কথার কথকতা


মাইন উদ্দিন আহমেদ , আপডেট করা হয়েছে : 21-12-2022

কথার কথকতা

হৃদয় ও চোখ মেরামত পর্ব চলছে। এবারের কলাম লেখার শুরুতেই একেবারে প্রথম বাক্যটি নিয়েই আমার এক বন্ধু বিস্ময় এবং বিরক্তি প্রকাশ করলো। বললো, ‘হার্টের অসুখ এবং চোখের অপারেশন- এ রকম দুটো জটিল বিষয় নিয়ে এতো রসিকতাপূর্ণ প্রকাশভঙ্গি প্রয়োগ কতোটা যুক্তিসঙ্গত হয়, তা তুই নিজেই ভেবে দেখ, আমি কিছু বলবো না।’

আমি বললাম, ‘ভাই রে, আমিতো আমার সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মধ্যেই বন্দি হয়ে আছি, এর থেকে বেরোনোর পথ তো নেই। এটা অনেকটা আমার কপাল বলেই মেনে নে।’

প্রিয় পাঠক, বন্ধুটিকে যা উত্তর দিলাম তাতে কিছুই তো স্পষ্ট হয়ে উঠলো না, উত্তর হিসেবেও না, বর্ণনা হিসেবেও নয়। তাহলে বসুন, জীবনের ইতিহাস বইটির অনেক পেছনের কয়েকটা পাতা উল্টাই।

তখন কলেজে ঢুকলাম মাত্র। সে সময় যেসব জ্যোতিষী গ্রামের বাজারে রাস্তায় বসে একটা টিয়াপাখি সাথে নিয়ে মানুষের ভাগ্য গুনতো তারা হস্তরেখা দেখে মানুষের ভাগ্য গণনার জন্য দুই আনা পয়সা নিতো। তা ছিলো বাংলাদেশে দশমিক মুদ্রা চালু হবার আগের সময়ের কথা। তখন চার পয়সায় এক আনা এবং ষোল আনায় অর্থাৎ চৌষট্টি পয়সায় এক টাকা হতো।

শুধু পাখি দ্বারা ভাগ্য গণনার ফি ছিলো এক আনা। সেই সময় নোয়াখালী জেলার বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে একজন জ্যোতিষী নিজস্ব চেম্বারে বসতেন, যিনি হস্তগণনার ফি নিতেন পাঁচ টাকা। আমি কোন সাহসে বা কি কারণে এ রকম ব্যয়বহুল স্থানে হাত গোনাতে গেলাম, এখন মনে করতে পারছি না। তিনি হাত দেখে অনেক কথা বললেন, সব এখন মনে নেই, তবে তখন বুঝতে পারিনি এমন একটা কথা এখনো মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, আপনি এমনভাবে কথা বলেন যে, অন্যরা আপনার সমস্যা বা কষ্ট বুঝতে পারে না। বিষয়টা আরো স্পষ্ট করার জন্য তিনি বললেন, আপনি যখন মৃত্যুশয্যায় তখনো আপনি আপনার অবস্থা এমনভাবে এবং এমন ভাষায় প্রকাশ করছেন যে, সবাই ভাবছে আপনি রসিকতা করছেন, কিন্তু একটু পরে দেখবে আপনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন! ভদ্রলোকের কথাগুলো ভালোভাবে বুঝতে আমার বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিছু কিছু বুঝতে শুরু করলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্যে মাস্টার্স পড়া শুরু করার পর। এখন অবশ্য মনে হয় যে, ওনার কথাটা পুরো বুঝতে পেরেছি। আজকের লেখার প্রথম বাক্যটিও জ্যোতিষী বর্ণিত সেই সমস্যাম-িত! যা-ই হোক আসল কথায় আসা যাক।

জীবনকে সম্মানজনক করা এবং অশুভ চক্র থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে সমাজ-প্রদত্ত সুখ-দুঃখ এবং কিছু স্বীয় বেকুবির জন্য আমার কঠিন একটা হার্টঅ্যাটাক হলো ২০১১ সালের শেষপ্রান্তে, ২০১২-এর শুরুতে হার্টে বসাতে হলো তিনটা স্ট্যান্ট যেটাকে আমরা রিং বলি- এক জায়গায় দুটা, আরেক জায়গায় একটা। এখন এই ২০২২-এর শেষপ্রান্তে এসে দেখা গেলো ওর একটা জায়গা আবার ব্লকড হয়ে গেছে। এনজিওগ্রাম করার পর ডাক্তারগণ বললেন, আমরা ওই স্থানটিতে এখন রিং বসাবো না, কারণ আগে দেখতে হবে ওখানকার সেলগুলো সক্রিয় আছে কিনা, যার জন্য আমরা ‘এম আর আই’ করবো।

পাশাপাশি আরেকটা বয়সজনিত সমস্যা জটিল হয়েছে, দুই চোখেই ছানি পড়েছে, বাম চোখে বেশি। অপারেশন হলো বাম চোখের, বসানো হলো আলাদা লেন্স। বলা হলো, দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হতে মাসখানেক সময় লাগবে। দু’জন পরিচিত লোক বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, আমরা তো ছানি অপারেশনের দুইদিন পরেই ডিউটিতে জয়েন করেছি। শুনে টেনশনে পড়ে গেলাম। আসল বিষয় জানার চেষ্টা করলাম। পরে জানলাম, ওই দু’জনের শুধু ছানি অপারেশন হয়েছিলো, আলাদা স্থায়ী লেন্স বসানো লাগেনি তাই দ্রুত সেরে গেছে। লেন্স বসালে ফিক্স হতে সময় লাগে, সাবধান থাকতে হয়।

হার্ট এবং চোখ মেরামত প্রক্রিয়ায় রসিকতা করতে করতে চিরবিদায় নেয়া থেকে মনে হয় এবারের মতো ছাড় পাওয়া গেলো। অবশ্য এখনো পুরাপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ চিকিৎসা প্রক্রিয়াসমূহ এখনো চলমান রয়েছে। প্রিয় পাঠক, কি মনে হয়, এবারের মতো টিকে যাওয়া যাবে তো? চিন্তার মধ্যে আছি, আপনাদের দোয়া-আশীর্বাদ তো অবশ্যই লাগবে। আপনাদের কথা স্মরণ করলে মনে হয়, আরো কিছুকাল ইহজগতে থাকা খুবই দরকার। কি বলেন?


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)