যে কারণে তীব্রতর হচ্ছে জ্বালানি সংকট


সালেক ‍সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 26-07-2023

যে কারণে তীব্রতর হচ্ছে জ্বালানি সংকট

বাংলাদেশে গ্যাস সাপ্লাই চেইন সুনিয়ন্ত্রিত করার উদ্দেশ্যে বিশ্বের অন্যান্য গ্যাস ব্যবহারকারী দেশগুলোর অনুকরণে পেট্রোবাংলার আওতায় থাকা এককেন্দ্রিক সমন্বিত ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে অনুসন্ধান, উন্নয়ন, উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ ও বিপণন  ব্যবস্থাপনাকে পৃথক কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

প্রতিটি কাজ পৃথক কারিগরি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন বিধায়, এই বিষয়গুলোতে বিশেষজ্ঞ যোগ্যতা থাকা অপরিহার্য ছিল। কিন্তু প্রকৃত পেশাদারিত্ব বিকশিত না হওয়ায় পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলোতে মেধার বিকাশ আর দক্ষতা বৃদ্ধি হয়নি। প্রকৃতপক্ষে পেট্রোবাংলা নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস ও কয়লা অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় দেশে এখন প্রথমিক জ্বালানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। পেট্রোবাংলার শীর্ষ পদগুলোতে যারা আছেন, তাদের কারিগরি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। কোম্পানিগুলোর পরিচালকম-লীতেও মূলত সবাই অকারিগরি আমলা। 

জ্বালানিসম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য দায়িত্বে আছে বাপেক্স। পেট্রোনাস, পার্টামিনা বা নিদেনপক্ষে ওএনজিসির মতো বাপেক্সকে গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার দূরদর্শী দিকনির্দেশনার অভাবে সেটি হয়নি। এতদ্সত্ত্বেও বাপেক্স সীমিত সম্পদ এবং সামর্থ দিয়ে বেশকিছু সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় বাপেক্সের মতো একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত কোম্পানির পক্ষে এককভাবে দেশের জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উন্নয়নের মতো কাজে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করা অকল্পনীয়। ফলশ্রুতিতে ২০০০-২০২৩ পর্যন্ত দেশে জ্বালানি অনুসন্ধান কাজে অনেক পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। স্থলভাগে এখনো অনেক স্থানে অনুসন্ধান হয়নি, সাগরসীমায় অনুসন্ধান হয়নি বলাই চলে। আর সরকারের ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আবিষ্কৃত কয়লাসম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে। 

বাপেক্সসহ আরো দুটি কোম্পানি বিজিএফসিএল এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড আঞ্চলিক ভিত্তিতে গ্যাস, কনডেনসেট উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছে। আবিষ্কৃত গ্যাসসম্পদ নিঃশেষ হতে থাকায় কোম্পানিগুলোর কাজ সীমিত হয়ে আসছে। যেভাবে চলছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ নাগাদ দেশীয় গ্যাস কোম্পানি বিশেষত বিজিএফসিএল এবং সিলেট গ্যাস কোম্পানির কাজ সংকুচিত হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বিত করে পেশাদারী দক্ষতায় পরিচালনার জন্য একটি সমন্বিত জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উৎপাদন কোম্পানি গঠন করলে ভালো হবে। সেক্ষেত্রে সেই কোম্পানিটিকে জলভাগ এবং স্থলভাগে কাজ করার জন্য পেট্রোনাস বা ওএনজিসির মতো গড়ে তোলা যাবে। 

গ্যাস সাপ্লাই চেইন অনুযায়ী অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদন কার্যক্রমকে আপস্ট্রিম অ্যাকটিভিটিস বলা হয়। এরপর আসে মিডিস্ট্রিম অ্যাকটিভিটি বা গ্যাস ট্রান্সমিশন বা সঞ্চালন। এই কাজটি করার জন্য বাংলাদেশে আছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি বা জিটিসিএল। এই কোম্পানির অধীনে এখন দেশজুড়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার উচ্চ চাপ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন এবং স্থাপনা রয়েছে। এই কোম্পানি পেট্রোবাংলা এবং আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানিসমূহের কাস্টোডি ট্রান্সফার মিটারসমূহ থেকে পাইপলাইন মানসম্পন্ন গ্যাস পরিবহন করে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাস্টোডি ট্রান্সফার স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু সব সরবরাহ কেন্দ্রে কাস্টোডি ট্রান্সফার মিটার না থাকায় বর্তমানে গ্যাস সিস্টেম লস পরিমাপে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ট্রান্সফার পয়েন্টে আধুনিক মিটার থাকার কথা এবং এগুলো মাসিক পরিমাপের সময় যৌথ ক্যালিব্রেশন হওয়ার কথা। এগুলো না হয়ে থাকলে বিতর্ক হবেই। 

ডাউনস্ট্রিয়ামে গ্যাস বিতরণ এবং বিপণনের দায়িত্বে আছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্তফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। গ্যাস অপচয়, অনিয়ন্ত্রিত অবৈধ সংযোগ, গ্যাস চুরি প্রধান সমস্যা, জরাজীর্ণ গ্যাস বিতরণ সিস্টেমের কারণে প্রায়শই গ্যাস দুর্ঘটনা হচ্ছে। জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। 

পেট্রোবাংলাকে পেশাদারী মডেলে ঢেলে সাজানো না হলে বর্তমানে রুগ্ণ থাকা জ্বালানি সেক্টর কখনো নতুন জীবন ফিরে পাবে না। সবাই সবকিছু পারে মনে করে পেট্রোবাংলায় চেয়ারম্যান, পরিচালক নিয়োগ অব্যাহত থাকলে কখনো জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি হবে না।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)