দুপুর দুইটায় ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। বেলুন উড়ান ৬৬ প্রেসিঙ্কট এর কমান্ডিং অফিস ক্যাপ্টেন ডগলাস মুডি। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মাইমোনাইডিস হসপিটালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডগলাস, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, লুৎফুল করিম, আলী ইমাম সিকদার, কাজী নয়ন, গোলাম মাহমুদ, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, নুরুল আনোয়ার বেঙ্গল, ইকবাল হায়দার, বখতিয়ার উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, সালেহ আহমেদ মানিক, প্রফেসর আজাদ, দুলাল মিয়া, বাদল মির্জা, আশরাফুল হাসান, গোলাম কিবরিয়া, সোহাগ প্রমুখ।
মানবসেবায় প্রেসিডেন্টের আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদক প্রাপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশিরা তাদের নিজস্ব শক্তি, চেতনা আর ভালোবাসা নিয়ে এই আমেরিকায় অসামান্য সাফল্যের দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছেন। মূলধারার রাজনীতি থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই তারা ইতিবাচকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ঢেউ তুলছি। এই ঢেউ অন্য জাতিগোষ্ঠির জন্য অনুকরণীয়। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমাদের মধ্যকার এই ঢেউ ভালোবাসার, এই ঢেউ আমাদের ঐক্যবদ্ধতার। এটি শুধু বাঙালি জাতির জন্য নয়। আমেরিকান বাংলাদেশিদের জন্য গৌরবের একটি মাইলফলক আমরা তৈরি করছি। আমরা সব জাতির মাঝে জানাচ্ছি আমরাই একটি শক্তি। আমরাই সারা পৃথিবীর নেতৃত্বের অংশীদার। আবু জাফর মাহমুদ তার হোম কেয়ার অভিযানের সূচনাক্ষেত্র ব্রুকলিনের এই বিশাল মেলায় উল্লেখ করেন, কেয়ারের কাজ করতে গিয়ে এখানে ভালোবাসার কাজ করছি। আমরা আমাদের পরিবার থেকে যে ভালোবাসা দেখে এসেছি, তাই আমরা আমেরিকান সমাজে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যখন বাংলাদেশি আমেরিকান তখন আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সত্তা, আমাদের স্বকীয়তা এগুলো বাদ দিয়ে আমরা আমেরিকান হইনি। অন্যরা যেমন একা হতে হতে পিতৃ পরিচয়ও হারিয়ে ফেলছে ওই সমাজ আমাদের নয়। আমরা ভালোবাসার সরোবরে সাঁতার দিতে, ভালোবাসার মধ্যে থাকতেই জন্ম নিয়েছি। তিনি তার নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের মানুষের জন্য আমরা ‘কাচারি ঘর’ করেছি। এই ‘কাঁচারি ঘর’ শুধু বাংলাদেশে আছে, অন্য কোথাও নেই। এখানে যেমন ৫৪৪ ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে কাঁচারিঘর করেছি, একইভাবে কাঁচারিঘর করেছি ১১২৭ লিবার্টি এভিনিউ ওজোন পার্কে, আরো দুটি কাঁচারিঘর নেয়া হয়েছে ১৪৭-১৪ হিল সাইড এভিনিউ, জ্যামাইকা ও ১৯৮-১২ হিলসাইড এভিনিউ হলিসে। এগুলো করা হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য আমেরিকানদের মাঝে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি। আমরা কাঁচারিঘরে বসে চা কফি খাই। আমরা আমাদের সামাজিকতার চর্চা করি। আমি এই কাজটির মধ্যে আমি নিজে থাকছি, অন্যদের শেখাচ্ছি। আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনা আজ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। তিনি উপস্থিত সবাইকে আমন্ত্রণ জানান, বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের অফিসে “কাঁচারি ঘর” এ।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, হোম কেয়ার অনেকেই করছে। এটি একটি ব্যবসা। প্রচুর লোকই ব্যবসা করে। আমার আর অন্যদের মধ্যে পার্থক্য কি? আমি বলি, ভালোবাসা ছাড়া কোনোদিন যতœ হয় না। এই যতœসহ ভালোবাসার একটি আলাদা শক্তি। এই আলো যখন একটি আন্ধকারে থাকা দুয়েকজনের গায়ে লাগে সেখানে একটু ঈ¦র্ষা থাকবেই। তাদের মনের মঝে কষ্ট থাকবেই। এটিই প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা করতে করতে আজ যে জায়গায় এসেছি, সেখানে দাঁড়িয়ে স্পষ্টই দেখতে পাই, আমাদের বিজয় অবধারিত। তিনি বিশ্ব মা দিবসে থাউজেন্ডস শেডস অফ উইমেন কর্তৃক বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এ- অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সবচেয়ে সবচেয়ে পুরনো কর্মকর্তা ম্যানেজার শিউলি বেগম ও ইনটেক ম্যানেজার কানিজ সুলতানা বিশেষ সম্মানে ভূষিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা বাংলাদেশিরা আজ আমেরিকার রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হয়ে গেছি। আমাদের মেয়ে শাহানা হানিফ এখানে কাউন্সিলওমেন। আমরা সবাই আজ আনন্দিত ও স্পন্দিত যে আমাদের ভেতর থেকে একজন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে কথা বলছে। শাহানা হানিফ বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা। সে যতদূর যাচ্ছে ততদূর আমরা যাচ্ছি। সে আমাদের গৌরব। শাহানা যতবার প্রতিযোগিতা করছে, আমরা তার সঙ্গে আছি। সে যেখানে যাচ্ছে আমাদের কথা বলছে।
অনুষ্ঠানে মূল ধারার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমানি উইলিয়াম, ডিস্ট্রিক্ট ৩৯ এর কাউন্সিল মেম্বার সাহানা হানিফ, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গঞ্জালেজ, মেয়র এরিক এডামস এর প্রতিনিধি সুকরানি, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, কুইন্স ডোমোক্র্যাটিক লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী।
বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হলে চারুকলার ছোট ছোট শিল্পীরা তাদের চমৎকার পারফরমেন্স দিয়ে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করে। সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন দিনাত জাহান মুন্নি, রানু নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, শামীম সিদ্দিকী, চন্দ্রা রায়, আসমা জাহান, মিম, ত্রিনিয়া হাসান, মোস্তফা অনীক রাজ, রিয়া রহমান, তাহমিনা, টিপু, আবুল বাসার প্রমুখ।
মেলায় কাপড় চোপড়, রকমারি ফুড, গিফট আইটেম, বিভিন্ন হোম কেয়ার, মেডিকেল সার্ভিসসহ প্রায় শখানিক স্টল ছিলো। সন্দ্বীপ সোসাইটি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সদস্য সংগ্রহের জন্য সন্দ্বীপ সোসাইটি একটি স্টল ছিলো যা অনেকের নজরে আসে। বাচ্ছাদের জন্য ছিল এবার স্পেশাল অনেক রাইড এর ব্যবস্থা। বাচ্চারা রাইড নিয়ে সারাদিন অনেক আনন্দ করে। মেলায় ব্যাপক সমাগম হওয়ায় ৬৬ প্রেসিঙ্কটকে অনুরোধ করলে তারা আটটা পর্যন্ত মেলার সময় বর্ধিত করে। মেলায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন আহসান হাবিব, নুরুল আজিম, হাসান জিলানী, আকাশ রহমান, মোহাম্মদ হানিফ, সৈয়দ এম রেজা, ইলিয়াস মিয়া, আলমগীর খান আলম, জাহাঙ্গীর জয়, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, আবু তাহের, পাকিস্তানী কমিউনিটি লিডার রাজা গুল, চায়নিজ কমিউনিটি লিডার লো লুই।
অনুষ্ঠানের সার্বিক উপস্থানায় ছিলেন এস এম ফেরদৌস ও আশরাফুল হাসান বুলবুল। অনুষ্ঠান শেষে সভাপতি কাজী আজম উপস্থিত সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এইভাবে নিউইয়র্কবাসী যদি সহযোগিতা করেন তবে আগামীতেও আরো ভালো মেলা উপহার দিবেন। তিনি কনভেনর শাহ নেওয়াজ ও সকলের প্রতি সার্বিক সহযোগীরা জন্য ধন্যবাদ জানান।
মেম্বার সেক্রেটারি ফিরোজ আহমেদ সার্বিক সহযোগিতার জন্য দর্শক, কলা কুশলী ও সকল আমন্ত্রিত অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন দেখা হবে ২০২৪ আবার।