বাংলাদেশের মানুষ সিরাজুল আলম খানকে হৃদয়ে ধারণ করে যাবে


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 21-06-2023

বাংলাদেশের মানুষ সিরাজুল আলম খানকে হৃদয়ে ধারণ করে যাবে

বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ’র স্বাধীনতা আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধের প্রধান সংগঠক সদ্য প্রয়াত সিরাজুল আলম খান। স্বাধীনতাত্তোর স্বাধীন বাংলাদেশ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে রাজনীতির এ নায়ক লাখো তারুণ্যকে উন্মাতাল করেছিলেন। স্বাধীন দেশের যে তরুণ যুবকদের অনেকেই আজ জীবনের বেলাভুমে দাঁড়িয়ে, দেশের মতো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন সিরাজুল আলম খান এর অনুসারী অনুরাগীরা। কেউ প্রাক যৌবনের দিনগুলোতে তাঁর সতীর্থ ছিলেন, অনুসারী, অনুরাগী ছিলেন, কেউ একসাথে কারাবরণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে আছেন সিরাজুল আলম খান এর অনুসারীরা। ১৯ জুন, ২০২৩ সোমবার সন্ধ্যায় এসব সতীর্থ, অনুসারী, অনুরাগী সহ অগ্রসর জনসমাজের সমাবেশ ঘটেছিল নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে। কোন আনুষ্ঠানিক বা সাংগঠনিক উদ্যোগ ছিলো না এ স্মরণ সভার জন্য। মৃত্যুর আগে রাজনীতির ব্যতিক্রমী পথে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে যাওয়া সিরাজুল আলম খান, তাঁকে নিয়ে মৃত্যুর পর কোন উচ্ছ্বাস না করার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। তারপরও ছড়িয়ে থাকা অনুরাগী অনুসারীদের সমাবেশ ছিল একসাথে শোক বিলাপের, পরস্পরকে পাশে রেখে নিজেদের ফিরে দেখার। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিমগ্ন উচ্চারণে প্রয়াত নেতার প্রতি নিজেদের আবেগ প্রকাশ করার। 

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী জনসমাজের জনপ্রিয় সংগঠক ও মূলধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল আলম সভার শুরুতেই সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় জানালেন এসব কথা। দূরান্তের রাজ্য থেকেও কেউ কেউ ছুটে এসেছেন সতীর্থদের পাশে বসে বেদনার নিঃশ্বাস ফেলার জন্য। স্মরণ সভায় তেমন কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিলো না। প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ স্মরণ সভায় সভাপতি শুরুতেই বলে নিলেন একটি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে এর বাস্তবায়নে কাজ করেছেন সিরাজুল আলম খান। তিনি বলেন , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামের সাথে সিরাজুল আলম খান এর নাম উচ্চারিত হয় ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায়ে। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় এমন একজন নেতাকে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা করার অবকাশ থাকলেও সভার সভাপতি সবাইকে আহ্বান জানান, শ্রদ্ধা ও একান্ত স্মৃতি থেকে জানা অজানা বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য। 

শুরুতেই প্রয়াত সিরাজুল আলম খান এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। কোন ধারক্রম ছাড়াই একে একে প্রাজ্ঞজন সংক্ষেপে কথা বলেন। অনেকেই বলেছেন, সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং দেশ ও সমাজ ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলাপের জন্য আরও গবেষণা, আরও বিস্তৃত সময় নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। দেশ ও জাতির স্বার্থেই এমন উদ্যোগ নেয়ার জন্য তাঁরা সমবেত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

শামসুদ্দীন গাজী, শামছুউদ্দিন আহমেদ শামীম এবং নুরে আলম জিকু’র পরিচালনায় বক্তৃতা করেন- সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুর রহমান, ডাঃ সুফিয়ান খন্দকার, মোর্শেদ আলম, মাফ মিসবাহ উদ্দীন, স্বপন বড়ুয়া, মোহাম্মদ হোসেন খান, হানিফ মজুমদার, রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, আলী ইমাম সিকদার, ওমর ফারুক খসরু, জসীম উদ্দিন বাবু, মুজাহিদ আনসারী, দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, মঈনুদ্দিন নাসের, সাঈদ তারেক, খোরশেদ চৌধুরী, শামসুদ্দিন আজাদ, আজাদ উদ্দিন, শাহান খান, আহসান হাবিব, ফজলুর রহমান, ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, গোলাম কিবরিয়া অনু, এনামুল হায়দার, রেজাউল করিম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন লিটন, জাকির হোসেন স্বপন, তসলিম উদ্দিন খান, আব্দুল মালেক, নাদির সরকার, রিমন ইসলাম, গাজী আজম বাদল, নজরুল ইসলাম, ডাঃ চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, হাকিকুল ইসলাম খোকন, আহসান হাবিব, চিত্তরঞ্জন সিংহ, সৈয়দ রাব্বি প্রমুখ।

নিউইয়র্কে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠান দেখা যায়নি। টেক্সাস থেকে ছুটে আসা প্রয়াত নেতার অনুসারী, অনুরাগী রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে রাজনীতির একজন মহা নায়কের দেশ ও সমাজের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেয়ার চিত্র তুলে ধরেন। 

বক্তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা। কর্ম প্রয়াসে আমরা সহজেই সিরাজুল আলম খানকে জাতির ভ্রাতা বলতে পারি। তিনি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাঁর কর্ম ও প্রয়াস হয়তো সফল হয়নি। যুগে যুগে এমন বহু বিপ্লব প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। কোন অবস্থায়ই সিরাজুল আলম খান রাজনীতিকে নিয়ে ব্যক্তিগত কোন অর্জনের চিন্তা করেননি। বাংলা মায়ের এ খাঁটি সন্তান তাঁর চিন্তায় ও প্রয়াসে দেশ ও জনগণের চিন্তাই করে গেছেন। বহু কর্মের মূল্যায়ন দূর ইতিহাস কীভাবে দেখবে তা এখনই বলে যাবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষ সিরাজুল আলম খান এর মতো মানুষকে হৃদয়ে ধারণ করে যাবে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।

আলোচনায় বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেই সিরাজুল আলম থেমে থাকেননি। তিনি জাসদ নামের রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা করেছেন। তখন জাসদ না হলে বহু তরুণ পরিবর্তনের ভিন্ন আহ্বানে সাড়া দেয়ার আশংকা ছিল। সময়কে বিবেচনা করে সিরাজুল আলম খানের চিন্তা ও প্রয়াসকে মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা তাদের আলোচনায়। মরহুম নেতা রাজনীতির কোন রহস্য পুরুষ ছিলেন না, রাজনীতির মানসপুত্র ছিলেন। নেপথ্যে থেকেও নেতৃত্ব দেয়া যায়, প্রাসঙ্গিক থাকা যায়, তা সিরাজুল আলম দেখিয়ে গেছেন বলে সভায় বলা হয়।  

সরাসরি সিরাজুল আলম খান এর রাজনৈতিক অনুসারী ছাড়াও অগ্রসরজনের উপস্থিতি ছিল স্মরণ সভায়। মুক্তচিন্তার এসব সংগঠক বলেছেন, সিরাজুল আলম খান তাঁর জন্য কোন সম্মান দেখানো হোক এমন কোন বিষয়ের প্রতি কখনো ছুটেননি। নির্বিকভাবে দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে গেছেন। এ কাজের মধ্যেই বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সিরাজুল আলম খান। 

বক্তারা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সিরাজুল আলম খান এর অনুসারীরাই সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছেন। অধিকাংশ অনুসারীরাই দেশের লুটপাট আর গণবিরোধী কাজে নিজেকে বিলিয়ে দেননি। অনুসারীদের মধ্যে দেশপ্রেম আর অগ্রসর চিন্তাকে সঞ্চারিত করে গেছেন সিরাজুল আলম খান। তাদের শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিরাজুল আলম খান বেঁচে থাকবেন হৃদয়ের গহীনে।

স্মরণ সভার উদ্যোক্তাদের অন্যতম মূলধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল আলম প্রবাসের শত ব্যস্ততার মধ্যেও দূরান্তেরপথ পাড়ি দিয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সমাপণী বক্তৃতায় তিনি বলেন, রাজনৈতিক দার্শনিক সিরাজুল আলম খানকে আনুষ্ঠানিক স্মরণ করেই শেষ নয়। অনুসারী, অনুরাগীদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধি করে সিরাজুল আলম খান এর চেতনাকে চর্চায় ও হৃদয়ে ধারণ করার অঙ্গীকার আমাদের। এ অঙ্গীকারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)