ইসি নীতিমালাতে শেকলবন্দি সাংবাদিক


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 03-05-2023

ইসি নীতিমালাতে শেকলবন্দি সাংবাদিক

নির্বাচন কমিশন গত ১২ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নীতিমালা জারি করেছে। বিভিন্ন সাংবাদিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে নীতিমালাটি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও নীতিমালাটি সংশোধন বা বাতিলের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমরা মনে করি, জারিকৃত নীতিমালাটি সাংবাদিকদের নির্বাচনি তথ্য সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। উপরন্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা না করেই এই নীতিমালা জারি করা হয়েছে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের কার্যকর অংশগ্রহণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করেছে। সাংবাদিকদের নির্বাচনি তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার লক্ষ্যে কমিশন এই নীতিমালা জারি করেছে বলে উল্লেখ করা হলেও নীতিমালার নির্দেশনাসমূহ কার্যত সাংবাদিকদের শেকলবন্দি করে ফেলবে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সভাপতি এম. হাফিজউদ্দিন খান এক বিবৃতি একথা বলেন।                                                       

বিবৃতিতে বলা হয় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মোটরসাইকেল সাংবাদিকদের অতি প্রয়োজনীয় বাহন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সাংবাদিকরা খবর সংগ্রহের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত যাতায়াত করতে পারেন। এছাড়া অনেক ভোটকেন্দ্র রয়েছে যেগুলোর অবস্থান দুর্গম এলাকায়। সেসব ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেলই একমাত্র বাহন, অন্য কোনো যানবাহনে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলের এই গুরুত্ব নির্বাচন কমিশনের জানা না থাকার কথা নয়। এমতাবস্থায়, জারিকৃত নীতিমালায় সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে কমিশন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধানে আমরা হতবাক হয়েছি। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক সাংবাদিক দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রে খবর সংগ্রহে যেতে পারবেন না- যার ফলে ওইসব এলাকার নির্বাচনের পরিস্থিতিও জনগণ জানতে পারবে না।   

ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে অনুমোদনহীন কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারেন না। তবে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক এবং তথ্য সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সাংবাদিকরা ভোটের দিনের বিভিন্ন ঘটনাবলি জনগণের সামনে তুলে ধরেন। সাংবাদিকরা ভোটকক্ষে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না, ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না- এ ধরনের বিধান জনগণের কাছে সঠিক নির্বাচনি তথ্য তুলে ধরার পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের বাধার সৃষ্টি করবে বলে আমরা মনে করি। 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে সাংবাদিকদের জন্য ১২টি নির্দেশনা সম্বলিত এমনই একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। তুলনা করলে দেখা যায়, ২০১৮ সালের নির্দেশনার তুলনায় ২০২৩ সালের নির্দেশনায় বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গত নির্বাচনের ন্যায় একইরূপ নির্দেশনা জারি করাটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারের কমিশনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করবে বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশন বার বার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।      

বিবৃতিতে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সভাপতি এম. হাফিজউদ্দিন খানের পক্ষ থেকে বলা হয় আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে জারিকৃত নীতিমালাটি অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। তারা এবং সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কমিশনের কাছে আহ্বানও জানান। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)