ফোবানার ললাটে ভাঙ্গনের তিলক


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 25-05-2023

ফোবানার ললাটে ভাঙ্গনের তিলক

ফোবানার কপালে যেন বিভক্তির তিলক লেগেই আছে। এক ফোবানা এখন নানাভাবে বিভক্ত। যখনই ফোবানা সম্মেলনের সময় আছে তখনই কর্মকর্তারা এসে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সেই সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যের কথা বলেন। ‘ঐক্য’ শব্দটি শুধু তাদের মুখেই শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। উল্টো ঐক্যের পরিবর্তে অনৈক্যই বেশি দেখা যায়। এক ফোবানা এখন পাঁচ ফোবানায় পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর মন্ট্রিয়েলে অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনে অনেক নাটকের পর গিয়াস আহমেদকে চেয়ারম্যান এবং শাহ নেওয়াজকে মেম্বার সেক্রেটারি করে একটি অসম্পূর্ণ কমিটি করা হয়। সেই কমিটি নিউইয়র্কে এসে ঘোষণা দেন ঐক্যের জন্য তাদের আরো সময় প্রয়োজন। সেই সময় অতিবাহিত হয়েছে অনেক আগেই। প্রায় ৯ মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যেই চেয়ারম্যান এবং মেম্বার সেক্রেটারির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বে গত ২০ মে বিকালে জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন গিয়াস আহমেদ। তিনি সংবাদ সম্মেলনে ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পূর্বে তিনি বলেন, মন্ট্রিয়েল ফোবানায় আমাকে চেয়ারম্যান এবং শাহ নেওয়াজকে মেম্বার সেক্রেটারি করে একটি কমিটি দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার জন্য আমাকে, মেম্বার সেক্রেটারি এবং ডা. মাসুদুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমরা এখানে এসে বৈঠক করেছি। আমরা যেহেতু বিভিন্ন স্টেটের লোকজনকে সমন্বয় করে কমিটি গঠন করতে চাই, তাই সময় লেগেছে। অবশেষে আমরা কমিটি তৈরি করেছি। যাতে শাহ নেওয়াজও উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে কানাডা থেকে আমাদের কর্মকর্তা তৌফিক এজাজ গত ১৩ মে নিউইয়র্কে আসেন এবং কমিটি ফাইনাল করার মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সেই মিটিংয়ে শাহ নেওয়াজ আসার কথা থাকলেও তিনি আসেননি, এমন কি আজ কয়েকদিন তিনি আমার ফোনও ধরছেন না। এই অবস্থাতে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। ফোবানা সম্মেলন প্রায় চলে এসেছে। তাই আজ আমরা আপনাদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং কমিটি ঘোষণা করছি। তিনি আরো বলেন, আমরা জেনেছি, আলী ইমাম শিকদারসহ শাহ নেওয়াজরা গোপন বৈঠক করেছেন এবং তারা পুরোনো কমিটি বহালের বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, আমিসহ এখানে অনেকেই আছে কিন্তু আমাদের না জানিয়ে গঠনতন্ত্র না মেনে তারা কীভাবে পুরানো কমিটি বহাল রাখেন। তিনি বলেন, কমিউনিটিতে কিছু বিভেদ সৃষ্টিকারী লোক রয়েছেন। তাদের কারণেই আজকে এই অবস্থার তৈরি হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা এখনো ঐক্য চাই, আমরা বিভক্তি চাই না। যে কারণে এখনো আমাদের কমিটিতে মেম্বার সেক্রেটারি রয়েছেন শাহ নেওয়াজ। তিনি আরো বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একজন সহ-সভাপতি এবং একজন জয়েন সেক্রেটারির পদ রয়েছে। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন কানাডার। এবার ফোবানা যেহেতু কানেকটিকাটে সেহেতু আমরা কোষাধ্যক্ষ নিউইয়র্ক থেকেই দিই। তৌফিক এজাজ এই পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, তাহলে কানাডা থেকে সহ-সভাপতি দিতে হবে। এদিকে শাহ নেওয়াজ, কাজী আজম বলেন, গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সহ-সভাপতি দুটি করতে। আমরা তাই করেছি। কাজী আজমকে সহ-সভাপতির পদ দিয়েছি। তারপরও বিভক্তি কেন? এজন্য তিনি আলী ইমামকে সরাসরি দায়ী করেন।

তার ঘোষিত স্টিয়ারিং কমিটি সদস্যরা হলেন- চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল আজাদ (টরেন্টো), মেম্বার সেক্রেটারি শাহ নেওয়াজসহ মেম্বার সেক্রেটারি উত্তম দে (আটলান্টা), কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ এনায়েত আলী। সদস্য তৌফিক এজাজ (মন্ট্রিয়েল), আসিফ বারী টুটুল, আবু জোবায়ের দারা, হাসানুজ্জামান হাসান, ওয়াহিদ কাজী এলিন, নিশান রহিম, ফিরোজ আহমেদ, মাকসুদুল হক চৌধুরী, নিয়াজ আহমেদ জুয়েল, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, কিউ জামান, মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, কাজী তোফায়েল ইসলাম, আহসান হাবিব, মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি, এম এ খালেক, তারেক হাসান খান, নূরুল আজিম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আকাশ রহমান, মোহন জাব্বার (আটলান্টা), মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ঠান্ডু (আটলান্টা), ইলিয়াস হোসেন আটলান্টা, ইমরানুল হক চাকলাদার (ফ্লোরিডা), মোহাম্মদ ইলিয়াস খান (ফ্লোরিডা), মাহিম আহমেদ (মন্ট্রিয়েল), কবিরুল ইসলাম (ওয়াশিংটন ডিসি), নেসার আহমেদ (ওয়াশিংটন ডিসি), মোহাম্মদ কাজল (ওয়াশিংটন সিডি), সোহরাব হোসেন (বোস্টন), জাকারিয়া রুমি (নিউ জার্সি), কামরুল আহমেদ ( শিকাগো), দেওয়ান আজিম জুয়েল (আটলান্টা), কাজী চৌধুরী (টেক্সাস), নাজমুল আলম শ্যামল, শাখাওয়াত হোসেন সুমন (কানাডা) ও আবুল কালাম (কানাডা)।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আমাদের কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ জুন ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনাতে।

উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা হলেন-প্রধান উপদেষ্টা আক্তার হোসেন, সদস্য আতিকুর রহমান সালু, ডা. মাসুদুর রহমান, খন্দকার ফরহাদ, মোহাম্মদ হোসেন খান, আলী ইমাম শিকদার, ডা. ইবরুল চৌধুরী, আবু জাফর মাহমুদ ও ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান।

এদিকে ফোবানার মেম্বার সেক্রেটারি শাহ নেওয়াজ বলেন, মন্ট্রিয়েল সম্মেলনে কমিটি গঠনের সময় শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের কথা বলা হয়। এই পদে আমরা দুই জন প্রার্থী হই। আমি এবং গিয়াস আহমেদ। এক পর্যায়ে আমি চলে আসার সিদ্ধান্ত নিই। এই পরিস্থিতিতে সবাই আমাকে অনুরোধ করে যে, আমি যেন মেম্বার সেক্রেটারিতে রাজি হই, আগামীতে আমিই চেয়ারম্যান হবো। আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয় এবং একটি কাগজে আমরা স্বাক্ষর করি। নিউইয়র্কে এসে গিয়াস আহমেদ সব ভুলে গেলেন। তিনি কমিটিতে সব নতুন নাম ঢুকানোর মিশন নিলেন। আমি তাকে কমিটি গঠনের ব্যাপারে আমার অফিসে আসতে বলি। তিনি আমার অফিসে আসলেন। সঙ্গে ডা. মাসুদুর রহমান। আমার প্রশ্ন হলো ডা. মাসুদুর রহমান ফোবানার কে? তিনি তো ফোবানার কমিটিতে নেই। তারপরেও আমি তাকে বসতে বলি। গিয়াস আহমেদ পুরো কমিটি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিলেন এবং নিজের পছন্দের লোকদের নাম দিলেন। আমি বললাম এটা সম্ভব নয়। আমি ২/১ পদের পরিবর্তনের কথা বলি কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি নন। তিনি কাজী আজমকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করতে রাজি হননি, মাকসুদুল হক চৌধুরীকে কোষাধ্যক্ষ নিতে রাজি হননি, নিশান রহিম, কাজী নয়ন, মোহাম্মদ হোসেন এবং আলী ইমামকে রাখতে রাজি হননি। তিনি সৈয়দ এনায়েত আলীকে কোষাধ্যক্ষ করবেন এবং নতুন নতুন অনেকগুলো নাম দিলেন, যা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। আমি সরাসরি না বললাম। এর মধ্যে তিনি কাজী আজমকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিতে রাজি হলেন এবং সৈয়দ এনায়েতকে কোষাধ্যক্ষ করবেন। এজন্য আমাকে ডা. মাসুদুর রহমানের বাসায় গিয়ে তাকে অনুরোধ করতে হবে। আমি কেন ডা. মাসুদুর রহমানের বাসায় যাবো? আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান কখনো একা কমিটি করতে পারেন না এবং ঘোষণা দিতে পারেন না। এজন্য সবার মতমত প্রয়োজন। ঐক্য নিয়ে প্রশাসন করলে তিনি বলেন, দেখা যাক আগামীতে কী হয়? তিনি আরো বলেন, কানেকটিকাটে যারা সম্মেলন করছেন, তারা আমাদের সঙ্গে এবং আমরাই হোটেলের বুকিং দিয়েছি।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)