রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ


খন্দকার সালেক , আপডেট করা হয়েছে : 30-08-2023

রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ

লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ ৫২ বছর বয়সে এসে ব্যাপক উন্নয়ন বিশ্বের বিস্ময়। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন যাত্রার মিলন মোহনায় দাঁড়ানো বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পরাশক্তিসহ আঞ্চলিক পরাশক্তিগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অনাকাকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ এখন অপার উন্নয়ন সম্ভাবনার দুয়ারে দাঁড়ানো। তবে কিছু ভুল উন্নয়ন কৌশল, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং কিছু অশুভ মহলের অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির কারণে ক্ষেত্রবিশেষে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ। ঠিক এমনি অবস্থায় কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে আরো একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে। বাংলদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সাড়ে ৯ মাসে গৌরব আর গর্বের স্বাধীনতা অর্জনের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ২০৯-২০২৩ পর পর তিন টার্ম শেষ করবে ডিসেম্বর ২০২৩। 

নির্বাচন হতে হবে ডিসেম্বর ২০২৩ শেষে অথবা জানুয়ারি ২০২৪ শুরুতে। নির্বাচন নিয়ে দেশে এবং বিদেশে নানা আলোচনা নানা সমালোচনা। শুভাকাক্সক্ষীরা চায় নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। শাসক দল বিদ্যমান কনস্টিটিউশন অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন করতে কৃতকল্প। অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের সঙ্গে কিছু প্রান্তিক দল চায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন। এমতাবস্থায় বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের অনুসারী পশ্চিমা দেশগুলো মানব অধিকারের ধুয়া ও ভুল উন্নয়ন কৌশল, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার সুযোগ নিয়ে নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ক্ষেত্রবিশেষে বিরোধীদলগুলোকে মাইলেজ দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানো প্রভাবশালী দেশ ভারত, রাশিয়া এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার চীন কিন্তু তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে চায় বাংলাদেশে স্থিতিবস্থা বজায় থাক। বাংলাদেশের মানুষ যেন নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি নিজেরাই সমাধান করুক।

সবাই স্বীকার করবে বর্তমান সরকারের গত ১৫ বছর সময়ে দেশ সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাস মুক্ত হয়েছে। দেশব্যাপী বোমা, গ্রেনেড সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। দেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। শতকরা শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। দেশব্যাপী সড়ক, রেল, জলযান, বিমান যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, বিয়ানীবাজার থেকে পটুয়াখালী এখন ৮-১০ ঘণ্টার দূরত্বে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে গ্রামগঞ্জে। তবে কিছু ভুল কৌশলে এবং সরকার সমর্থক কিছু দুর্নীতিপরায়ণ মাফিয়া সিন্ডিকেটদের দৌরাত্ম্যে উন্নয়নের ফসল সাধারণ মানুষদের দুয়ার গোড়ায় পৌঁছায়নি। সম্পদের সুষম বণ্টন হয়নি। তবে এতদসত্ত্বেও সরকার প্রধানের সাহস, দৃঢ়তা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। 

বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা হলো এখানে জনগণের ভোট সরকার নির্বাচিত হবে। ২০১৪ বিরোধী দল বিবর্জিত নির্বাচন অথবা ২০১৮ আমলা পুলিশ নিয়ন্ত্রিত বিতর্কিত নির্বাচন বর্তমান বাস্তবতায় আর হওয়ার সুযোগ নেই। সেনাবাহিনী বা বিদেশি শক্তি কোন দলকে ক্ষমতায় বসাবে সেই সুযোগ আর হবে না। সরকার প্রধান যদি নিজের দলের বিতর্কিত এবং কথিত দুর্নীতিপরায়ণ মন্ত্রী-সাংসদের বর্জন করে তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেন, তাহলে নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন, আমি বাংলাদেশে আমার ব্যাপক সংযোগ থেকে বলছি শাসক দলের ভয়ের কিছু নেই। তবে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্তরিকতার বাস্তব প্রমাণ দেখাতে হবে, নির্বাচন অঙ্গীকারে আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে মেধাভিত্তিক প্রাধান্য প্রদানের কথা বলতে হবে, সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা জানাতে হবে এবং দেশের নিজস্ব প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়নের পথ নকশা ঘোষণা করতে হবে। দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বিদেশি মুদ্রা ফিরিয়ে আনার বাস্তব সম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। 

২০২৪ থেকে ২০২৮ সময়টা কিন্তু বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী ক্ষয়িষ্ণু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সংকটের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত হতে হলে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বাজার সিন্ডিকেটকে ধ্বংস করতেই হবে। সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে জনগণকে স্বস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশকে কিন্তু রফতানি বহুমুখী করে এবং বিশেষত প্রবাসগামী শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নাহলে বিদেশি জ্বালানি আমদানি এবং সুদসহ বিপুল বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ চাপ সামাল দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। 

আগামী সরকারের আরো একটি কাজ হবে মেধাবী তরুণ সমাজকে দেশ থেকে অবদান রাখার সুযোগ সম্প্রসারিত করা। বর্তমান সরকার কিন্তু তরুণদের চাকরির পেছনে না ছুটে এন্টারপ্রেনার হওয়ার বিষয়ে প্রণোদনা দিচ্ছে। সেটি সম্প্রসারণ করা হলে তরুণ সমাজ  দেশকে অর্থনৈতিক বিপ্লবের দিকে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক প্রভাব থাকবেই। তবে শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সরকারি এবং বেসরকারি যৌথ উন্নয়ন দর্শনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হয়ে থাকবে। দেশের রাজনীতিবিদদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশে প্রভু খোঁজার কোনো প্রয়োজন নেই।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)