তু সচিবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। লতা সমাদ্দার টিপ পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে রাস্তায় কর্মরত পুলিশ তার সাথে চরম অসদাচরণ করেছে। সাম্প্রদায়িক বিভেদের উস্কানিমূলক গালাগাল করেছে। পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মানুষের সমাজের মতবিরোধ, মতভেদ দেখভাল করার কথা। সেক্ষেত্রে পুলিশ নিজেই আজ আইনের বরখেলাফ করে সাম্প্রদায়িক বিভেদে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাতের অভিযোগে হৃদয় মণ্ডলের গ্রেফতারের ব্যাপারে বক্তারা বলেন, দেশের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার মূলভিত্তি এবং জনগণের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিন্তু এখন যা ঘটছে এবং ঘটে চলেছে তা দেখে প্রতীয়মান হয় দেশটা আজ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গায় নেই। সমগ্র দেশ আজ মৌলবাদের, পরাজিত শক্তির করতলে চলে যাচ্ছে। বক্তারা অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের গ্রামগঞ্জে সর্বত্র অবাধে মৌলবাদী চর্চা চলছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে প্রগতি বিরোধী মৌলবাদী চর্চার প্রসার স্বাধীন বাংলাদেশকে পাক আমলের চেয়েও চরম সাম্প্রদায়িকাতর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকার মৌলবাদের আবদারে স্কুল কলেজের পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিভেদ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাঠ্য বইতে প্রগতিশীল লেখকদের লেখা পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। মৌলবাদের প্রতি সরকারের দুর্বলতার সুযোগে মৌলবাদের প্রভাবে গ্রামগঞ্জে খেলাধুলা, যাত্রা, নাটক, পালাগান, কবিগান, সিনেমা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার তার দিকে নজর না দিয়ে মৌলবাদকে খুশি করতে ইসলামী বিধি ব্যবস্থা বেশি করে গড়ে তোলা হচ্ছে। তারই পরিণতি ও প্রতিফলনই আজ স্কুল কলেজ সর্বত্র ঘটছে। বক্তরা বলেন, হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় অনুভ‚তির অভিযোগ তুলে মামলা করে তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষার কাসে বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা করছিলেন তিনি। ওই আলোচনা এক শিক্ষার্থী মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগে শেয়ার করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে গ্রেফতার ও হেনস্তার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দিয়ে মামলা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লক্ষণীয় ব্যাপার স্থানীয় দুষ্ট চক্র প্রভাবশালীদের প্রভাবে মামলা জামিনযোগ্য হওয়া সত্তে¡ও দুইবার আবেদন করা সত্তে¡ তাকে জামিন দেয়া হয়নি।

বক্তরা আরো বলেন, পত্র-পত্রিকায় আমরা হৃদয় মণ্ডলের কথোপকথন পড়েছি, কোথাও ধর্ম অবমাননার কোনো উল্লেখ দেখিনি। তিনি যা বলেছেন, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণই লক্ষ করেছি। আজকে ডিজিটেল পদ্ধতিতে দেশকে উন্নতির দিকে নেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে স্কুল কলেজে বিজ্ঞানের চর্চা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান পড়ানোর কারণে হৃদয় মণ্ডলকে জেলে যেতে হয়েছে। এটা জাতির জন্য লজ্জার এবং দেশের শিক্ষার অগ্রগতির জন্য চরম হুমকি। বক্তারা সরকারের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার বেশ কয়েকদিন অতিক্রান্ত হতে চলেছে অথচ সরকার ব্যাপারটি নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করছে না। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, এর আগে রাম, হাটহাজারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, নারয়াণগঞ্জে এবং সুনামগঞ্জের শাল্লায় ধারাবাহিকভাবে ঘটনা ঘটে চলেছে। সরকার একটি ঘটনারও বিচার করেনি। অধিকন্তু দোষীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে দেখা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে বলেছে, রসরাজ একটি অশিক্ষিত ছেলে তার পক্ষে এমন কাজ করার উপযুুক্ত নয়। তারপরও তাকে জেলে থাকতে হয়েছে। উল্টো অপরাধীদের মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনা শাল্লার ঘটনায় দেখা গেছে। অভিযুক্ত ৫২জনকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অথচ ঝুলন দাসকে নিরাপত্তার অজুহাতে জেলে রাখা হয়েছে। সরকার নিরপরাধের নিরাপত্তা দিতে পারে না অথচ অপরাধীদের বাইরে রেখে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যে মামুনুল প্রধান অভিযুক্ত তারও কিছু হয়নি। সরকারের বিচারহীনতা ও দ্বিচারিতাই আজ দেশে মৌলবাদের অবাধ রমরমা প্রভাব। প্রতিবাদ সভা থেকে অবিলম্বে হৃদয় মণ্ডলকে মক্তির দাবি জানানো হয়। একই সাথে মৌলবাদের আচল ছেড়ে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে সরকারের প্রতি পরামর্শ এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)