বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক সংবর্ধনা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 14-12-2022

বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক সংবর্ধনা

দেশ এবং প্রবাসে বাঙালিরা যেন গুণীজনকে সম্মাননা জানাতে বা ভালো কাজের প্রশংসা করতে অনেক ক্ষেত্রে, অনেক সময় যেন হীনমন্যতায় ভোগী। এটা যেন বাঙালির মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটা মনে বাঙালির এক ধরনের মানসিক রোগ বলা যায়। বাঙালিরা মনে হয় শত ভাল কাজ করলেও প্রশংসা করতে জানে না, সমালোচনা, পরনিন্দা এবং পরচর্চা করতেই সবাই যেন সবচেয়ে এগিয়ে। প্রশংসা বা সম্মাননা জানালে সম্মান কমে না সম্মান বাড়ে- এটা থেকে বাঙালি যোজন যোজন দূরে। কোন কোন সময় সম্মান জানাতে দেয়া যায়, প্রশংসা করতে দেখা দেখা যায়- তবে তা যে লোক দেখানোর জন্য তা সহজেই অনুমেয়। তবে সবাই না, সমাজে ভাল মানুষ, ভালবাসার মানুষও আছে। বাঙালি সবই পরে। কারণ বাঙালির হৃদয় বড়। তেমনি কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছেন প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনটি যারা দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন তাদের সম্মান জানাতে। এবারের নির্বাচনের সাথে অন্য নির্বাচনের তুলনা চলে না। কারণ এবারের নির্বাচন মামলা মকর্দ্দমা এবং করোনার কারণে চার বছর পরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যারা দীর্ঘ চার বছর সময় দিয়েছেন, নিজের পরিবারকে বঞ্চিত করেছেন, তাদের সম্মান জানানোর বিষয়টি প্রথমে মাথায় আসে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল ইসলাম এবং মফিজুল ইসলাম ভুইয়ার। তাদের সাথে একজন আজীন সদস্য হিসাবে ভ্যানগার্ডের মত দায়িত্ব পালন করেন মহিউদ্দিন দেওয়ান। গ্রহণ করা হলো পরিকল্পনা। এবার বাস্তবায়নের পালা। সেই কাজটিও তারা সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং কমিউনিটির পরিচিত মুখ দুলাল বেহেদুকে। তার সাথে সদস্য সচিব করা হয় সাইদুজ্জামান সরকার রিঙ্কু এবং প্রধান সমন্বয়কারী সামস উদ্দিন। তাদের সহযোগিতায় ছিলেন মজিব উদ্দিন জেন্টু, এম এ মজিদ আকন্দ, আবুল হোসেন, শেখ ফারুকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম বাদল, মোহাম্মদ মাসুক মিয়া, মাসুদুর রহমান সানু, ডা. আলী আহমেদ, সালাউদ্দিন চৌধুরী, তাসলিমা পাটোয়ারি, মোহাম্মদ হাবিব উল্যাহ, আবু ফজল লিটন, ইসমত জাহান পলি, জাকির সরকার, ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম রিয়াদ, সেলিম আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মাইন উদ্দিন, মোহাম্মদ আলম সরকার, বদরুল হক আজাদ, সিরাজুল হক জামাল, মোহাম্মদ আল আমিন, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, ফখরুল ইসলাম মঞ্জু ও মির্জা দস্তগীর।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ও স্বার্থক অনুষ্ঠান কমিউনিটিকে উপহার দেয়া হলো গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে। যোগ্য সভাপতি দুলাল বেহেদুর সভাপতিত্বে এবং মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি ও কাজী তোফায়েল ইসলামের পরিচালনায় নজিরবিহীন এবং বিল এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি, নির্বাচন কমিশনের সদস্য আব্দুল হাকিম মিয়া, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রুহুল আমিন সরকার, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিমুর রহমান বোরহান, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান, প্রধান সমন্বয়কারী সামস উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী সমিতির সভাপতি মুজিব উদ্দিন জিন্টু, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি রাফেল তালুকদার।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাজী তোফায়েল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সদস্য আক্তার বাবুল, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম মাছুম, ড. আলী আহমেদ, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি আতোয়ারুল আলম, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জান, জেবিবিএ’র নির্বাচন কমিশনার আব্দুন নূর বড় ভুইয়া, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট শেখ আতিকুল ইসলাম, কুমিল্লা সোসাইটির সভাপতি বদরুল হক আজাদ, ঢাকা জেলা সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আমিনুল হক স্বপন, শাপলা ওয়েলফেয়ারের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, মনিরুল ইসলাম, আবু মুসা খান, ইঞ্জিনিয়ার মাইন উদ্দিন প্রমুখ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট জামাল আহমেদ জনি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই নির্বাচন পরিচালনা করা সহজ সাধ্য ছিলো না। কারণ আমাদের সোসাইটির গঠনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে হয়েছে এবং নিজেদের সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। যে কারণে আমরা একটি সুষ্ঠু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছি। সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কারণেই আজকের নাগরিক সংবর্ধনা। বাংলাদেশ সোসাইটির প্রায় ৫০ বছরের ইতিহাসে এটাই প্রথম। তিনি আরো বলেন, যে দিন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় সেইদিন থেকেই বিরোধীতা শুরু হয়ে যায়। সুর তোলা হয় এই নির্বাচন কমিশন বাতিলের। মামলা নিয়ে সবার যে ধারণা সেটা সত্যি নয়। মামলার পেছনে অভিভাবকরাই জড়িত ছিলেন, এটাই বাস্তবতা। তিনি সোসাইটির বর্তমান কমিটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের প্রভাব মুক্তভাবে কাজ করতে হবে। প্রভাব মুক্তভাবে কাজ করতে গেলে আপনারাদের অনেক কঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, অভিষেক অনুষ্ঠানে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন কমিশনকে দূরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ভুল ছিলো আমরা অনেকের অনুরোধ রাখতে পারিনি। তবে আমরা প্রমাণ করেছি- আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। তিনি বলেন, আজকে আমার যে সম্মান দেখিয়েছেন আমরা তা আমৃত্যু স্মরণ রাখবো।

আব্দুল হামিক মিয়া তাদের সম্মাননা প্রদানে সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচন কমিশনে কাজ করছি। আমিই প্রথম বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মেশিনে ভোট নেয়া শুরু করি বিয়ানীীবাজার সমিতির নির্বাচনে। সেইই এখন আমাদের কমিউনিটিতে চলছে। তিনি বলেন, এটি ভলেন্টিয়ারি জব। সুষ্ঠু নির্বাচন ছিলো আমাদের দায়িত্ব। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। এটা মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে, সেই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। অনেকের কথা নিরপেক্ষতার স্বার্থে রাখতে পারিনি বলেই তারা আমাদের প্রতিপক্ষ ভেবেছে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আমরা কারো প্রতিপক্ষ ছিলাম না। সোসাইটির গঠনতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মামলার সমালোচনা করে বলেন, সোসাইটিকে ধ্বংস করার জন্যই মামলা করা হয়েছে।

রুহুল আমিন সরকার বলেন, আজকের এই সম্মাননার জন্য আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে বলতে চাই- আমরা নিঃস্বার্থ এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। তারপরেও এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে যারা সুন্দর মানসিকতা দেখিয়েছেন আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এটি সত্যিই বিরল। এত বিশাল ভোটার নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আমরা প্রতিটি সদস্য ঐক্যভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি তার সম্মাননা নর্থবেঙ্গলবাসীসহ সকল প্রবাসীকে উৎসর্গ করেন।

আজমুল হোসেন কুনু বলেন, আমিও নির্বাচন করি। নির্বাচনে জয়ী হয়েছি, সবাইকে বুকে টেনে নিয়েছি। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে বিজয়ীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তিনি বর্তমান কমিটিকে সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচনের জন্য সকলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।

মহিলাউদ্দিন দেওয়ান বলেন, আজকে আমার হিংসা হচ্ছে। কারণ সবার দাবির কারণে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করেছি। তিনি বলেন, আমি আজকে সোসাইটির আজীন সদস্য হিসাবে এসেছি।

আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আজকে আমার এখানে থাকার কথা ছিলো না, থাকার কথা ছিলো আজাদ বাকের ভাই’র। তিনি কামাল আহমেদ, আব্দুল খালেক খায়ের এবং কামাল আহমেদকে স্মরণ করেন। একইভাবে স্মরণ করেন ফারুক চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।

সভাপতি দুলাল বেহেদু বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে ইচ্ছা থাকলে সব কিছু করা সম্ভব। আপনারা জানেন ১৯৭৫ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ সোসাইটি শুধু একটি সংগঠনই নয়ম তারা বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে এবং করবে। করোনাকালে তাদের ভূমিকা ছিলো সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি এভাবেই আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। আমি আজকে ঘোষণা দিচ্ছি আগামীতে আমরা সোসাইটির পাশে থাকবো এবং সুন্দর কাজের স্বীকৃতি দেবো। অনুষ্ঠানে সফল করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)