মেয়র আনিস যদি জীবিত যদি থাকতেন


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 22-02-2023

মেয়র আনিস যদি জীবিত যদি থাকতেন

আপনি যদি এখানে থাকেন তাহলে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। একারণেই ব্যবাসায়িরা লেকশোর হোটেলের দোতলাতে উঠছেন না। এটা কি কষ্টকর ব্যাপার দেখেন? এই আনিস জীবিত যদি থাকতেন? তাহলে আমাকে ছেড়ে যেতোও না হয়তো (কিছুটা আবেগ প্রবণ হয়ে)। ..

এ কথাগুলো বলেছেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে গিয়ে তিনি একটি ঘটনার বিবরণ তুলে ধরতে গিয়ে আবেক প্রবণ হয়ে একথা বলেন। তার জীবনের ঘটে যাওয়া এই ঘটনার তুলে ধরেছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের কাছে। 

মাহমুদুর রহমান মান্না রাজনীতিবিদ। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। ১৯৬৮ সালে তিনি ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হন। ১৯৭২ সালে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৬ সালে জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হন। ১৯৭৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক এবং এর পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা তিনি। 

মাহমুদুর রহমান মান্না তার জীবনের একটি ঘটনা বলতে গিয়ে বলেন ঠিক এভাবে। আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক আমরা চিটাগাং ইউনিভার্সিতে একসঙ্গে পড়তাম। আর আমি তো একসময়ে গার্মেন্টসের ব্যবসা করতাম। আমার সঙ্গে আনিসুল হকের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। রাত দুইটি আড়াইটার সময় আমরা একজন আরেকজনের বাসায় একটা ফোন করেই চলে যেতাম। কখনো সারারাত আড্ডা দিয়ে সকালেই বাসা থেকে বের হতাম..এই আর কি। 

সে-ও সেরকমই ছিল। আমি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমএ’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এই বিজিএমএ থেকে আনিসুল হক সভাপতিও হয়েছিলেন। আমি সেই নির্বাচনের প্রধান পরিচালক ছিলাম। আনিসুল হক ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি অংশ নিতে যাই। এটা আয়োজন করা হয় গুলশানস্থ লেকশোর হোটেলের দোতলাতে। কিন্তু স্পটে উপস্থিত হবার পর আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। 

কারণ আমি যে-ই সেই মিলাদ মাহফিলে অংশ নিতে ঢুকেছি তখন সেখানে আর কেউই প্রবেশ করছেন না। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিল গার্মেন্টসের মালিকরা। তারা কেউই লেকশোর হোটেলের দোতলাতে উঠছেনই না যেখানে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মিলাদ মাহফিলে। এমন পরিবেশ প্রথমে বুঝতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম কিছু একটা হচ্ছে এখানে...। তখন সেখানে ওই সময়ের বিজিএমএ’র সভাপতি ছিলেন উপস্থিত, যার নাম এখন আমি বলতে চাচ্ছি না। আমি উনাকে বললাম ব্যাপারটা কি? উনি আমাকে একান্তে ডেকে বললেন, আপনি এখান থেকে চলে গেলেই ভালো হয়। ‘আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে.. বললাম ঠিক আছে ভালো হলে চলেই যাবো। এরপর জানতে চাইলাম উনার কাছে...এটা কি আপনার বক্তব্য? আমি একটু দৃঢ়তার সঙ্গে উনার কাছে জানতে চাইলাম- আমি এই প্রশ্নের উত্তর না পেলে যাবো কেন? কারণ না বললে আমি কেনই-বা যাবো? কে বলেছে আমাকে চলে যেতে, জানতে চাইলাম দৃঢ়তার সঙ্গে। এটা শুনে তখন তিনি বললেন, এখানে ব্যবসায়ীরা আছেন। আপনি যদি এখানে থাকেন তাহলে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এ কারণেই ব্যবসায়ীরা লেকশোর হোটেলের দোতলাতে উঠছেন না। এটা কি কষ্টকর ব্যাপার দেখেন? এই আনিস অইদিন যদি জীবিত থাকতেন? তাহলে আমাকে ছেড়ে যেতোও না হয়তো (কিছুটা আবেগ প্রবণ হয়ে)। ..এ ধরনের ঘটনা আমি আমি অনেক দেখেছি বলা চলে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছি এসরকারের আমলে। জেলে ছিলাম সেখানেও এই অবস্থা। জেলখানায় আমার সঙ্গে কথাও বললেও যদি কারো কোনো ক্ষতি হয়..এরকম একটা অবস্থায় আমাকে থাকতে হয়েছে। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)