নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিস্তারে সমস্যা


সালেক সুফি , আপডেট করা হয়েছে : 08-02-2023

নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিস্তারে সমস্যা

সারা বিশ্ব যখন গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ফসিল ফুয়েল থেকে সরে আসছিলো, তখনি অতিমারী করোনার অভিঘাত এবং ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে থমকে গাছে অনেক দেশের কার্যক্রম। জ্বালানি সংকটে জর্জরিত পশ্চিম ইউরোপ আবারো ফিরেছে কয়লার দিকে। ট্রানজিশন ফুয়েল হিসেবে বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্যাস। এলএনজি ব্যবহার। বাংলাদেশ না পেরেছে নিজেদের কয়লা সম্পদ ব্যবহারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে, না করেছে জলে-স্থলে নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্যাসসম্পদ আহরণ করতে। সৌরবিদ্যুৎসহ রিনিউঅ্যাবল জ্বালানি বিস্তারে পলিসি থাকলেও ইডকল বা স্রেডা উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। 

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ক্ষুদ্র আয়তনের দেশে বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে রিনিউঅ্যাবল এনার্জি বিস্তার অনেক চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মতো উদ্যোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়কের ভূমিকায় ইডকল বা স্রেডা  সফল হয়েছে বলা যাবে না। বাস্তব অবস্থার বিবেচনায় সাফল্য নিতান্তই সীমিত। অথচ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়ে রুফ টপ সোলার, সোলার ইরিগেশন, সড়ক বাতি, ফ্লোটিং সোলার দিয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যেতো। ফসিল ফুয়েল লবির পৃষ্ঠপোষক একধরনের তথাকথিত বিশেষজ্ঞের প্রভাবে সরকার কঠিন জেনেও বেঠিক পথে হাঁটছে। সরকার প্রধান স্বয়ং উৎসাহী থাকলেও কাজের কাজটি হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে বিল্ডিংয়ের ছাদে স্থাপিত নিম্নমানের সোলার প্যানেল অকেজো হয়ে থাকতে দেখেছি। এখানে চরম দুর্নীতি বিদ্যমান। অনেকটাই কাজীর গরু কেতাবে থাকার মতো এসব ঘটনা। এগুলো সোলার নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অথচ সরকারি নিয়মানুসারে ওই ছাদের সোলার থেকে ভবনসমূহে বিদ্যুৎ যোগ হওয়ার কথা। এতে করে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যাবার কথা। কিন্তু শুধু প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয় সোলার। যার পরীক্ষানিরীক্ষার দায়িত্বে থাকারা অর্থের বিনিময়ে অকেজোটাকে কার্যকর বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। 

আমি আমার বুয়েট সহপাঠীর (বাংলাদেশের অন্যতম সেরা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উদ্যোক্তা) কোম্পানির উপদেষ্টা হয়ে রুফ টপ সোলার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছি। আমি মনে করি, নেট মেটরিঙের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানার ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বসানোর সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা (ব্যাংক ঋণ, শুল্ক সুবিধাসহ অন্যান্য ফিসকাল সুবিধা) দেয়া জরুরি। ইডকল শুনেছি সেচ কাজে সহায়তা প্রদান করে। প্রশ্ন, তাহলে কেন সেচ কাজে সোলার বিদ্যুৎ এখনো আরো বিশাল ভূমিকা রাখছে না? কেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে ফ্লোটিং সোলার করার উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে না? তাহলে কি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে? 

অনেকে বলেন, বাংলাদেশে নাকি সোলার বিদ্যুতের সম্ভাবনা সীমিত। কি বৈজ্ঞানিক গবেষণা আছে এর সমর্থনে? বাংলাদেশে স্বাভাবিকভাবে গড়ে তিন-চার  ঘণ্টা সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। আধুনিক ব্যবস্থায় ব্যাটারি সংযোজন করা হলে ৬-৭ ঘণ্টা পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব। তবে সৌরবিদ্যুৎ গ্রিড সংযোগের ক্ষেত্রে বেস লাউডের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সেই কাজগুলো করতে হলে গ্রিড অপারেটরদের আরো স্মার্ট হয়ে স্মার্ট গ্রিডের সংস্থান করা জরুরি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসলে বিষয়টি সহায়ক হবে।

পটুয়াখালীর চর মোন্তাজে সরেজমিন পরিদর্শনে যেয়ে দেখেছি, ১৯৯৯ সালে বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত সোলার প্যানেল। শুনেছি, একই কোম্পানি বাংলাদেশে প্রথম মিনি গ্রিড করেছিল সন্দ্বীপে। সরকার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা দিলে উদ্যোগী প্রাইভেট সেক্টর সৌরবিদ্যুতে বিপ্লব ঘটাতে পারবে।

তবে সব শেষে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি পূর্ণ দেশে কখনো চাহিদার ২০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য কস্ট থেকে আসবে না। সেই ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করতেই হবে। আর নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সহায়ক একটি শক্তিশালী সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেই হবে। এই কাজটি সম্পাদনে স্রেডা বা ইডকল এমন কোনো আহামরি সাফল্য দেখাতে পারছে না। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)