প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুটা ক্রমশই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দেশে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যেখানে আবধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোটের। দেশের রাজনীতে বিরোধীদল বিএনপিসহ সমমনাদের যখন কঠোর ভাষায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলণরত, সে মুহূর্তে প্রফেসর ইউনূস প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকার ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে বাগ্বিতণ্ডা ও টানাপড়েন সেটাই হট ইস্যুতে রূপান্তরিত।
ইউনূস প্রসঙ্গটা নতুন নয়। কিন্তু সেটা এ মুহূর্তে বার্নিং ইস্যুতে রূপ দেওয়ার পেছনে ঘটনা ঠাহর করা না গেলেও সূচনা হয় বিশ্ব নেতাদের মাধ্যমে। একের পর এক বিবৃতিতে সরকার অনেকটাই তটস্থ। বিশেষ করে যখন একটা বিচারাধীন ইস্যুতে বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দ অনাবরত বিবৃতি দেন এবং ইউনূস প্রসঙ্গের সঙ্গে জড়িয়ে যখন আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ারও কথা উঠে আসে ওই বিবৃতিতে, তখন কিছুটা হলেও ক্ষমতাসীন দলের গায়ে আঁচড় কাটার কথা। যেখানে সরকার বারবারই বলছেন, আগামী নির্বাচনটা তারা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করছেন। এরপরও বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কেন আস্থা রাখতে পারছেন না ওই কথায়।
বেশ কিছুদিন থেকেই ইউনূস প্রসঙ্গটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বিশ্ববরেণ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধই ছিল। তারা যেমনিভাবে মামলা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন, তেমনি সরকার প্রধানও আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা ল’ইয়ার পাঠিয়ে মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করে যে ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সঠিক কি না। এ আহ্বানেও সাড়া দিয়ে কথা বলেছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটন। তারা মামলা অবজার্ভ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। সমস্যা হয়ে গেছে দেশের প্রশাসনে। এখন ইউনূসবিরোধী প্রশাসনের কেউ কেউ প্রকাশ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।
সূচনা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন আলাদা বিবৃতি দেওয়ার পর ৪০ বিশ্বনেতা এরপর শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ দেড় শতাধিক বিশ্ববরেণ্য নেতার বিবৃতিতে ইউনূস ইস্যু পানে গোটা বিশ্বের যেন চোখ।
দেড় শতাধিক বিশ্ববরেণ্য নেতার যে খোলাচিঠি ছাপা হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টে, নিউইয়র্ক টাইমসে, সে ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ব্রিকস থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ইউনূস প্রসঙ্গে বলেন, বিবৃতি না দিয়ে তারা এক্সপার্ট পাঠাক। যদি এতোই দরদ থাকে, তারা ল’ইয়ার (আইনজীবী) পাঠাক। মামলার সব দলিল দস্তাবেজ খতিয়ে দেখুন। তারাই দেখে বিচার করে যাক, এখানে কোনো অপরাধ আছে কি না। তবে আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার খুব অবাক লাগছে। ভদ্রলোকের যদি এতোই আত্মবিশ্বাস থাকতো যে, তিনি কোনো অপরাধ করেননি, তাহলে ওই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাছাড়া সবকিছু একটা আইন মতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের পক্ষে যদি লেবার কোর্টে মামলা হয়, তাহলে আমাদের কি সেই হাত আছে আমরা মামলা বন্ধ করে দেবো। আর চলমান মামলা নিয়ে আমরা তো আমাদের দেশে আলোচনাও করি না, কারণ এটা সাবজুডিস (আদালত অবমাননা)। সেখানে বাইরে থেকে বিবৃতি এনে দাবি করা হচ্ছে, মামলা প্রত্যাহার করার? এখানে আমার কোনো অধিকারটা আছে আপনারাই বলেন, সে পাওয়ারটা দিয়েছেন আমাকে? জুডিশিয়ারি তো সম্পূর্ণ স্বাধীন। লেবার ল’ নিয়ে তো বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ করে আইএলওতে অনেক কথা শুনতে হয়, বিভিন্ন নালিশের পরিপ্রেক্ষিতে সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের কোম্পানি আইনে আছে লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে এখন সেটা যদি কেউ না দেয় এবং এজন্য তারা যদি মামলা করে এবং মামলা করার ফলে তাদের যদি চাকরিচ্যুত করা হয় এবং তার জন্য তারা যদি আবার মামলা করে, তাহলে সেই দায়দায়িত্ব তো আমাদের নয়। আবার এই মামলা যাতে না হয়, সেজন্য ঘুষ দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমন বহু নোবেল লরিয়েট রয়েছেন, যারা কারাগারে বন্দি আছেন পরবর্তীতে অপরাধমূলক কাজের জন্য।” সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান- গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি তুলতেন সরকারি হারে বেতন-উল্লেখ করে সাবেক এমডি ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “সরকারি বেতনভুক্ত একজন ব্যাংকের এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কীভাবে ইনভেস্ট করে আর বাণিজ্য করে?” তিনি বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন, আর দুর্নীতিবাজ ধরা পড়লে পছন্দের হলে তার কোনো দোষ নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করবে, কে বিবৃতি দিলো, না দিলো সেটা আদালতের দেখার দরকারটা কি এবং আদালত এতে প্রভাবিত হবে কেন? আদালত ন্যায়বিচার করবে। আওয়ামী লীগ সব সময় শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে, যোগ করেন তিনি।
৫০ সম্পাদকের বিশ্ববরেণ্যদের খোলাচিঠির প্রতিবাদ
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বিবৃতিদাতাদের প্রতিবাদে দেশের ৫০ জন সম্পাদক ওই খোলা চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা ওই চিঠিকে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বলে তারা অভিহিত করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের অনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া একটি খোলাচিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি একটি সার্বভৌম দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের বিবৃতি বা খোলাচিঠি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকারসংক্রান্ত বিধানাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত এবং নোবেল বিজয়ীদের এ ধরনের বিবৃতি এবং চিঠি অনাকাক্সিক্ষত এবং অনৈতিক। একজন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না এবং বিচার করা যাবে না-এমন দাবি ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী। আমরা মনে করি, তারা মামলা সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে এমন দাবি করেছেন। তাই আমরা তাদের অথবা তাদের প্রতিনিধি এসে মামলায় ড. ইউনূসকে আদৌ হয়রানি করা হচ্ছে কি না, তা তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ যে কোনো মহলের এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়াও আলাদা বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ১৪ দল।
মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রফেসর ইউনূসকে হয়রানি না করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ড. ইউনূস এমন একজন মানুষ, যাকে শত বছর পরও এই জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তারা এই ভেবে লজ্জিত হবে যে, এ রকম একজন বরেণ্য মানুষের সঙ্গে এই দেশের সরকার কী রকমের নীচ আচরণ করেছিল।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওনাকে (ড. ইউনূস) যারা ছোট করতে চান, অপমান করতে চান, তারা আরেকবার জন্ম নিলেও ওনার সমান উচ্চতায় যেতে পারবেন না। এই অনিবার্য সত্য মেনে নিয়ে ওনাকে হেনস্তা বন্ধ করুন। এসব মামলাবাজি বন্ধ করুন।’
আইনি লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন দুদক আইনজীবী
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের পক্ষে আইনি লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন দুদকের সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতর নতুন আইনজীবী নিয়োগ করায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। এর আগে শ্রম আদালতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় আরও ১৮টি মামলা হয়েছে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে। গত ২৮ আগস্ট ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন শ্রমিক বাদী হয়ে পৃথকভাবে মামলাগুলো করেন।
ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর দেবেন না ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি মনে করেন, ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএজি এমরান আহম্মদ বলেন, ড. ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জন বিদেশি ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিবৃতিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন রয়েছেন। এই বিবৃতির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাকে সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবো না। আমি মনে করি, তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এবং মামলা করে তাকে বিচারিক হয়রানি করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর শুরু করেছেন।
সিদ্ধান্ত বদলালেন খুরশীদ আলম খান, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলায় লড়বেন
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের হয়ে মামলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জানিয়েছে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের করা মামলা পরিচালনা করবেন তিনি। গত ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ১০টার সময় আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিজেই মিডিয়াকে এ কথা জানান।
এর আগে সোমবার দুপুরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মামলা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে মামলা পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে খুরশীদ আলম খান বলেন, তার পল্টনের চেম্বারে রাতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসেন। তারা আশ্বস্ত করেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের আইনজীবী হিসেবে তিনি সব জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন। তাই তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করবেন।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়েছেন সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি মনে করেন ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধে বিশ্বনেতারা যে বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার একটি সিদ্ধান্ত আমাদের প্রাইভেট হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়। যেখানে ৪ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকাল ৪টার মধ্যে বিবৃতি স্বাক্ষর করার কথা বলা হয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষর করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্বাক্ষর করার সঙ্গে একমত নই। আমি মনে করি, ড. ইউনূসের বিষয়ে যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে সেটির প্রয়োজন নেই। আর আমি মনে করি, ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তা অন্যভাবে ডিল করা যেত। এটা এক প্রকারের প্রেশারে রাখার জন্যই করা হচ্ছে বলে আমার মনে হয়েছে।