অবসরের ঘোষনায় ‍যা বললেন তামিম..


নিজস্ব প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 06-07-2023

অবসরের ঘোষনায় ‍যা বললেন তামিম..

আফগানিস্তানের সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ চলাকালে জাতীয় দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন। সিরিজের মাঝপথে অধিনায়কের এমন ঘোষনা ক্রিকেট দুনিয়ায় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে বিসিবি কিছুই জানে না। এখানে অনেকটাই বিব্রত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এরপরও অভিযোগের তীর সেই বোর্ড পানেই...। নিম্মে দেয়া গেল তামি কী বলেছেন সে কথাগুলো। তবে তামিম অনেক কথাই বলেছেন, ইংরেজীতে। বাংলা ও ইংরেজী মিলিয়ে বলা স্বভাবসূলভ বক্তব্যে তুলে ধরা হলো দেশ এর পাঠকদের জন্য.....


তামিম ইকবাল

“নর্মালী এম কোনো পরিস্থিতিতে মানুষ লিখে আনে স্পিচ। আমি ওইভাবে লিখে আসিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের (তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে) ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। এখন থেকে এটা কার্যকর এটা। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। তাছাড়া এর পেছনেও অনেক কারন রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর সব এখানে বলার দরকার আছে বলে আমি মনে করিনা। ফ্যামেলী মেম্বারদের সঙ্গেও কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমি মনে করি এটাই আমার অবসর নেয়ার জন্য পারফেক্ট টাইম।


প্রেস কনফারেন্সে ক্রন্দনরত তামিম/ছবি সংগৃহীত


আমি সব সময়ই একটা কথা বলেছি যে, আমি ক্রিকেট খেলেছি, (কান্না...........), আমি সবসময় বলি আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি জানি না এটা আমি ঠিকঠাক পূরন করতে পেরেছি কি না। আমি জানিননা তাঁকে কতটুকু গর্বিত করতে পেরেছি। আমার এই ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। এখানে অনেক মানুষ আমাকে সাপোর্ট করেছেন। আমি তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।
 আমি আরও কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তাঁর নাম আকবর খান, ওনার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তার পরিবারের প্রতিও কৃতজ্ঞ। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে, তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, তাঁর কাছে আমি ছোট বেলা থেকে (কান্না............) ক্রিকেট শিখেছি/প্রাকটিস করেছি। আমি (তার কাছে) ঋণী।
আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। যত ক্রিকেটারের সঙ্গে এই পর্যন্ত খেলেছি, সেই অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে, এরপর অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, ১৯, প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ, এ দল, জাতীয় দল সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বাংলাদেশের সব অধিনায়কদের ধন্যবাদ জানাই।
আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। আমি একটা জিনিসই বলতে চাই সেটি হলো, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি আমি আমার সেরাটাই দিয়েছি বলে মনে করি। (কান্না..........) আমি কতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলাম, আদৌ ভালো ছিলাম কিনা, আমি জানি না। তবে আমি সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্ত আমি যখনই মাঠে নেমেছি আমি আমার শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে, কিন্তু আপনারা দেখছেন, আমি কথাই বলতে পারছি না। আমি আশা করি, আপনারা পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করবেন (কান্না............)। কথা বলার জন্য এটা খুব আদর্শ পরিস্থিতি নয়। বিশেষ করে এত বছর পর খেলার পর এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাবে বিদায় বলাটা খুব সহজ কিছু নয়। তাই, আমি আশা করি আপনারা আমাকে বোঝার চেষ্টা করবেন।
আমি খুবই দুঃখিত এত অল্প সময়ের নোটিশে আপনাদের সবাইকে ডাকা হয়েছে এখানে। আপনারা এসেছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমি একটা অনুরোধ করতে চাই আপনাদের। আগামী দিনে যারা ক্রিকেট খেলতে আসবে। আপনারা তাদের নিয়ে ভালো কথা লিখবেন। খারাপ লিখবেন। কী লিখবেন, সেটা আপনাদের বিষয়, কিন্তু দয়া করে ক্রিকেটের মধ্যেই থাকবেন। দয়া করে ক্রিকেটের বাইরে যাবেন না। যদি তারা ভালো করে ভালো লিখবেন, খারাপ খেললে, সেভাবে লিখবেন, সমালোচনা করবেন। খুবই ভালো কথা। আমি মনে করি, আমরা সবাই জানি, অনেক সময় আমরা আমাদের সীমা অতিক্রম করে যাই।
এটা ক্রিকেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর। বিশেষ করে সামনে বিশ্বকাপ। সুতরাং আমি আশা করব আপনারা বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকবেন। সেটা নিজেদের দলের অংশ মনে করেই। দলকে সমর্থন জানিয়ে যাবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আবারও একটা জিনিস বলি, আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।

প্রেসনফারেন্সের সুচনায় কিছুক্ষনের জন্য নির্বাক তামিম/ছবি সংগৃহীত



আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম আমার প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য। কতটুকু পেরেছি আমি জানি না। আমি দুঃখিত যদি ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে কারও নাম উচ্চারণ না করে থাকি। কিন্তু এটা বলতে চাই, একজন ক্রিকেটার হিসেবে, গড়ে উঠতে, একজন ভাল মানুষ হতে যারাই আমাকে সাহায্য করেছেন তাদের আমি হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই।

আমি আমার মাকে কীভাবে ভুলি! আমার ভাইয়েরা, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান, আমার এই যাত্রাপথে তাদের অনেক ভুগতে হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আনন্দিত হওয়ারও অনেক উপলক্ষ ছিল। আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে বেশী আর কিছু বলার নেই।
আরেকটা অনুরোধ করব, আমার এই বিষয়টা এখানেই শেষ করে দেন। এটা নিয়ে বেশি গুঁতোগুঁতি করিয়েন না। করার দরকার নেই। কেননা এটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট। কেন, কী, আরও কী হতে পারত, কেন হতে পারত এসব। আমি সব সময়ই বলি, ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড়। আমরা সবাই দলের দিকে মনোযোগ দিই। সিরিজে এখনো দুটি ম্যাচ বাকি আছে। আমি সব সময়ই মনে করি এই সিরিজটা আমাদের জেতা উচিত। এরপর দুটি বড় টুর্নামেন্ট আছে।
আমার আর কিছু বলার নেই। আশা করি আপনাদের সঙ্গে অন্য কোথাও দেখা হবে।”  
উল্লেখ্য, প্রেসকনফারেন্সে কথা শেষ করেই তামিম সোজা উঠে চলে যান। সাংবাদিকদের শত অনুরোধে একটি কথাও আর বলেননি।  


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)