সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অগ্নিপরীক্ষা


খন্দকার সালেক , আপডেট করা হয়েছে : 03-05-2023

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অগ্নিপরীক্ষা

বছর শেষে ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। অংশগ্রহণকারী, স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের দাবি উঠেছে দেশ-বিদেশে সর্বত্র। প্রধান বিরোধীদলগুলো বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে আসতে অনাগ্রহী হয়ে আন্দোলন করছে নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবিতে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো সব দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অহরহ। সরকার কিন্তু পরিবর্তিত সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ঠিক এমনি অবস্থায় নির্বাচন হতে চলেছে পাঁচটি (গাজীপুর, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল) মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনগুলো সরকার বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের জন্যও অগ্নিপরীক্ষা। তফসিল অনুসারে আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তার সমমনা দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও পার্টি অ্যাকটিভিস্টরা নানাভাবে নির্বাচনে সম্পৃক্ত আছে বলে প্রতীয়মান। সরকারি দল রাজশাহী, খুলনা সিটি কাউন্সিলের বর্তমান মেয়রদের অপরিবর্তিত রাখলেও পরিবর্তন এনেছে সিলেট। বরিশাল এবং গাজীপুর সিটি কাউন্সিল মেয়র পদে। সরকারপ্রধান নানাভাবে তথ্য সংগ্রহ করেন প্রার্থীদের বিষয়ে। নানা বিবেচনা করেই তিনি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এবারের মনোনয়ন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বরিশাল এবং  কক্সবাজারের বর্তমান মেয়র পরিবর্তন নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় প্রভাবশালী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পুত্র সাদিক আবদুল্লাহকে পরিবর্তন করে তার চাচাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বরিশালে শাসক দলের স্থানীয় অঙ্গ সংগঠন। কক্সবাজারের প্রতাপশালী মেয়রকে নিয়ে পুরো মেয়াদেই আলোচনা ছিল। তাকে পরিবর্তন করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে অনেকটা দলীয় প্রধানের একক সিদ্ধান্তে। একইভাবে সিলেটে বেশ কিছু আগ্রহী প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে বেছে নেওয়া হয়েছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন দলীয় নেতাকে। এই তিন সিটিতে জয় পেতে শাসক দলকে এখন নিজেদের দলীয় ক্যাডারদের প্রথম সামাল দিতে হবে।

এদিকে গাজীপুরে সমস্যা বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীরকে নিয়ে। যদিও ঋণখেলাপি অজুহাতে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, তথাপি আপিল করে উনি ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ জাহাঙ্গীর নিজে ঋণগ্রহীতা নন। হয়েছিলেন জামিনদার। সে ঋণও পরিশোধ হয়েছে। যার ডকুমেন্টস দেখানোর পরও নির্বাচন কমিশনার আমতা আমতা করছে, যা সবার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। জাহাঙ্গীর অথবা তার মা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকলে বিরোধীদলের সমর্থনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন। ইতিমধ্যেই গাজীপুর নির্বাচনে নির্বাচনবিধি ভঙ্গের জন্য দুই জন মন্ত্রীকে  লিখিতভাবে সতর্ক  করেছে নির্বাচন কমিশন। 

রাজশাহী সিটিতে নিঃসন্দেহে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে বর্তমান মেয়রের কার্যকালে। আমি শহর পরিদর্শনকালে দেখেছি একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ শহর। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ করে সরকারি দলের ক্যাডারদের বাড়াবাড়ির কথাও শুনেছি। তবু মনে হয়েছে প্রার্থী হিসেবে লিটনের বিকল্প ছিল না। খুলনায় কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার খালেকের সময়ে যতটা কাঙ্ক্ষিত ছিল, ততটা উন্নয়ন হয়নি। তথাপি বিদ্যমান অবস্থায় খুলনায় খালেকের বিকল্প নেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়া খুলনা বরিশাল অঞ্চলের মানুষদের জন্য বিশাল আশীর্বাদ। আমি মনে করি, নিজেদের মধ্যে বিবাদ না থাকলে রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালে জয় পেতে শাসক দলের অসুবিধা হবে না। সমস্যা হতে পারে সিলেট এবং গাজীপুরে। সিলেটে গত দুই টার্ম বিএনপির মেয়র ছিলেন আরিফ। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরা খুব জনঘনিষ্ঠ না।  প্রার্থীরও খুব জনঘনিষ্ঠতা আছে বলে মনে হয় না। তবুও সরকারি দলের সব ফ্রন্ট একযোগে কাজ করলে জয় পাওয়া যাবে বলে ধারণা।

এখন দেখতে হবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার কি কৌশল গ্রহণ করে। কারণ সিটি নির্বাচনের দিকেও সজাগ দৃষ্টি থাকবে দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকদের। যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হিসাব অনুসারে সিটি নির্বাচনে কয়েকটি সিটিতে সরকারি দল হেরে গেলেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। বরং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন আয়োজন করতে পারলে উপরন্তু নির্বাচন বিষয়ে জনগণের আগ্রহ সৃষ্টি হবে। স্বচ্ছ নির্বাচন বিষয়ে দেশ-বিদেশে আস্থা সৃষ্টি হবে। কিন্তু বিরোধীদলবিহীন এমন নির্বাচনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে নিজেদের প্রার্থীর ভাগ্য জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়ার রিস্ক নেবে কি না সেটাও দেখার বিষয়। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সব মিলিয়ে সরকারকে ভবিষ্যতের হিসাব কষে লাভ-ক্ষতির চুলচেরা বিচার করা উচিত বলেও মনে হচ্ছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)