গাড়িতেই পাওয়া গেল বাংলাদেশি জহিরুল
ইসলামের লাশ। জানা গেছে,
জহিরুল ইসলাম দেশে এবং প্রবাসে
অতিপরিচিত ছিলেন। তিনি দেশে হবিগঞ্জ
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদলের
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জহিরুল ইসলাম রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৬ সালে
জীবন রক্ষার্থে আমেরিকায় চলে আসেন। আমেরিকায়
আসার পর তিনি রাজনৈতিক
আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন এবং তার রাজনৈতিক
আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুরও হয়েছিলো। স্বপ্ন দেখছিলেন স্ত্রী এবং সন্তানকে আমেরিকায়
নিয়ে আসার। তিনি কাজও শুরু
করেছিলেন, কাগজপত্র তৈরি করছিলেন কিন্তু
নিয়তির কী নির্মম পরিহাস
স্ত্রী এবং আদরের সন্তানদের
জন্য আবেদন করার আগেই তিনি
পৃথিবীর সকল মায়া ত্যাগ
করে পরপারে চলে যান।
জহিরুল
ইসলামের আপন ভাই ইমদাদুল
ইসলাম জানান, প্রতিদিনের মতো গত ১৬
ডিসেম্বর সকালে জহিরুল ইসলাম কাজে যান। তিনি
লিফটের গাড়ি চালাতেন। ইমদাদুল
ইসলাম বলেন, আমি রাতের বেলায়
ওই গাড়িটি চালাই এবং কুইন্স বুলেবার্ডে
গাড়ি পার্কিং করে চলে আসি।
অন্যদিনের মতো কিছুক্ষণ ঘুমানোর
পর সকালে একবার আমার ঘুম ভেঙে
যায়। আমি গাড়ি ট্র্যাকিং
করতে গিয়ে দেখি আমার
ভাই গাড়ি নিয়ে প্রায়
২ ঘণ্টার মতো ঘোরাঘুরি করছে
এবং আমাদের বাসার পাশে গাড়ি পার্কিং
করা। আমি মনে করেছি
কাজ পাচ্ছে না তাই বসে
আছে। আমি আবারো ঘুমাতে
চলে যাই। বিকেল ৩টায়
ঘুম থেকে উঠি। ঘুম
থেকে উঠেই তাকে কল
দিতে থাকি। কিন্তু সে ফোন ধরছিলো
না। আবার গাড়িও ট্র্যাকিং
করতে পারছি না। আমার অন্যান্য
রুমমেটরা তাকে কল দিতে
থাকে। কারো ফোনই ধরছিলো
না। আমরা মনে করেছিলাম
হয়তো গাড়িতে কাস্টমার আছে যে কারণে
সে ফোন ধরছে না।
আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। শেষ
পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা দিকে আমার
এক রুমমেট বলে, আসুন আমি
আপনাকে গাড়ির কাছে নামিয়ে দিই।
আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি কাজে
বের হবো। আমরা গাড়ি
নিয়ে কুইন্স বুলেবার্ডে গেলাম যেখানে আমি গাড়ি দেখিনি।
পরে জিপিএস মেরে দেখি গাড়ি
আমাদের পাশে কার্নিশ এবং
আলবিউ অ্যাভিনিউর মধ্যে পার্কিং করা। আমার রুমমেট
আমাকে সেখানে নিয়ে যায়। আমার
রুমমেট প্রথমে গাড়িটি দেখে। আমি গাড়ির কাছে
গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে তার
হাত ধরে টান দেই।
দেখি সে নড়ছে না।
তার শরীর নিথর। আমি
এবং আমার রুমমেট সাথে
সাথেই পুলিশে কল করি। পুলিশ
এবং অ্যাম্বুলেন্স আসে। স্থানীয় হাসপাতালে
নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার
জহিরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করে
(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি
রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার
বয়স হয়েছিলো ৪৩ বছর। জহিরুল
ইসলামের নামাজে জানাজা গত ১৭ সিডেম্বর
বাদ মাগরিব জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা
শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় আমিরাত এয়ারলাইন্সযোগে তার লাশ বাংলাদেশে
পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে
নামাজে জানাজা শেষে তাকে হবিগঞ্জের
মাদবপুরে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।
জহিরুল
ইসলামের কোনো রোগ ছিলো
কি না এমন প্রশ্নের
জবাবে ইমদাদুল ইসলাম জানান, আমার ভাইয়ের ডায়াবেটিস
এবং হাই বøাড
প্রেশার ছিলো। মৃত্যুর কারণ কী এই
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা
এখনো মেডিকেল রিপোর্ট পাইনি। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের
জানানো হয়েছে তার হার্টঅ্যাটার্ক হয়েছে।
মেডিকেল রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর কারণ আমরা জানতে
পারবো। আরেক প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, আমাদের ৪ ভাইয়ের মধ্যে
সে সবার বড়। বাংলাদেশে
তার স্ত্রী, ৮ বছর এবং
সাড়ে ৬ বছরের দুটো
সন্তান রয়েছে। সেখানে এখন শোকের মাতম।
বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় যে
জাহাজে চাকরি করতো। সেই সুবাদে ভিসা
নিয়ে সে আমেরিকায় আসে।
আমরা ৫ জন রুমমেট
এলেমহার্স্টে থাকতাম। আরেক প্রশ্নের জবাবে
ইমদাদুল ইসলাম বলেন, আমি জানি না
তার স্ত্রী এবং সন্তানকে আনা
যাবে কি না। আমি
চাই তারা আসুক। তিনি
বলেন, আমরা চেষ্টা করবো।
এখন তো তার কাজেই
আমরা ব্যস্ত। তার লাশ দাফন
এবং সকল কাগজি কাজ
শেষ হলেই আইনজীবীর সাথে
আলাপ করবো।
এমন
মৃত্যু আসলে কারো কাম্য
নয়। গাড়িতে লাশ পড়ে থাকবে
এটা কেউ মেনে নিতে
পারবেন না। ডাক্তাররা বলেছেন,
যাদের ডায়াবেটিস এবং হাই প্রেশার
রয়েছে তাদের সবসময় গাড়ির মধ্যে ওষুধ রাখা এবং
সুগার জাতীয় খাবার রাখা উচিত। কোনো
সমস্যা হলে বা সুগার
লো হলে সাথে সাথেই
সুগার জাতীয় খাবার খেয়ে নেয়া। কোনোভাবেই
দীর্ঘসময় অপেক্ষা করা উচিত নয়।
অন্যদিকে সবার মনে রাখা
উচিত ডায়াবেটিস রোগীর সময় মতো খাওয়া
এবং নিয়ম করে চলাফেরা
করা। এর আগেও বেশ
কয়েকজন বাংলাদেশির লাশ গাড়ি পাওয়া
গিয়েছিলো কিন্তু কোনোটিরই সঠিক কারণ জানা
যায়নি।