হতাশা থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে ওয়েব সিরিজ


আলমগীর কবির , আপডেট করা হয়েছে : 13-04-2022

হতাশা থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে ওয়েব সিরিজ

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘সাবরিনা’। সিরিজে সাধারণ গৃহিনী থেকে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরানো অগ্নিদগ্ধ সাবরিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্ষা। পর্দার চরিত্রকে বাস্তবের মতো করে উপস্থাপনার জন্য সামাজিক মাধ্যম থেকে সর্বত্র অর্ষার অভিনয় প্রশংসা পাচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। 

প্রশ্ন : ইদানিং আপনাকে নাটকের চেয়ে ওয়েব সিরিজে বেশি মনোযোগী মনে হচ্ছে। এর কারণ কি?

অর্ষা : কারণটা খুব সহজ। আপনি যখন কোনো কাজকে পেশা হিসাবে বেছে নেবেন তখন সেখানে অনেক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। কিভাবে কাজটা করলে পেশাটা ধরে রাখা যাবে সেই বিষয়টা এখানে বেশি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠে। আমি প্রথমে অভিনয়ে যুক্ত হয়েছিলাম শখের বসে। একটা সময় এটাকে যখন পেশা হিসাবে নেই তখন শুধু নাটক দিয়ে আর হচ্ছিল না। ঈদের সিজনে নিয়মিত কাজ পাওয়া যায় বাকি সময়টায় বেকার বসে থাকতে হয়। তখন নিজের মধ্যে একটা হতাশা কাজ করে। এই হতাশা থেকে আমাকে মুক্তি দিয়েছে ওয়েব সিরিজ। এখানে কাজ করতে গেলে দীর্ঘ সময়রে প্রস্তুতি লাগে। যা প্রফেশনের জন্য খুবই দরকার। তাছাড়া ওয়েব সিরিজে কাজ করে আনন্দ পাই বেশি। এ কারণেই ওয়েব সিরিজ একটু বেশি করছি। 

প্রশ্ন : সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাবরিনা’ দর্শক মহলে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর পেছনের গল্পটা কেমন?

অর্ষা: লুক টেস্টের জন্য প্রথমে ডাকা হয়। তখন শুনি, যে দুটি ক্যারেক্টার আছে, তাদের নাম একই। তারা একই সঙ্গে কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে এগোবে। পরিচালক আশফাক নিপুন ভাই বলেছিলেন, এই সাবরিনা তোমার আশপাশে হাজারটা আছে। আমাকে তাই আলাদা করে কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়নি।

প্রশ্ন : হাসপাতালে অনেক দৃশ্য। প্রস্তুতিটা কিভাবে নিয়ে ছিলেন?

অর্ষা: পোড়ার পর ক্ষতস্থানে ড্রেসিংয়ের সময় কী রকম যন্ত্রণা হয় সেই অভিজ্ঞতা তো আমার নেই। নিপুন ভাই আমাকে কয়েকটা রেফারেন্স ভিডিও দেখিয়েছেন। আমার কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন, যাঁদের এমন অভিজ্ঞতা আছে। তাঁদের সঙ্গে গিয়ে দু-একবার দেখেছি, তীব্র যন্ত্রণা হয়। কিন্তু আমার ওপর ফেক প্রস্থেটিক মেকআপ দেওয়া। অনেকক্ষণ পর্যন্ত প্রস্থেটিক মেকআপ থাকলে সেখানে ইচিং করে, কিন্তু কোনো ব্যাথা হয় না। সেখানে হাত দিলে উল্টো আরাম লাগতে থাকে। এক্সপ্রেশন হচ্ছে যন্ত্রণার, অথচ আমার লাগছে আরাম। মানে, এটা খুবই বিপরীতমুখী অনুভূতি ছিল। 

প্রশ্ন : শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অর্ষা : কয়েকটা জায়গায় বেগ পেতে হয়েছে। আমরা শুটিং শুরু করি শীতে, শেষ হয় গরমে। অ্যাপ্রোনের একটা পোরশন পুরো কাটা, এর মধ্যে হাত প্রস্থেটিক করা। নড়াচড়া করা যাচ্ছে না। যেদিন শুটিং ছিল, দেখা গেল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুয়েই থাকতে হয়েছে। নাকের ভেতর অক্সিজেনের পাইপ ঢোকানো। এর মধ্যে অজ্ঞানের মতো পড়ে থাকা। অনেক শব্দ আসছে কানে। কিন্তু তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এই জার্নিটা সবচেয়ে কঠিন ছিল।


প্রশ্ন: মেহ্জাবীনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? 

অর্ষা : ২০০৯ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় ছিলাম আমরা। কিন্তু তারপর একসঙ্গে আর কাজ হয়নি। শুটিংয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করা তো হয়েছেই। তবে ফ্রি না থাকলে খুব একটা কথা বলিনি আমরা। কারণ, সব সময় আমরা ক্যারেক্টারে থাকার চেষ্টা করতাম।

প্রশ্ন: মনে হয়নি, যদি মেহ্জাবীনের কাছে নিজের চরিত্রের গুরুত্ব হারায়? 

অর্ষা: আমি কখনোই কার চরিত্র ছোট বা কার বড়- তা ভেবে কাজ করিনি। অভিনয়কে কর্তব্য বলেই বিবেচনা করেছি। কাজ করতে গেলে অনেক সময়ই অনেক বড় আর্টিস্টকে ফেস করতে হয়। মেহ্জাবীন অনেক জনপ্রিয়। আমি মুগ্ধ হয়েছি ওর পেশাদারত্ব, সময়নিষ্ঠা দেখে। কাজই একমাত্র জায়গা, যার মাধ্যমে গ-ি ভাঙা যায়। আমি ভাবি না তাঁর চেয়ে ভালো করতে হবে। আমি ভাবি, আমার চরিত্রটা কত ভালো করতে পারি। 

প্রশ্ন : সাবরিনা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এটা কি অভিনেত্রী অর্ষার পুনর্জন্ম?

অর্ষা: গত বছর ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ নিয়েও কিন্তু প্রচুর আলোচনা হয়েছিল। এ বছর যুক্ত হলো সাবরিনা। আমি নেটওয়ার্কের বাইরে ওয়েবফিল্ম করার পর অনেকের কমেন্ট পড়েছি যে আমার অভিনয় তাঁরা প্রথম দেখেছেন। ‘সাবরিনা’ দেখেও অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন, আমার পুরোনো আর কী কী কাজ আছে। এটা বুঝেছি, মন দিয়ে কাজ করলে একটা সময় ফল পাওয়াই যায়। আমি খুশি, দর্শক আমার অভিনয়ের ধরনটা পছন্দ করছেন। এটা দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। 

প্রশ্ন: সামনে কী আসছে?

অর্ষা: এখন কিছু করছি না। দম নিচ্ছি। সামনের মাসে দু’একটা ওটিটির কাজ করার সম্ভাবনা আছে। ঈদে টিভিতে বেশি প্রডাকশন করা হবে না মনে হয়। গত দুই বছর নিয়মিত ওয়েবেরই কাজ করছি। কিছু অন এয়ার হয়েছে, কিছু হবে। টেলিভিশনে দুই দিনে ১৫-২০টা সিন করার অভ্যাসটা নতুন করে করতে চাচ্ছি না।



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)