মার্কিনরা কেন আমাদের এত ঘৃণা করে


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 31-05-2023

মার্কিনরা কেন আমাদের এত ঘৃণা করে

অভিবাসীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটি আর আগের মতো অভিবাসীবান্ধব নেই। সে দেশে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। অভিবাসী ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন। এমনকি অভিবাসন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনেও এখন বড় ইসু্যু হয়ে উঠছে। ‘অভিবাসীরা আমেরিকাকে ভালোবাসেন, এমনকি এ জন্য আমেরিকা তাদের না ভালোবাসলেও’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা এক মতামতে অভিবাসীদের বিষয়ে মার্কিনদের মনোভাব তুলে ধরেছেন কার্লা কর্নেজো ভিলাভিসেনসিও নামের এক অনিবন্ধিত মার্কিন অভিবাসী। ইকুয়েডর বংশোদ্ভূত এই অভিবাসী ‘দ্য আনডকুমেন্টেড আমেরিকানস’ বইয়ের লেখক। পাঠকদের জন্য তাঁর মতামতটি তুলে দেওয়া হলো-

অভিবাসীদের সম্পর্কে কিছু মার্কিন কেমন মনোভাব পোষণ করেন, তা আমি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি। আমি ২৫ বছর ধরে অনিবন্ধিত। অনিবন্ধিত রয়েছেন, এমন দুই অভিবাসীর সন্তান আমি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসীদের প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে আমি একটি বই লিখেছি।

ওই সময় ট্রাম্প প্রশাসনকে অভিবাসী ও তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসা মানুষের জন্য সবচেয়ে খারাপ প্রশাসন বলে মনে হয়েছিল। প্রতিবেদন তৈরির সময় আমি যে অভিবাসীদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাঁদের প্রত্যেকেই অসাধারণ কিছুর মধ্য দিয়ে বেঁচে ছিলেন। তাঁরা সবাই ভালো মানুষ ছিলেন, তবে সাধারণ মানুষের মতো তাঁদেরও ভুলত্রুটি ছিল।

আপনি যদি আমাদের অভিবাসীদের সম্পর্কে আর কিছু না জানেন, তবে আপনার এটি জানা উচিত- ঈশ্বর তাঁদের পথে যা কিছু রেখেছেন, তা মাড়িয়ে তাঁরা বেঁচে আছেন। তাঁদের কেউ কেউ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নামে নিজেদের ও সন্তানদের জন্য মূলত বেঁচে আছেন। আমি কখনো বুঝতে পারব না, কেন তাঁরা (অভিবাসী) এত বেশি ঘৃণার শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন।

শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল ‘ভোটিং ব্লক’

প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভিবাসনব্যবস্থা ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে নানাভাবে বিষয়গুলো আগের মতোই ভয়াবহ রয়ে গেছে। বাইডেন শুধু অর্থবহ সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তা-ই নয়, তাঁর প্রশাসনও সীমান্ত- সংকটের বিষয়ে ট্রাম্পিয়ান পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, যা শরণার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির শামিল। স্থানীয় সরকার যাতে শেরিফদের মতো কাজ করতে পারে, সে জায়গা ছেড়ে দিয়ে তিনি তাঁর দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন। আর পুরোটা সময় রিপাবলিকানরা ক্রমাগতভাবে কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

ইকুয়েডরে ১৯৯০-এর দশকে আমি শিশু ছিলাম। তখন এমন একটা সময় ছিল, যখন লাতিন আমেরিকা কয়েক দশকের সামরিক অভ্যুত্থান, স্বৈরশাসন এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসছিল। কর্তৃত্ববাদ এবং যারা একে সমর্থন করে, তাদের প্রতি আমার মা-বাবার যে প্রচন্ড ঘৃণা ছিল, সেটি তাঁরা আমার ও আমার ভাইয়ের মধ্যেও তৈরি করেছেন। আর কর্তৃত্ববাদ সমর্থনকারী দুর্বল চিত্তের মানুষেরা দেশের সংবিধান এবং বিচ্ছিন্ন ও উদাসীন মানুষগুলোর ওপর নিজেদের পেশাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল পুরুষেরা ‘ভোটিং ব্লকের’ মূল ভিত্তি, যাঁরা নিজেদের পিছিয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন। তাঁদের প্রতিভা দেখাতে হয় না আর তাঁদের বীরত্বও পরীক্ষার মুখে পড়ে না। এখন তাঁদের নায়ক হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা তাঁরা নিজেদের জন্মগত অধিকার বলে মনে করেন। কিন্তু তাঁদের অবশ্যই মনে ধারণ করতে হবে, বাদামি ও কালো কোনো শিশু বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলেনি। বরং তাঁদের মতো পুরুষেরাই যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকিতে ফেলেছে, যাঁদের সবাই সামরিক উচ্চাকাঙ্খায় আলোড়িত।

অভিবাসন ঠেকাতে কঠোর প্রশাসন

অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে রয়েছে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট ও তাঁর অভিবাসীবিরোধী সীমান্ত প্রকল্প ‘অপারেশন লোন স্টার’। মহামারিকালে জারি করা বিধি টাইটেল ৪২ কার্যকর থাকার পরও তিনি অভিবাসীদের গ্রেপ্তারে রাষ্ট্রীয় অনুপ্রবেশ আইন প্রয়োগ করেছিলেন। সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনো অভিবাসী ঢুকতে না পারেন, সে জন্য তাঁর নিজস্ব বিবেচনায় ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এ জন্য প্রতি সপ্তাহে করদাতাদের ২৫ লাখ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এটা পরিহাসের। কিন্তু এটা নিশ্চিত, এই সিদ্ধান্ত তাঁকে শক্তিশালী প্রশাসক হিসেবেই দেখাবে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস একটি আইনে সই করেছেন। ওই আইনে সব হাসপাতালকে সব রোগীর অভিবাসন- সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে এবং স্থানীয় সরকারকে অনিবন্ধিত কোনো অভিবাসীকে কোনো ধরনের পরিচয়পত্র ইস্যু করতে নিষেধ করা হয়েছে। নতুন আইনের ফলে সর্বত্র নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ফ্লোরিডার বাসিন্দারা নিজেদের রান্নাঘরে অনিবন্ধিত কোনো ব্যক্তিকে দেখতে চাইবেন না, নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইবেন না, শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করবেন না। অন্যান্য রাজ্যে এই আইনে ‘অবৈধ এলিয়েনদের’ ইস্যু করা বৈধ লাইসেন্সকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ অনিবন্ধিত শ্রমিক নিয়োগ দিলে এই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এটি করদাতার অর্থ ও সন্ত্রাসবিরোধী বরাদ্দের একটি বিশাল অপচয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধবিরোধী আইন।

এই এক নিষ্ঠুর বাঁকবদল- যে দেশে আমরা পালিয়ে এসেছিলাম, মাঝেমধ্যে তারা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোন জায়গা আমরা ছেড়ে এসেছি। এটাই হচ্ছে পরিহাসের বিষয়। অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে রাখতে অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

দ্বিদলীয় সহযোগিতা প্রয়োজন

ভালো খবর হলো কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অভিবাসীরা আমাদের গোপন অস্ত্র হতে পারেন। অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রকে ভালোবাসেন, যুক্তরাষ্ট্রকে টিকে থাকতে যেভাবে ভালোবাসা প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা অভিবাসীদের সঙ্গে খুব, খুবই বাজে আচরণ করে আসছি। বেশির ভাগ মার্কিন অর্থপূর্ণ ও মানবিক অভিবাসন সংস্কারকে সমর্থন করেন, যা অভিবাসীদের আইনি মর্যাদা পাওয়ার একটি পথ দেখায়। কিন্তু মনে হচ্ছে, আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পুনর্র্নিবাচন ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবেন না। এই সমাধান অর্জনের জন্য আমাদের দ্বিদলীয় সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু সবাই নেতৃত্ব দিতে পারেন না, সবাই কঠোর পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক নন এবং সবাই সাহসী হন না।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো সময় রাজনৈতিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক ধস এবং বিচারবহির্ভূত সাজার ঘটনা ঘটতে পারে। হতে পারে এটি অসহনীয় চিন্তা। আর অভিবাসীদের মৌলিকভাবে আমাদের থেকে আলাদা, ভিন্ন জগতের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ হিসেবে চিত্রিত করাটা আমাদের চিন্তার সুযোগ করে দেয় যে তাঁরা আমাদের মতো নন এবং তাঁদের ভাগ্য আমাদের নিজেদের সঙ্গে যুক্ত নয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)