জ্যাকসন হাইটস থেকে বাংলাদেশি ছাত্রকে কিডন্যাপ


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 17-05-2023

জ্যাকসন হাইটস থেকে বাংলাদেশি ছাত্রকে কিডন্যাপ

বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে বাংলাদেশি যুবক মাজহারুল ইসলামকে কিডন্যাপের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ, মূলধারার রাজনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ এন মজুমদার দেশ পত্রিকাকে জানান, মাজহারুল ইসলামকে কিডন্যাপ করা হয়েছে জ্যাকসন হাইটস থেকে গত ১০ মে রাতে। তিনি বলেন, আমি প্রথমে বিষয়টি জানতে পারি লাকসাম সমিতির সভাপতি আব্দুল তিতুমীরের কাছ থেকে। তিনি আমাকে ফোন করে জানান যে, তার এলাকার সন্তান মাজহারুল ইসলামকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাজহারুল ইসলামের বাবা তাকে ফোন করে আরো বলেছেন, যারা কিডন্যাপ করেছে তারা মাজহারুল ইসলামের বাবার কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এন মজুমদার বলেন, বিষয়টি আমি জানার পর মাজহারুল ইসলামকে খুঁজতে থাকি। অনেক হাসপাতাল এবং পুলিশ প্রিসেক্টে কল করি। গত ১৪ মে ১১৫ প্রিসেক্ট থেকে আমাকে জানানো হয় যে, মাজহারুল ইসলামকে তারা লং আইল্যান্ডের নর্থ সোর হাসপাতালে পেয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে এন মজুমদার বলেন, মাজহারুল ইসলাম ৭০৩৪ ব্রডওয়ে, অ্যাপার্টমেন্ট-এফএল-১, জ্যাকসন হাইটস, এনওয়াই ১১৩৭২-এ রুমমেট নিয়ে থাকতেন। এন মজুমদার জানান, আমি জানতে পারি ঘটনার দিনে রাতে তার কয়েকজন পরিচিত বাঙালি ছেলে তাকে অফার দেন একজন মহিলাকে নিয়ে তার বাসায় যাবে এবং তারা তার বাসায় যান। বাসায় যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তাদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। এক পর্যায়ে ঐ কয়েকজন ছেলে অনেকটা জোর করে মাজহারুল ইসলামকে লং আইল্যান্ডের একটি বাড়িতে নিয়ে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখে। সেখানে তাকে বেদম মারধর করে। মারধরের কারণে তার শরীরের কয়েকটি অঙ্গ ভেঙে যায়। মারধর করার সময় যারা কিডন্যাপ করে, তারা মাজহারুল ইসলামের বাবাকে ফোন করে। মাজহারুল ইসলামের বাবা তখন লাকসামে। ফোন করে কিডন্যাপকারীরা তার বাবাকে অকথ্য খারাপ গালাগাল করে এবং মাজহারুল ইসলামকে মারতে মারতে বলে- ২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য। সিলেটে কোথায় সেই টাকা দেওয়া হবে তা-ও বলে দেয়। এক ভিডিও বার্তায় তাদের কথা শোনা যায়। মাজহারুলের বাবাই এই ভিডিওটি করে পাঠিয়ে দেন। মাজহারুল ইসলাম ঐ বাড়িতে তিন দিন বন্দি ছিলেন, তিন দিনই রাতে তার ওপর অত্যাচার করা হয়। এক পর্যায়ে সুযোগ পেয়ে মাজহারুল ইসলাম ৯১১-এ কল করলে কিডন্যাপকারীরা পালিয়ে যায়। এ সুযোগে মাজহারুল ইসলাম ঐ বাড়ির জানালা ভেঙে বেরিয়ে এসে লং আইল্যান্ডের নর্থ সোর হাসপাতালে যান। এক প্রশ্নের জবাবে এন মজুমদার আরো জানান, ইতিমধ্যেই মাজহারুল ইসলাম পুলিশ কল করেছেন এবং ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তবে এন মজুমদার জানাতে পারেননি, কাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানের মাজহারুল ইসলামের চিকিৎসা করা হচ্ছে। একটু সুস্থ হলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এদিকে মাজহারুল ইসলাম প্রায় এক বছর আগে স্টুডেন্ট ভিসায় আমেরিকায় এসেছিলেন। আমেরিকায় এসে লেখাপড়ার পাশাপাশি জ্যাকসন হাইটসের কাবাব কিং রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। কাবাব কিং-এর একজন মালিক জানান, মাজহারুল ইসলাম আমাদের স্টোরে কাজ করেছিল। এক সময় দেখা গেল সে মাতাল হয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে। তিনি বলেন, এক পর্র্যায়ে মাজহারুল ইসলাম নিজে থেকেই কাজ ছেড়ে চলে যান। আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, মাজহারুল ইসলাম মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। গত ২০ এপ্রিল চাঁদরাতে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটে মাতাল হয়ে মারামারির কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার মামলা রয়েছে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে। তার মামলার নম্বর সিআর-০১১২৮৬-২৩ কিউএন। মামলার কাগজে দেখা যায়, তার জন্ম সাল ২০০০। অর্থাৎ তার বয়স ২৩ বছর। তার মামলার পরবর্তী শুনানি ৩০ জুন সকাল ৯টায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অন্যজনকে হ্যারেসমেন্ট এবং শারীরিক আঘাত।

এন মজুমদার বলেন, আমাদের কমিউনিটির অভিভাবকদের সন্তানদের বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আমাদের যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমেরিকার মতো আইনের এবং উন্নত দেশে বাঙালিরা কীভাবে বাঙালিদের কিডক্যাপ করতে পারে? এই বাংলাদেশের বেলায় শুনেছি, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশে শুনেছি। কিন্তু আমেরিকায়! মধ্যপ্রাচ্যে দালালরা বাংলাদেশিদের নিয়ে গিয়ে কোথাও বন্দি করে মারতে থাকে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু আমেরিকার মতো জায়গায় এটা কীভাবে সম্ভব? তিনি আরো বলেন, মাজহারুল ইসলামের সন্ধানে অনেকের সহযোগিতা চেয়েছি, কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে আসতে চাইলেন না। সোজাকথা তারা কোনো সমস্যায় পড়তে চান না। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তাহলে আমাদের এতো সংগঠন এবং নেতার দরকার কী?


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)