বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেওয়া দুঃখজনক


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 26-04-2023

বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেওয়া দুঃখজনক

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার বারবার দৃষ্টিকটুভাবে ছবক দিচ্ছে। কোনো দেশের জাতীয় নির্বাচন, সেই দেশের নিতান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়। বন্ধু দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কোনো দেশে গণতন্ত্র, মানব অধিকার বিপন্ন হলে সেই দেশকে নানাভাবে সতর্ক করে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে স্বাধীন, নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্বাচন করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সরাসরি নির্বাচন নিয়ে ছবক দিচ্ছে, সেটি অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদে এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সরাসরি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নাকি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। অথচ বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানে এই ধরনের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান সরকার আপাতত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা সেই পথে যাবে না। 

শাসক দলের কয়েকজন প্রতিনিধি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বিষয়টি জানিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে সভাকালে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশ, প্রতিবেশী ভারত, চীন, জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আগ্রহ আছে। সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের গুরুত্ব এখন অপরিসীম। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন, কোরিয়া, জাপান, ভারত, রাশিয়া গভীরভাবে সম্পৃক্ত আছে। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্পৃক্ততা কম। ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। চায় যেন বাংলাদেশ চীনবিরোধী চার জাতির কোয়াড জোটে যুক্ত হোক। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে প্রতিবেশী দেশের প্রভাব থাকলেও এযাবৎ সরকার অনেকটা ভারসাম্য বজায় রাখছে। কোনো বিশেষ দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই বাংলাদেশের। স্মরণে রাখা উচিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ভারত অ্যান্ড রাশিয়া ছাড়া খুব কম দেশের সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাশে ছিল। 

২০২৩ ডিসেম্বর  বা ২০২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন। ২০১৪, ২০১৮ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে অধিকাংশ বিরোধীদল বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় অজুহাতে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি অব্যাহত রেখেছে। যে অবস্থা চলছে মনে হচ্ছে নির্বাচন বর্তমান সরকারকে বহাল রেখে নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে এবং এক পর্যায়ে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো নির্বাচনে আসবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণে নতুন সরকার নির্বাচিত হবে।   

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলো। তাহলে সরকার পরিবর্তন হবে এই গ্যারান্টি আছে কি? দেশের মানুষ বিএনপি, জাতীয় পার্টির শাসন আমল দেখেছে। তিন টার্মে বর্তমান সরকারের শাসন দেখছে। নানা সমস্যা সংকটের মধ্যেও দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ব্যাপক উন্নয়নের ফসল জনগণের দোর গোড়ায় সেভাবে পৌঁছেনি সত্য। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নের নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে তা অনস্বীকার্য। নিজেদের ভুলত্রুটি স্বীকার করে সঠিক জনঘনিষ্ঠ নেতাদের প্রার্থী করলে বর্তমান সরকারকে নির্বাচনে পরাজিত করার মতো অবস্থা বিরোধীদলের আছে বলে মনে করি না। চরম সংকটের সময়েও কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো অনেক দেশের মতো ভেঙে পড়েনি। সেই কৃতিত্বটুকু বর্তমান সরকারকে দিতেই হবে।

আশা করবো, নির্বাচন কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য করা যায় সেই বিষয়ে সরকার এবং বিরোধীদল প্রয়োজনে জাতিসংঘের আওতায় পরামর্শ করে অচিরে নির্ধারণ করবে। উন্নয়নের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে জনগণকে ভোট প্রয়োগের সুযোগ করে দিবে সরকার নির্বাচনের। নিজেদের ঘরের বিষয় নির্ধারণের জন্য বিদেশিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়া কূপম-ুকতার শামিল সেটি সরকার এবং বিরোধীদল বুঝতে না পারা সত্যি দুঃখজনক। 

বাংলাদেশের একশ্রেণির দুষ্কৃতকারী সিন্ডিকেট বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সরকারের ওপর বিদেশি শক্তির চাপ সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)