জ্বালানি : সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 18-01-2023

জ্বালানি : সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানি নিরাপত্তার নাজুক পরিস্থিতির জন্য আমি আমলাতন্ত্রের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণকে দায়ী করবো। জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর নিবিড় কারিগরি ঘন সেক্টর। এটা দিবালোকের মতোই সত্য যে, এখানে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত সাদামাটা মানের সাধারণ ক্যাডার কোনো অবদান রাখার সুযোগ নেই। অথচ একটু চোখ খুললেই দেখা যাবে গত প্রায় দেড়যুগ পেট্রোবাংলার মতো কারিগরি প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান, পরিচালকদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রেখেছে নিতান্ত সাধারণ মানের আমলা। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিসমূহের পরিচালকম-লীর অধিকাংশ সদস্য আমলা।  প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা, মুখ্য সচিব সবাই আমলা। তাদের সরাসরি আশ্রয় আর প্রশ্রয়ে বেপরোয়া আমলারা জ্বালানি সেক্টরে তেমন কিছুই অবদান রাখতে পারেনি।

ফলাফল দেশের কয়লা সম্পদ মাটির নিচেই রয়ে গেছে, জলে-স্থলে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান হয়েছে সীমিত। ফলশ্রুতিতে জ্বালানি আমদানি এখন মহাসংকটে। আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৫ হাজার চাহিদা মেটাতে পারে না জ্বালানি খাত। শুনেছি মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলার শীর্ষ তিন পদ সবসময় মন্ত্রণালয় থেকে পূরণ করা হবে। কোম্পানি আইনে গঠিত পেট্রোবাংলা কোম্পানিসমূহের পরিচালকম-লীর সদস্যসমূহের সিংহভাগ আমলাদের মাধ্যমে পূরণ আইনসম্মত কি-না সন্দেহ আছে। 

আমলা নিয়ন্ত্রিত পেট্রোবাংলা ২০২০-২০২২ কয়লা অনুসন্ধান, উত্তোলনে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি, দেশে জলে-স্থলে বিপুল পরিমাণ পেট্রোলিয়াম সম্পদপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাজ হয়েছে সীমিত। যতো কিঞ্চিৎ কাজ করেছে, সীমিত সামর্থ্যরে বাপেক্স। তথাকথিত সাগর জয়ের প্রায় এক দশক পরেও কোনো কাজ শুরু হয়নি সাগরে। নীল অর্থনীতি নামের একটি সেলের কার্যালয়টি শুধু নীল কাচে ঘেরা। দেশের সম্পদ আহরণ অবহেলা করে আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভর করার ভ্রান্ত কৌশল জ্বালানি সংকটের মূল কারণ। 

পায়রা। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পরিবহন সংকটে। ভূ-রাজনীতির কারণে অস্থির জ্বালানি বাজার থেকে উচ্চমূল্যে জ্বালানি আমদানি করতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। সরকার এখন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে পাশ কাটিয়ে জ্বালানি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্বালানির অভাবে শিল্পখাত বিশেষত রফতানিমুখী শিল্পখাত মুখ থুবড়ে পড়ছে।

আমি এগুলোর জন্য সরাসরি সরকার প্রধানের জ্বালানি উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য সচিব, ২০১০-২০২২ সকল জ্বালানি সচিব আর পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানদের দায়ী করবো। এরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কিন্তু কাজ করেননি। পাশ এড়িয়ে গেছেন। এরা অধিকাংশ আমলা। দিনশেষে সব ঝুটঝামেলা সরকার প্রধানের ওপর। অব্যাহতভাবে সবার ওপর দায়িত্বগুলো তাকেই করতে হয়। আমলারা চলেন গা-এড়িয়ে।   

পেট্রোবাংলায় এখন পরিচালক বা কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হবার মতো যোগ্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি সেক্টরের বেতন কাঠামো এমনকি বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে অনেক কম থাকায় যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার কিছুদিন পর চলে যাচ্ছে। দুর্নীতি আর অদক্ষতা আচ্ছন্ন পেট্রোবাংলা কার্যক্রম ধ্বংসের মুখে। কিছু আমলা, ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

সরকার মানসম্মত বিদ্যুৎ জ্বালানি সুলভ মূল্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করতে পারছে না। অথচ ক্রমাগত মূল্য বাড়িয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা নিজস্ব জ্বালানি উত্তোলনের তাগাদা দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কেউ শুনছে না কারো কথা। বিদ্যমান অবস্থা বজায় থাকলে ২০২৩-২৫ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারুণভাবে ব্যাহত হবে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বপ্ন হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। আশা করি সচেতন মহলের আহ্বান শুনবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)