৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে তথ্যের গরমিল : ড. মোমেন


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 21-06-2023

৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে তথ্যের গরমিল : ড. মোমেন

বাংলাদেশকে নিয়ে ৬ কংগ্রেসম্যানের দেওয়া চিঠির বিষয় প্রথম মন্তব্য এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন ১৯ জুন সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে তার মন্তব্য জানান। ওই সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে তথ্যে গরমিল আছে।’  

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে দেশটির ৬ কংগ্রেসম্যানের দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, চিঠিতে কিছু তথ্যের গরমিল আছে, ভুল আছে। মিথ্যা তথ্য আছে। যাদের লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তারা মিথ্যাচার করছেন। যেমন একটা মিথ্যা হলো তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে শেখ হাসিনার সরকারের সময় হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছেন। ৬০ শতাংশ হিন্দু বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছেন। এটা তো সত্য নয়। খ্রিস্টানদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। এটা তো সত্য নয়। এসব বিষয় গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘আমাদের লবিস্ট নেই। আমরা বাদ দিয়েছি; বরং যারা লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন তাদের বলছি, আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটারে ধ্বংস করার তালে থাকবেন না।’

তারা চিঠি লিখতে পারেন, উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, মিথ্যা তথ্য দেবেন কেন? তিনি বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক। সারাজীবন শিক্ষকতা করেছি। আমার দুঃখ লাগে, যখন দেখি মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি। যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি, ‘তোমরা তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখো। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা। তারপর সিদ্ধান্ত নাও। এটি না করলে ভুল হবে।’ আমার শিক্ষার্থীদেরও বলেছি, ‘সত্য-মিথ্যা যাচাই করো।’

তবে এর আগে এ চিঠি প্রসঙ্গে কোথা থেকেও সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে যে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের পাঠানো চিঠির ব্যাপারে অবগত নন। তবে উল্লেখ করেছে যে সাধারণত এসব চিঠির উত্তর গোপনীয়ভাবে দেওয়া হয়।

গত ১৪ জুন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমি চিঠির বিষয়টি অবগত নই। আমরা সাধারণত কংগ্রেসের সদস্যদের কাছ থেকে যে চিঠিগুলো পাই সে বিষয়ে মন্তব্য করি না।’

কী ছিল সে চিঠিতে?

চিঠিতে বলা হয়েছে : ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শত শত উদাহরণ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউজ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও তাদের প্রতিবেদনে নথিভুক্ত করেছে। যাতে দেখা যায়, শেখ হাসিনার সরকার ক্রমবর্ধমানভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অস্বীকার করেছে। সরকার তার নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটিয়েছে। সাংবাদিকদের কারাগারে বন্দি করেছে। বিরোধীদের গুম করেছে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের লাঞ্ছিত করেছে বা হত্যা করেছে। এ ঘটনা শুধু তার রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিক্ষোভ করেছে, যা হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের জন্য জনগণের একমাত্র আশা। এর জবাবে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করেছে, এমনকি হত্যা করেছে।

জার্মানির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ডয়চে ভেলে এবং সুইডেনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নেত্র নিউজের সাম্প্রতিক তদন্তে বলা হয়েছে, র‌্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুমের এসব ঘটনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া সম্ভব ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্র এক বছরেরও বেশি সময় আগে র‌্যাবকে একটি ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং হত্যাকা-সহ অন্যান্য নৃশংসতার জন্য দায়ী একাধিক আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা শেখ হাসিনার সরকারের সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসরণকে ধীর করার জন্য যথেষ্ট কাজ করেনি। উল্টো তারা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থে আঘাত করার জন্য চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।

সবশেষে চিঠিতে বাংলাদেশকে অবাধ নির্বাচনের একটি সর্বোত্তম সুযোগ করে দেওয়ার জন্য কঠোর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। বব গুডের ২ জুনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিনিধি স্কট পেরি (পিএ-১০)। এতে সই করেছেন বব গুড (ভিএ-০৫), ব্যারি মুর (এএল-০২), টিম বার্চেট (টিএন-০২), ওয়ারেন ডেভিডসন (ওএইচ-০৮) ও কিথ সেলফ (টিএক্স-০৩)।

চিঠি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘আমার বলার দরকার নেই। তারা চিঠি চালাচালি কোথায় করছে, এটা তাদের মাথাব্যথা; এটা আমাদের নয়।’


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)