২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন অসম্ভব


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 05-07-2023

২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন অসম্ভব

বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এখন শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, উন্নয়নশীল বিশ্ব পরিমণ্ডলে ছাড়িয়ে উন্নত বিশ্বের আকর্ষণের কেন্দ্রে। ২০২৩-এর বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিলগ্নে। সম্প্রসারণশীল অর্থনীতির দেশ দুই প্রধান উন্নয়ন অক্ষ  দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পরাশক্তিদেরও আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। পরাক্রমশালী প্রতিবেশী ভারত যেভাবে চায় প্রভাব বলয়ে রাখতে ঠিক সেইভাবে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশকে নিজেদের প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগ্রহী।

ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে জাপানের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে ব্যতিব্যস্ত। বসে নেই চীন, রাশিয়া নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে বাংলাদেশে অবস্থান সুদৃঢ় করতে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই বাংলাদেশের একশ্রেণির অবিবেচক রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা ধরে রাখা অথবা ক্ষমতা দখলের মদমত্ত নেশায় নিজেদের বিভেদগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেনে নিয়ে খাল কেটে কুমির আনতে চেষ্টারত। আর তাই বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি ক্রমাগত নাক গলাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত পানি ঘোলা হচ্ছে। আর ঘোলা পানিতে বাংলাদেশ বিরোধী অশুভ শক্তির মাছ শিকার করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সার্বিক বিচারে এটি কোনো পক্ষের জন্যই শুভ পরিণতি বহন করে না। একটি স্বাধীন সারভৌম যুদ্ধ জয়ী দেশের নিতান্ত নিজস্ব বিষয়ে কোনো পরাশক্তির নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কখনই সাধুবাদ জানান যায় না। 

সবাই চায় বাংলাদেশের মানুষ অবাধ নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের সরকার গঠনের সুস্থ পরিবেশ পাক। ২০১৪ বা ২০১৮ নির্বাচন ২০২৩ বা ২০২৪ পুনরায় হয় বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  বন্ধু দেশ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারের অঙ্গীকারের সহায়ক হয়ে অবদান রাখলে ভালো। কিন্তু নির্বাচন বিষয়ে সরকারকে অযাচিত পরামর্শ দিয়ে বাধ্য করার মোট পরিবেশ বাংলাদেশে আছে বলে মনে হয় না।  যারা ভাবছে দেশের বা বিদেশের কোনো শক্তি এসে সরকারকে প্রচলিত প্রথার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুন কিছু করতে প্রভাবিত করবে সেই পরিবেশ নেই। সম্মিলিত বিরোধীদল আন্দোলনেও সরকার হটানোর মতো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি।  এমতাবস্তায় বর্তমান অবকাঠামোর আওতায় থেকে যতটা সম্ভব অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা যায় সেটি সবার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ হওয়া উচিত। 

জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই সময়ে  বর্তমান সরকার সূচিত বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নয়ন অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হবে। কর্ণফুলী নদী তলদেশের বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামকে সাংহাই বা হংকংয়ের আদলে গড়ে তোলার পটভূমি রচনা করবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে দক্ষিণ বাংলার সঙ্গে যাতায়াত আরো বিস্তার লাভ করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ স্থাপন অর্জন নগরীর সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগ সুগম করবে। একই সঙ্গে মেট্রোরেলের আগারগাঁ মতিঝিল অংশ এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের বিমানবন্দর-তেজগাঁ অংশ এবং গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস রেপিড ট্রানজিট খুলে গেলে ঢাকার যানজট কিছুটা উন্নত হবে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আংশিক এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই সময়। এগুলোর সুফল ধীরে ধীরে আসবে, তবে মনে রাখতে হবে বৈদেশিক ঋণ সুদসহ পরিশোধের দায়বদ্ধতাও শিথিল হবে।

ঠিক এই সময়ে বিরোধীদল সরকার পতনের একদফার আন্দোলন শুরু করার এবং সরকারি দল রাজপথ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়ে জনমনে অশান্তি সৃষ্টি করা কতটা সুবিবেচনা প্রসূত দেশপ্রেমিক জনগণ বিবেচনা অবশ্যই করবে। সার্বিক অবস্থার বিচারে বাংলাদেশ কিন্তু অর্থনৈতিক  জ্বালানি সংকট নিয়ে অনেক কাজ করতে হবে। এই মুহূর্তে অরাজকতা সৃষ্টি কারো জন্যই শুভ ফল  আনবে না। 

আশা করি দেশপ্রেমিক মহল সক্রিয় হয়ে রাজনৈতিক নেতাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে। আমি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারি দলের শঙ্কিত হওয়ার কারণ দেখি না।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)