ক্রিকেটে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা


খন্দকার সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 20-04-2022

ক্রিকেটে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বড় অর্জন ওয়ানডে সিরিজে তাদের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো। প্রোটিয়া গুনাক্ষরেও সেটা বুঝতে পেরেছিল কি-না কে জানে? যেমন বাংলাদেশ দল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে স্পিনে উড়ে যাবে সেটাও কেউ কল্পনা করেনি। আসন্ন সিরিজে কী করতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেশ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন খন্দকার সালেক সুফি।

‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ বিপর্যয়ের দুঃস্বপ্ন ভুলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সহসাই ঘুরে দাঁড়াতে হবে। প্রফেশনাল ক্রিকেটারদের পেছনের দুঃস্বপ্ন মনে রাখতে নেই। আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে আসা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নতুন প্রত্যয়ে দাঁড়াতেই হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দক্ষিণ আফ্রিকা তুখোড় দল। ওদের দেশে ওদের পরিচিত পরিবেশে বাংলাদেশ কেন যে কোনো বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য লড়াই করে সম্মান রক্ষাই দুরূহ। কিন্তু অনেক প্রতীক্ষার অবসানে জানুয়ারি ২০২২ নিউজিল্যান্ডের দুর্গম দুর্গে ভালো খেলে টেস্ট জয় এবং সদ্য সমাপ্ত সফরে তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে পূর্ণশক্তির স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ২-১ জয় থেকে অনেকেই ভেবেছিলো টেস্ট সিরিজে ভালো করবে। 

তদুপরি ৮ জন প্রথম চয়েস খেলোয়াড়কে আইপিএল ২০২২ খেলার জন্য ছেড়ে দেয়া খর্ব শক্তির দলের বিরুদ্ধে অন্তত লড়াই করা প্রত্যাশিত ছিল। কেন হলো না সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ আদৌ হবে কিনা জানি না। তবে সিরিজের জোট সামান্য প্রাপ্তি পুঁজি করে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া  যে কোনো বিকল্প নেই। 

সংক্ষিপ্ত পরিসরে বলবো, যে কোনো বিবেচনায় যে কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দল পর পর দুটি ম্যাচে স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার দল নয়। দলের শারীরিক ভাষায়ও আতঙ্ক ছিল, অস্থিরতা ছিল, সংগ্রাম করার প্রত্যয় ছিল না। অথচ দেশ ছাড়ার আগে টেস্ট স্কোয়াডের অনেক খেলোয়াড় দেশের সবচেয়ে বেশি বাউন্সি উইকেটে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছিলেন। বেশ কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছে টেস্ট দলের অনেকেই গ্যারি কার্স্টেন একাডেমিতে অনুশীলন করলো। মনে হয়, টেস্ট ভেন্যু ডারবানের কিংসমিড মাঠ এবং পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জেস পার্ক নিয়ে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করা হয়নি। সেটাই বা বলি কি করে, দলের কোচিং স্টাফে যখন স্থানীয় হেড কোচ এবং বোলিং কোচ ছিল। খেলার কৌশল থেকে মনে হয়েছে বাংলাদেশ অনুমান করেছিল উইকেটগুলো পেস সহায়ক এবং বাউন্সি হবে। কিন্তু পেস বা বাউন্স বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করেনি। বাংলাদেশ নাস্তানাবুদ হয়েছে স্পিন বোলিংয়ে। যেটি খেলে বাংলাদেশ সিদ্ধহস্ত বলেই জানে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু যেভাবে ধসে গেছে বাংলাদেশ তা দেখে মনে করার কারণ আছেই, সারারাত গরুর রচনা পড়ে, সকালে নদীর রচনা প্রশ্ন দেখে ভড়কে গেছে বাংলাদেশ। 

তবুও কিছু অর্জন ছিল ঝরা পালকের ধ্বংসস্তূপে। নবীন মাহমুদুল হাসান জয় প্রথম টেস্টে ১৩৭ রানের একটি হানিফ মোহাম্মদ ঢঙের ইনিংস খেলেছিল। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে বাংলাদেশের চার বোলার চমৎকার বোলিং করেছিল। যদি প্রথম টেস্টে দোলে তাইজুলকে অবহেলা করা না হতো, তাহলে ভিন্ন কিছু হতেও পারতো। আমি পরাজয়ের জন্য খেলোয়াড়দের দক্ষতার সীমাবদ্ধতা, প্রয়োগ শক্তির অভাবের পাশাপাশি দলের ভুল কৌশল, একাদশ নির্বাচনে মারাত্মক ভুলকেও সমানভাবে দায়ী করবো। সিনিয়র খেলোয়াড় তামিম, মুশফিক, মোমিনুল দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারেনি। 

যা কিছু হয়েছে সেগুলো ভুলে এখন নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে হবে। অনেকেই মমিনুলকে অধিনায়ক হিসেবে দেখতে চাইছেন না। মনে হয় না মমিনুলকে আসন্ন সিরিজে ছেটে ফেলা ভালো হবে। যদিও দলকে অনুপ্রাণিত করার মতো কিছু করতে পারেনি। নিজে ভালো খেলেও দলকে উৎসাহিত করতে পারেনি। সফরে দলের সঙ্গে বিসিবির কয়েকজন হাই প্রোফাইল কর্মকর্তা ছিলেন। জানি না, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হয়েছিল কিনা। আমি অন্তত চলতি সিরিজে মমিনুলকে রাখার পক্ষপাতী। সে এখনো দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। দেশের মাটিতে ওর ঈর্ষণীয় ব্যাটিং রেকর্ড আছে। ওকে সরিয়ে দিলে ওর বাটিংয়ের ওপর অশুভ প্রভাব পড়তে পারে। বিকল্প হতো সাকিব  আল হাসান।  কিন্তু টেস্ট খেলতে অনীহা থাকা কাউকে অনুরোধে ঢেঁকি গেলানো ঠিক হবে না। মুশফিক আর কখনো কোনো ফরম্যাটে অধিনায়ক হবে না বলেই জানি। তামিমকেও ওডিআই নেতৃত্ব নিয়েই মনোযোগ দিতে হবে।  অবশ্য দীর্ঘসময়ের বিকল্প হিসেবে মেহেদী মেরাজ এবং নাজমুল শান্তকে ভাবা যেতে পারে।

দেশে চলছে স্থানীয় লিগ। সেখানে অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয় (৭৩ গড়ে ৭৩৮ রান) এবং নাইমুল ইসলাম (৮৩ গড়ে ৭৫৯ রান) করে শীর্ষে আছে। টেস্ট সিরিজটি যেহেতু দেশের মাটিতে এবং বাংলাদেশ বাটিংয়ে টেস্ট মেজাজের অভাব আছে। ওদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। এর পাশাপাশি শাহাদাত (৪৪.৩৩ গড়ে ৩৯৯) এবং আকবর  আলী (৪৪.২৫ গড়ে ৩৫৪ রান) করে নিজেদের প্রস্তুতির জানান দিয়েছে। ওদের এইচপি এবং এ দোলে ঝালাই করতে হবে। 

আমি মনে করি তামিম, জয়, শান্ত, মমিনুল, মুশফিক ঘুরে দাঁড়াবে। অন্তত মমিনুলকে এবং মুশফিকের জন্য অ্যাসিড টেস্ট।  ব্যর্থ হলে ওদের নিজেদের পথ বেঁচে নিতে হবে। জানিনা সাকিব খেলবে কিনা। যদি সাকিব থাকে তাহলে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে ফেভারিট হিসেবেই শুরু করবে। লিটন, মেহেদী মিরাজ আর ইয়াসির দলীয় স্থান নিশ্চিত করে ফেলেছে। উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা ব্যার্থ হলে ওদের ব্যাটিং অর্ডার প্রমোশন বিবেচনা করতে হবে। 

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে স্পিনিং উইকেট করলে বিপদ হতে পারে। বরং তাসকিন, শরিফুল, খালেদ, এবদতে উন্নতি বিবেচনা করে সবুজ ঘাসের স্পোর্টিং উইকেট রাখা কাজে দিবে। যদি সাইফুদ্দিন ম্যাচ ফিট থাকে ওকে বিবেচনা করা যেতে পারে। সাকিব থাকুক বা নাই বা থাকুক বাংলাদেশ যেন ৫ জন বোলার নিয়েই খেলে। 

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শোচনীয় টেস্ট বিপর্যয় সত্ত্বেও আমি মনে করি সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক দল নির্বাচন করা হলে এবং মাঠের বাইরে থেকে দিক নির্দেশনা সীমিত করা হলে বাংলাদেশ সিরিজ জয় না করার কোনো কারণ নেই। 



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)