জোবাইদায় ভীতি কীসে?


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 20-04-2022

জোবাইদায় ভীতি কীসে?

বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই নানা ঘটনা-রটনা বিদ্যমান। এরই মধ্যে একটি ঘটনা বেশ তোলপাড় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে ও  দেশি- আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি, নিছক গৃহবধূকে নিয়ে ওই তোলপাড়। জোবাইদা রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী। দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশে নেই। আবাসস্থল যুক্তরাজ্যে। এরপরও তার ব্যাপারে দুদক এতটা সোচ্চার হলো বোধগম্য নয়। ২০০৭ সনে তার ও তার মা রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের স্ত্রী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যগোপন করে জ্ঞাতবহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে একটা মামলা দায়ের করেছিল মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সেই মামলা ২০২২ এ এসে আবার পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করে হাইকোর্ট। 

অর্থাৎ দুদকের ওই মামলাটি খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছিলেন জোবাইদা রহমান। এটা মোটামুটি চাপা পড়ে ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ গত বুধবার তা খারিজ করে দিয়েছে। আদালতে জোবাইদার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। পরে তিনি বলেন, আপিল বিভাগ লিভ টু আপিলের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে। এখন এ মামলার কার্যক্রম চালিয়ে নিতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকলো না।

উল্লেখ্য, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে মোট চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় এ মামলা দায়ের করেছিল দুদক। মূলত মামলায় তারেক রহমানকে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় জোবাইদা ও তার মায়ের বিরুদ্ধে। সেখানে আরো বলা হয়, তারেক তার স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দুটি এফডিআর করে দেন। এভাবে জোবাইদা তার স্বামীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন। 

২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এরপর জোবাইদা রহমানের মামলা বাতিলের আবেদনে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয়।

ওই রুল শুনানির জন্য ২০১৬ সালে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে তোলা হলে, প্রধান বিচারপতি মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেব নাথের হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান। সেখানে রুল শুনানির পর আদালত ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। পরে ওই বছরের ১২ এপ্রিল মামলাটির বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেয় হাইকোর্ট। তাতে মামলা চলার বাধা কাটে। আট সপ্তাহের মধ্যে জোবাইদা রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশও দেয়া হয় রায়ে। 

সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়েই আবেদন করেছিলেন জোবাইদা রহমান, যার ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ৮ এপ্রিল আদেশের দিন রেখেছিল আপিল বিভাগ। কিন্তু মহামারীর মধ্যে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেলে সেই আদেশ আর হয়নি। 

এক বছর পর বিষয়টি আবার আদালতে উঠলে গত ৭ এপ্রিল এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ বুধবার আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দিলো। 

এদিকে বিভিন্ন মহল থেকে এ মামলার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, জিয়া পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কোনো ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তিনি  মনে করেন, তারেক রহমানের স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমান লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়া আদেশ ফরমায়েশি। একইসঙ্গে ডা. জোবায়দা রহমানের লিভ টু আপিল আবেদন আপিল বিভাগ বিভাগীয় খারিজ হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডাক্তার জোবায়দা একজন অরাজনৈতিক চিকিৎসক। 

তাকে দুদকের এই মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। কোনো ভিত্তি না থাকলেও শুধুমাত্র জিয়া পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে যে আদেশ দেয়া হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে এই ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মূল করার হীনউদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এ কীভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। 

তবে একটি সূত্র বলছে, বর্তমান সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো মুহূর্তে মাঠের আন্দোলনে নামবে বিএনপি। কিন্তু সেখানে অনুপুস্থিত জিয়া পরিবারের কোনো সদস্য। দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোবাইদা রহমানকে চেয়ে আসছেন অনেক শীর্ষনেতা। কিন্তু জোবাইদা তাতে সায় দেয়নি। তবে দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে জোবাইদার উপস্থিতি বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন ভিন্ন একমাত্রায় চলে যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ বিষয়টা আলোচনাধীন। অবস্থা আঁচ করেই জোবাইদার বিরুদ্ধে মামলা সচলের উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। মির্জা ফখরুল তার এক বক্তব্যে বলেছেনও, সরকার জোবাইদাকে দেশে আসতে দিতে চাচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে। বিএনপি বিভিন্নভাবে ঘর গুছিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে একদফা আন্দোলনের লক্ষ্যে। 

এমনি মুহূর্তে তারেক রহমান বা খালেদা জিয়াকে বড্ড প্রয়োজন হলেও আইনের ম্যারপ্যাঁচে তারা উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এ মুহূর্তে জোবাইদা ছাড়া জিয়া পরিবারের যোগ্য আর কেউ নেইও। ফলে তার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেটাও এমন মামলা পরিচালনায় সে সম্ভাবনা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এটাও ঠিক দেশে বহু দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ থাকলেও তারা সহজেই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। হলমার্কই তার বড় প্রমাণ। সেখানে সে তুলনায় জোবাইদার বিরুদ্ধে যে অর্থের কথা দুদকে সেটা নিছক কম। তবু আইন সবার জন্যই সমান এবং সরকারকে যথার্থ তথ্য না দিয়ে গোপন করলে, আর তার তথ্য উপাত্ত থাকলে যে কারোর বিরুদ্ধেই মামলা করতে পারে দুদক। কিন্তু এ কার্যক্রমটা সবার বেলায় প্রজোয্য হলেই ভাল এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

মির্জা ফখরুলের বিবৃতি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মামলাগুলো গত ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার কার্যতালিকায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০ এপ্রিল ওই মামলার জন্য শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “২০০৭ সালে জরুরি সরকারের সময় চক্রান্তমূলকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসত্য মামলা রুজু করা হয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা ছিল তাঁকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় করার এক সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যানের অংশ।

একই পদ্ধতিতে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নামে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থগিত থাকলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তাঁর সহধর্মিনী প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা এখনো সচল রাখা হয়েছে। সরকারের এহেন ষড়যন্ত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ।

হঠাৎ করে ১৯ এপ্রিল মামলাগুলো তালিকায় নিয়ে এসে ২০ এপ্রিল শুনানীর দিন ধার্য করা, সমগ্র প্রক্রিয়াটাই দুরভিসন্ধিমূলক, অশুভ নীল নকশা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়া।

গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যায় সারা বিশ^ যখন সোচ্চার, গণতন্ত্রহীনতায় সারা জাতি যখন বাকরুদ্ধ, আবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের যখন নাভিশ^াস উঠেছে, অর্থ পাচার করে বিদেশে লুন্ঠনের অঢেল সম্পদ গড়ে ওঠার সংবাদ যখন মানুষের মুখে মুখে, তখন তারেক রহমান ও ডাঃ জোবাইদা রহমানর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার কার্যক্রম চালু রাখা অবৈধ সরকারের টিকে থাকার জন্য মরণ কামড়। 

সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে সরকার আশংকা ও ভীতি থেকেই মামলা সচল করেছে। ক্ষমতাসীনরা দৃশ্যমান লুটপাটে জড়িত থাকলেও এ নিয়ে আইন-প্রশাসন ও দুদকের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গই সরকারের আজ্ঞাবাহী। তবে চক্রান্তজাল যতই বুনে যাক না কেন তাতে সরকারের কোন লাভ হবে না। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণ অঙ্গীকারাবদ্ধ।

আকস্মিকভাবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলার যে কার্যক্রম শুরু হলো তা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)