হঠাৎ সেন্টমার্টিন ইস্যু, কিন্তু কেন?


মাসউদুর রহমান , আপডেট করা হয়েছে : 27-06-2023

হঠাৎ সেন্টমার্টিন ইস্যু, কিন্তু কেন?

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিক দেশের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশ রক্ষায় একজোট। দেশের এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও কেউ দখল করবে সেটা তারা মানবে না। কিন্তু সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সাত সমুদ্র ১৩ নদী ওপারে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নাকি বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি ভূখ- সেন্টমার্টিন দ্বীপ দখলের পাঁয়তারা করছে। কেউ বলছে এ সেন্টমার্ন্টিন দখল করতে চায় আমেরিকা, কেউ বলছে এটা লীজ চায় তারা। কিন্তু আসলেই কী? 

সত্যিই কী সেন্টমার্টিন দ্বীপ কী দখল করে নেওয়ার কোনো হুমকি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা থাকলেও এ ব্যাপারে সরকারি কোনো বক্তব্য নেই। বিক্ষিপ্তভাবে কথাবার্তা চলছে এবং দায়িত্বশীল পর্যায় থেকেই। কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা লিজ বা দখল করতে চায় সেটা স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে দাবি উঠেছে। ওই বক্তব্যের প্রতিবাদও করেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। তারা বলেছে, বাংলাদেশের কোনো ভূখ- দখলের তাদের কোনো ইচ্ছা নেই। ফলে বিষয়টা যে সাধারণ পর্যায় রয়েছে তা নয়। কতটা সিরিয়াস হলে এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া দিতে হয়েছে। এতেই জনমনে বিভ্রান্তি চলছে। যে হঠাৎ কেন সেন্টমার্টিন দখলের পাঁয়তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। কি-ইবা সে প্রয়োজন তাদের। 

অবশ্য এ ইস্যুটা এমনই এক মুহূর্তে অবতারণা ঘটলো, যখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হওয়ার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসানীতি চালু করেছে এবং যেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাধা দেবে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ ও বাস্তবায়নকারী উভয়ে এবং তাদের পরিবার-পরিজন ওই ভিসানীতির আওতায় চলে যাবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সুযোগ থাকবে না। এটাই যে নতুন তা নয়, দীর্ঘদিন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাগিদ দিয়ে আসছেন। একইভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে রয়েছেন, তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নেওয়ার ক্ষেত্রেও শান্তিরক্ষা প্রধানের কাছে যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যখন যাচ্ছে বাংলাদেশ, ঠিক এমনি মুহূর্তে সেন্টমার্টিন ইস্যু নতুন করে উঠলো। 

বাংলাদেশের গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক বিবৃতিতে বলেন, যদি সত্যি সত্যিই কেউ সেন্টমার্টিন চেয়ে থাকে, তাহলে সেটা সরকারের স্পষ্ট করে বলা দরকার। জনগণকে জানানো দরকার-কে কবে তা চেয়েছে। গত ২২ জুন এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ইতিপূর্বেও ভারতে গ্যাস রপ্তানি (বিএনপি কর্তৃক) নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে দিতে দেখেছি, যা পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়নি। ফলে এই বক্তব্যকেও সেই একই ধারায় বিবেচনা করা যেতে পারে। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা।’ বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে সবার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং এখন দেশে নানাধরনের ষড়যন্ত্র ও খেলায় মত্ত হয়েছে। মূলত দেশব্যাপী যখন সরকার পতনের আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে ও সরকারের আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রায় শেষ ঠিক তখনই সেন্টমার্টিন ইস্যু সামনে এলো।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সেন্টমার্টিন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।’ এর আগে সরকারি জোটের আরো দুই জন নেতা রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুও সেন্টমার্টিন বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে ওই দুই নেতা এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জুন বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা দেশ কাউকে ‘লিজ’ দিলে ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নেই। গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? আমি তো এইটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত দিয়ে এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। এখনো যদি বলি ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ লিজ দেবো, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নেই, আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।’

রাশেদ খান মেনন 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টমার্টিন চায়-এমন অভিযোগ তুলে সংসদের বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ও ক্ষমতাসীন সরকারের মহাজোটের নেতা রাশেদ খান মেনন। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দেয়া দীর্ঘ বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে (যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতের জোট) বাংলাদেশকে চায়। বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সবকিছু করছে। মেনন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই। বেশকিছু সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জে’র কৌশল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ সমার্থন ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাইডেন সাহেব (জো বাইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট), ট্রাম্পকে সামলান। আমাদের ঘর আমরা সামলাবো। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গ টেনে রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র তীব্র খাদ্যসংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সবকিছু করছে।

হাসানুল হক ইনু 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন চায় এ সংক্রান্ত যে বক্তব্যগুলো এখন চলছে এর সূচনা করেছেন হাসানুল হক ইনু। গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে হঠাৎ বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকা অতি উৎসাহী হয়ে উঠছে। নানা বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আমেরিকার এতো উৎসাহ কেন?’ তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ‘তারা গণতন্ত্র টার্ম ইউজ করছে। অথচ পৃথিবীতে এমন একটি দেশের নামও কেউ বলতে পারবে না, যেখানে আমেরিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বরং আমেরিকা যখন কোনো দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের সরকার বা বিরোধীদলের চেয়ে জনগণের জন্য বেশি দুর্ভোগ বয়ে আনে। আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে, আমেরিকার হঠাৎ এই অতি উৎসাহের হেতু কী? গণতন্ত্র নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ!’ 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর 

সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপিসহ বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়। সেন্টমার্টিন নিয়ে মিথ্যাচার করায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয় কি না? তিনি বলেন, বিএনপি সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে।’ ২০১৮ সনের ৩০ মে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুলের করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উত্তর ‘কারো কাছে প্রতিদান চাওয়ার অভ্যাস আমার কম। আমি পারলে মানুষকেই দিই। ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’ এমন কথার প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বরং তারাই (আওয়ামী লীগ) বলেছেন, আমরা সবই দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশল। ২২ জুন সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বিএনপি কখনই দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়নি। বরং সরকার তা করছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভিত্তিহীন, মিথ্যা।’ 

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় এক পত্রিকার সাংবাদিককে, মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর শন ম্যাকিনটোশ জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ শক্তিশালী এবং সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব বজায় রাখে। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। দেশটির কোনো ভূখণ্ডের ওপর আমরা কোনো দাবি করিনি। নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে আমরা মূল্য দিই এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ গণতন্ত্রের প্রচারে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করি।’

পরিশেষে

বাংলাদেশ নিয়ে একটা ভূরাজনীতির খেলা বিদ্যমান এটা কারোই অজানা নয়। কিন্তু এর ভেতরেও বাংলাদেশ তার নিজস্ব পলিসি অনুসারে ‘কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, বন্ধুত্ব সবার সঙ্গে’ যে নীতি রয়েছে সেটাই তো ফলো করে চলছে। বিশেষ করে, মিয়ানমার থেকে যে ১২ লাখ প্লাস বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ তা ঠেকাতে গিয়েও মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে জড়ায়নি বাংলাদেশ। সংযত থেকে এ বিশাল জনগোষ্ঠী মানুষ লালন করছে বাংলাদেশ। 

অর্থনীতিগতভাবে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে পরনির্ভরশীলতা রয়েছে। বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নত বিশ্বে। পরিসংখ্যান বলছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে সৌদি আরব থেকে। এরপরই অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা যে জোট (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কথা বলছে, তারাই মূলত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের গ্রহীতা। বাংলাদেশের ইনকামের ডলারগুলো এসব দেশ থেকেই আসছে। 

এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সবচে বিপদের মুহূর্তে কোভিডকালীন সময়ে পৃথিবীতে যে সমস্ত দেশে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়েছে, তার সবচে শীর্ষে বাংলাদেশকে রেখেছে। কারণ বাংলাদেশে তারা প্রায় ১২ কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে প্রদান করেছে। এতে করে বাংলাদেশের জনগণের সুরক্ষা ও বহির্বিশ্বে থাকা বাংলাদেশের শ্রমবাজার যাতে ব্যাহত না হয়, ওই ভ্যাকসিনে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হয়েছে-এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই ভ্যাকসিন এমন একসময় এসেছিল, যেটা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের মানুষের সুরক্ষরা জন্য প্রথম চুক্তি করেছিল ভারতের এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৩ কোটি ভ্যাকসিনের জন্য এবং অগ্রিম অর্থও প্রদান করেছিল। কিন্তু ভারত সামান্য (৭০ লাখ) ভ্যাকসিন দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করে আর দেয়নি, ঠিক সে মুহূর্তে। যখন গোটা বিশ্ব বিশেষ করে চীন, ইতালি, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে কোভিডে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিল, এবং হাজার হাজার মৃত্যুবরণ করে ও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল। গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। তাই বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূখ- চেয়ে বসবে এটা, কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না কোনোভাবেই। কিন্তু রাজনীতিবিদদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ জড়িয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছে এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাস এর প্রতিবাদ করে ব্যাখ্যা দিয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, যেহেতু মার্কিন দূতাবাস এ ঘটনার অস্বীকার করেছে। তাহলে এ মুহূর্তে উচিত আসল ঘটনার উদ্ঘাটন। কেন হাসানুল হক ইনু ও এরপর রাশেদ খান মেনন সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে এমন বক্তব্য দিলেন। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সরাসরি দেশের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু তার আগে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, আমেরিকা আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আরেকবার বলেছিলেন, আমেরিকা চাইলে ক্ষমতার ওলটপালট করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। বিশ্বের প্রভাবশালী এ দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন বাংলাদেশের জন্য। সাধারণ মানুষ তাই মনে করে। কিন্তু এমন এক দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের আড়ালে বিভিন্ন কথাবার্তায় তাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হলে তাতে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষতি। বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায় যেতে পারেনি, যে নিজ অর্থে দেশ পরিচালনা হওয়ার। কারণ এখনো কোনো না কোনো দেশের সহযোগিতা লাগছেই। যেমনটা উন্নয়নের জন্য জাপান, চীনের। বিভিন্নভাবে রাশিয়ার। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেরও। তাহলে শুধু রাজনীতির জন্যই এমন কথা আসে, এবং যেটা সেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় (সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়)। ফলে এমন ইস্যুর রহস্য কী এবং সাধারণ মানুষ মনে করেন, সেন্টমার্টিনের বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়া উচিত অবিলম্বে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)