তুষারঝড়ে ৬০ জনের মৃত্যু, লণ্ডভণ্ড জনজীবন


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 29-12-2022

তুষারঝড়ে ৬০ জনের মৃত্যু, লণ্ডভণ্ড জনজীবন

যুক্তরাষ্ট্রে স্মরণকালের ভয়াবহ তুষারঝড়ে এ পর্যন্ত ৬০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০ লাখ মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখনো ১০ লাখের মতো মানুষ বিদ্যুৎহীন। বাফেলোতেই মৃত্যুবরণ করেছে ২৭ জন। বাফেলোতে আরো মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। এসব মৃত দেহ পাওয়া যাচ্ছে তুষারের মধ্যে, ঘরের মধ্যে। তবে এই তুষারঝড়ে কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু নিউইয়র্কের বাফেলোতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এর মধ্যে কারো কারো বাড়িতে বিদ্যুৎ চলে যায় এবং পানির লাইন বন্ধ হয়েছে। এই অবস্থায় অনেককে অনেক কষ্টে শেল্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এই কাজে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সহযোগিতা করেছেন। আবার দুর্গম এলাকায় অনেকেই আটকা পড়েছেন। সেখান থেকে কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত ২৩ এবং ২৪ ডিসেম্বরের প্রচ- তুষারঝড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটটি থেকে ১০টি স্টেটে আঘাত হেনেছে। তুষারঝড়ে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বড়দিনের ছুটিতে অনেকেই ফ্লাইট বাতিলের কারণে এয়ারপোর্টে অবস্থান করেছেন। প্রায় ২০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। সেই সাথে তাপমাত্রা ছিল কোথাও কোথাও ১৫ থেকে ২২ ডিগ্রি মাইনাস। প্রচ- ঠান্ডার কারণে অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। রাস্তায় বরফ জমে থাকার কারণে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুলসহ অনেক স্টেটের গভর্নর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। ক্যাথি হোচুল বাফেলো এবং ইরি কাউন্টিতে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করেছেন। অনেক স্টেটেই জরুরি সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগ তুষারকবলিত এলাকাগুলোর মানুষজনকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলছেন, কোনো কোনো স্টেটে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে।

এনডব্লিউএসের বরাতে এএফপি জানায়, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মন্টানার তাপমাত্রা নেমেছে মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা ঢেকে গেছে বরফের নিচে। এছাড়া মিশিগান, বাফেলো, নিউইয়র্ক, সাউথ ডাকোটা, কলরাডো, কানসাস, ওয়াইওমিং, টেনেসি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, ওকলাহোমা রাজ্যে বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে তুষারপাত সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এসব রাজ্যে তাপমাত্রা মাইনাস ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমেছে।

কানসাস, টেনেসি ও ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্যের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ২৬ বছরে এতো নিম্ন তাপমাত্রা দেখা যায়নি। ঝড়ো হাওয়া, তাপমাত্রা হ্রাস ও তুষারপাতের জেরে নিউইয়র্ক, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ইতোমধ্যে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

সেই সঙ্গে জ্বালানি সংকটে আবহাওয়াগত জরুরি অবস্থা জারির পাশাপাশি জ্বালানিগত জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেছে সাউথ ডাকোটা এবং উইসকনসিন।

তুষারঝড়ে ৫ হাজার ৫০০ ফ্লাইট বাতিল

শক্তিশালী তুষারঝড়ের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ যোগাযোগব্যবস্থা। দুদিনে দেশটিতে ৫ হাজার ৫০০টির বেশি ফ্লাইট (উড়োজাহাজ যাত্রা) বাতিল করা হয়েছে। ছুটির মৌসুমের শুরুতেই আবহাওয়ার বৈরী আচরণ শুরু হয়েছে। আকাশপথে যাত্রায় এটিই এ যাবৎকালের ব্যস্ততম সময় হতে পারে বলে কেউ কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ২ হাজার ৩৫০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ২৩ ডিসেম্বর শুক্রবারের আরো ২ হাজার ১২০টি ফ্লাইট বাদ দেয়া হয়েছে বলে ফ্লাইট অ্যাওয়ার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বরেও অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়।

এদিকে রেলপথে যাত্রী পরিবহনের জাতীয় সংস্থা আমটার্ক বড়দিনের ছুটির মধ্যে কয়েক ডজন ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে। এতে হাজারো মানুষের ভ্রমণ বিঘ্নিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরো ৮ হাজার ৪৫০টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। এসব ফ্লাইটের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ছিল তিনটি উড়োজাহাজ সংস্থা- আমেরিকান এয়ারলাইনস, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইনসের। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসন বলেছে, মধ্যপশ্চিম অঞ্চলে প্রবল তুষারঝড়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমটার্ক বলেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা মধ্যপশ্চিম অঞ্চলে বড়দিনের ছুটির মধ্যে কয়েক ডজন ট্রেনযাত্রা বাতিল করেছে। এর মধ্যে মিশিগান, ইলিনয়স, মিজৌরি এবং নিউইয়র্ক ও শিকাগোর মধ্যে চলাচল করা ট্রেনও রয়েছে।

গত ২১ ডিসেম্বর নাগাদ আগের ৭ দিনে ১ কোটি ৬২ লাখ যাত্রীকে স্ক্রিনিংয়ের কথা জানিয়েছে পরিবহন নিরাপত্তা প্রসাসন। তবে এই সংখ্যা করোনা ভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগে ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা কম। ওই সময় ১ কোটি ৬৫ লাখ যাত্রী স্ক্রিনিং করেছিল জাতীয় সংস্থাটি। গত বছরের ছুটির মৌসুমে করোনাভাইরাস মহামারীসহ অন্য কারণে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।

এদিকে বাফেলো থেকে কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট কবীর আলী জানিয়েছেন, তারা গত দুদিন ধরে বাসায় রয়েছেন। কারণ বাসা থেকে বের হবার কোন অবস্থা নেই। রাস্তাঘাট সব বন্ধু। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বাসায় কোনো সমস্যা হয়নি, হিট বা পানি চলে যায়নি। তবে কোনো কোনো বাসায় এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, যারা বিপদে পড়েছে তাদের সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশিরা। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানামতে এই পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বিকেল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)