সরকার আবারো পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে- মির্জা ফখরুল


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 06-03-2023

সরকার আবারো পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে- মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের আগে বিএনপিকে মাঠ শূণ্য করতে সরকার আবার ‘পুরনো খেলা’ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ সরকার আবারো পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। মিথ্যা-গায়েবী মামলা গ্রেফতার, ঘরে ঘরে তল্লাশী এবং হয়রানি করে নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার দেশকে বিএনপি শূণ্য করতে এখন বেপরোয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রজেক্ট। নির্বাচনের পূর্বে তারা বিএনপিকে একেবারে মাঠ শূণ্য, মাঠ থেকে বের করে দিতে চায়। এবার এটা সম্ভব হবে না, এবার জনগন রাস্তায় নেমে গেছে, বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায় যাবে এবং নিসন্দেহে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজয় বরণ করতে হবে।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যাদেরকে ওরা গ্রেফতার করছে তারা যখন আদালত থেকে জামিন পাচ্ছে তখন আরেক নতুন মামলা দিচ্ছে।এখানে আমাদের এরকম ভিক্টিম আছেন কামারুজ্জামান রতন সাহেব। তাকে এভাবে তিনমাস কারাগারে আটক করে রেখেছিল। আমাদের মীর সরাফত আলী সপু যিনি আদালত থেকে জামিন পেয়ে বেরুবেন তখন আবার আরেকটি মামলায় জেলগেইট থেকে গ্রেফতার দেখিয়ে আটকিয়ে রেখেছে। এরা তাদের পুরনো খেলা। এখানে আবার কিছু বানিজ্যের ব্যাপার আছে। আবার পয়সা কড়ি দিলে  সেগুলো অনেক সময় ৃ। অর্থাত গোটা সিষ্টেমটাকে একটা নিবর্তনমূলক সিষ্টেম, নির্যাতনমূলক সিষ্টেম এবং এটা একটা পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছে।”


অতীতের মতো নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের আবার গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা সেই আশঙ্কাটাই করছি। দেখেন পঞ্চগড়ের ঘটনা। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এই ঘটনা ঘটিয়ে আবার একইভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির লোকজনকে আসামী করা হচ্ছে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করছে, বাড়ি বাড়ি রেট করছে।”


বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে অমানবিক নির্যাতনে দিনযাপনের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।


রিজভী- সরকারের প্রতিহিংসা শিকার


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ মিথ্যা ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কেরানীগঞ্জ কারাগারে রুহুল কবির রিজভী ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং তার সুচিকিতসা প্রদানে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমি গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা ও হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময়ে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। তাকে লাঠির ওপর ভর করে চলতে জয়। এমন পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘ পথ প্রিজন ভ্যানে তাকে আনা-নেয়া করা হচ্ছে। এইসব প্রিজন ভ্যানে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই এমনকি কোনো কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রিজভী আহমেদকে চরম ঝঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিন আদালতে আনা নেওয়া করানো হয়। যেকোনো বন্দিকে আদালতে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান ও জেল কোড বিধির বিধান মতে আরামদায়ক পদ্ধতিতে বিধান থাকার কথা থাকলেও কারাকর্তৃপক্ষ আইন অমান্য করে যাচ্ছেন যা চরম অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। শাসকগোষ্ঠির ইচ্ছারই প্রতিফলন এটি।”


কারাগারে বন্দি দলের স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যুব দলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সহসভাপতি ইউসুফ বিন জলিল কালু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, ভাটেরা থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলী, গুলশান থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহজাহানসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারাগারে নির্যাতনের শিকার উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ বিরোধী নেতা-কর্মীদের নির্মূল ও পর্যুদস্ত করতে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। কারাগারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।” রিজভীসহ আটক নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি।


‘কারা নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন ফখরুল’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাকে এবং মির্জা আব্বাস সাহেবকে যখন জেলে নিয়ে গেলো সেই জেলে নেওয়ার পরে দুই ঘন্টা আমাদেরকে অফিসে বসিয়ে রেখেছে। অফিসে বসিয়ে রাখার কারণটা হচ্ছে যে, তারা আমাদেরকে কোয়ারেনটাইনের নাম করে একটা কনডেম সেলে দেবে। ওইটা ছিলো একটা এয়ারমার্ক করা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের সেল। আপনারা জানেন, সেই সেলের মধ্যে কোনো বিছানা থাকে না, খাট থাকে না। আপনার ফ্লোরে থাকতে হয়। ৭ বাই ৮ ফিট সেলের মধ্যেই বুক পর্যন্ত একটা দেয়াল দিয়ে একটা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে সেখানে শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান প্যানের ফ্লাস আছে, বেসিন পর্যন্ত নেই। আমাদেরকে তো  একেকজনকে একটা সেল দিয়েছে। আরো যারা ছিলেন একটা সেলে ৭/৮জন করে  রেেেখ্ছ। অমানবিক, চরম অমানবিক। যেখানে আমরা ডিভিশন এনটাইটেল সেখানে প্রথমেই তারা জোর করে আমাদেরকে ওখানে(ফাঁসির সেলে) নিয়ে গেছে। চারদিন সেখানে রেখেছে। অথচ জামিনের যে আদেশ হয়েছিলো সেই আদেশে আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, আমাদেরকে কারাবিধি অনুযায়ী ট্রিট করা হয়। কারাবিধিতে উই আর এনটাইটেল টু ডিভিশন প্রথম থেকে। সেটা তারা করেনি।”


তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের সঙ্গে যারা সাড়ে ৪শ জন। তাদের বোধ হয় ১০/১২ দিন একটা ঘরের মধ্যে ৭/৮ করে ঢুকিয়ে রেখেছে। একটা ছিলো শাপলা বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংয়ের মধ্যে তাদেরকে ১০দিন ওই বিল্ডিংয়ের বাইরে বেরুতে দেয়নি, তিনদিন সেলের বাইরে বেরুতে দেয়নি। সেখানে বলা হয়েছে জেলারকে যে, জেল কাকে বলে আমাদেরকে শিখিয়ে দাও। এই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে সেখানে। চরম একটা নির্যাতন-নিপীড়ন, মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।”


গত ৮ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গোয়েন্দা পুলিশ গভীর রাতে গ্রেফতার করে তাদের বাসা থেকে। কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে এক মাস কারাবাস করেন। পরে সর্বোচ্চ আদালতের জামিনে তারা মুক্ত হন।


গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা কর্মসূচিতে কুমিল্লা, ঝালকাঠি, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, নীলফামারী, রাজশাহী, সিরাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের-গ্রেফতার এবং বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।


সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা জহিরউদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ ও সাঈদ সারোয়ার উপস্থিত ছিলেন।



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)