ভারতের সাথে সমতা ভিত্তিক সুসম্পর্ক স্থাপিত হলো কি?


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 23-04-2022

ভারতের সাথে সমতা ভিত্তিক   সুসম্পর্ক স্থাপিত হলো কি?

মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নিকট প্রতিবেশী ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার কথা স্মরণে রেখেই একটি প্রশ্ন বারবার উঁকি মারছে। উত্তরটাও আমার চলে আসে সাথে সাথে। সেটা হলো ৫০ বছরে ভারতের সংগে সমতার ভিত্তিতে স্থাপিত হয়নি।

 ১৯৭১ মার্চ মাসে পাকিস্তান সেনা বাহিনী যখন অপারেশন সার্চ লাইট নামের আড়ালে জেনোসাইড শুরু করে তখন ১ কোটি অসহায় মানুষকে আশ্রয় প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, অস্ত্র সরবরাহ এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তি যোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার ঐতিহাসিক সত্য সুপ্রতিষ্ঠিত। 

সম্মান জানাই শ্রদ্ধেয় ইন্দিরা গান্ধীর অসামান্য অবদানের জন্য। বাংলাদেশ কখনোই ভারতের অবদানকে অস্বীকার করেনি। বর্তমান সরকার বাংলাদেশে ভারত বিরোধী সকল গোষ্ঠীর আস্তানা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের উর্ধতন কর্মতাদের এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যথাযথ সম্মান প্রদান করতে শুনেছি। বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে সড়ক, রেল, জলপথে সংযোগের সকল পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।  

কিন্তু ভারত নানা কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সার্বভৌম সত্তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছে বলে মনে হয়না। বিষয়টি অভিন্ন নদী গুলোর সমতা চিত্তিক পানি বন্টন বলুন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা বলুন, ভারতের উপর দিয়ে নেপাল ভুটান থেকে জন বিদ্যুৎ আমদানির অনুমতি প্রদান বলুক কোনো ক্ষেত্রেই ভারত সৎ প্রতিবেশী সুলভ মনোভাব প্রদর্শন করেনি। ভারত কখনোই অভিন্ন নদীর পানিবন্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক  নীতিমালা  মেলে নিতে সম্মত হয়নি। অনেক বলবেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের আভ্যন্তরিক রাজনৌতিক বিষয়ে সরাসরি বা  পরোক্ষভাবে  প্রভাব বিস্তার করেছে। 

এটা সত্য হয়তো এসবের সত্যমিথ্যার উপর নির্ভর করেই আজ একটা ভারত বিরোধী পক্ষ-বিপক্ষ তৈরী হয়ে গেছে। আর এ কারনেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব সুক্ষèভাবে বিস্তার হচ্ছে। এটা অবশ্য ক্লিয়ার হওয়া উচিৎ।  ভারত সরকারের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন বিষয়ে আন্তরিক থাকার কথা বলে থাকেন। 

সে কথার উপরও অনেকে আস্থা রাখতে পারেন না। কারন বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের আমলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। তার পরেও আরো অনেক কিছু অবশিষ্ট আছে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত কিছু কিছু বিষয় নিয়ে অনেক দেনদরবার হওয়া স্বত্বেও সেটা পুরন করেনি ভারত। হয়তো সে থেকেও অবিশ্বাসের ঢালপালা মেলেছে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই আন্তরিক।

 যার প্রমানও তারা দিয়ে আসছে বারবার। কিন্তু সুযোগ পেলে ভারতও কিছু কিছু এমন সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে বসে যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিরক্তের কারনও হয়ে যায়। সম্প্রতি টিকার বিষয়টা, তার আগে পিয়াজের বিষয়। এছাড়াও সীমান্তে কিছু অনিয়ম,মৃত্যু,হত্যাকান্ড ইত্যাদি বিষয়। এমন ছোটখাট অথচ সাধারন মানুষের জন্য যা হয়ে যায় গুরুত্বপুর্ন।

 বাংলাদেশের সাধারন মানুষের প্রত্যাশার সাথে যেয়ে গরমিল ঘটে। ফলে সেখান থেকেও একটা বিদ্বেশ তৈরী হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ঢালাও ভাবে ভারত বিরোধিতা যেমন কাম্য নয়, তেমনি ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ ভারত তোষণ করবে সেটিও মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ সরকার বারবার এসব ইস্যুতে বারবার কথা তুললেও ভারত শুধু আশ্বাসের মধ্যেই রেখে দেয়। এটা যেমন উচিৎ না।

 প্রয়োজন দুইপক্ষেরই সমান উদ্যোগী হওয়া পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহনে। এতে অবিশ্বাস ভুলে যেয়ে বন্ধুত্ব বাড়বে দু’দেশের মধ্যে। দু’দেশের জনগনের মধ্যে। এটা দুই দেশের সরকারের জন্য অনেক সমস্যা সহজে সমাধানে সহজ হয়ে যায়। 

এটাই সত্য যে উভয় দেশের স্বার্থেই দুটি দেশ্যের সুস্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সমতার ভিত্তিতেই সকল অমীমাংসিত বিষয় নিস্পত্তি করতে হবে। পানি বন্টনে আন্তর্জাতিক নীতি মেনে নিতে হবে। সীমান্ত হত্যা সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে হবে। দুটো দেশ সমতার বিষয়টিতে সকল সমস্যা মিটিয়ে ফেলে যৌথ সহযোগিতার বিহিত্তে এগিয়ে গেলে দক্ষিণ এশিয়া দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত  হবে যা বিশ্ব শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক রক্তের ভিত্তিতে স্থাপিত। সেই কথাটি স্মরণে রেখে সকল অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধান করা অবশ্যই সম্ভব বলে মনে করা অসম্ভব নয় বলে করি না।



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)