স্মরণঃ কবি জুলহাস খান


রিয়াজ উদ্দীন ইসকা , আপডেট করা হয়েছে : 11-05-2022

স্মরণঃ কবি জুলহাস খান

আমেরিকার মিশিগানে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে আমার প্রিয় অনুজ জুলহাস খান। ফেঞ্চুগঞ্জের রাজনপুর গ্রামের খানবাড়ির সুদর্শন যুবক জুলহাস  খান আমার অন্যতম প্রিয়দের একজন। শুধু আমার নয়, ফেঞ্চুগঞ্জবাসীর প্রিয়পাত্র সে। কারণ, তারুণ্যের উচ্ছলতায় সে বখে যায়নি। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার সংলগ্ন গ্রামের ছেলে হয়েও অকারণ বাজে আড্ডা দেয়নি। আচার-আচরণে, পোষাক-পরিচ্ছদে ভদ্রছেলে হিসেবে সবার ভালবাসা অর্জন করেছিল। শান্তশিষ্ট জুলহাসের বিরুদ্ধে কখনো কোনো নালিশ শুনা যায়নি। অথচ সে ঘরকুণো ছিল না। বরং সামাজিক - সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল স্কুলজীবন থেকেই। জুলহাসের স্কুলজীবনের বন্ধুমহলে ঘনিষ্ট ছিল এখন আমেরিকাপ্রবাসী কবি, সংস্কৃতিসেবী বদরুজ্জামান রুহেল, লণ্ডনপ্রবাসী কবি সুয়েব আহমদ, জিয়াউর রহমান সুজন, সাংবাদিক দেলওয়ার হোসেন পাপ্পু, জালাল, জাকির খানসহ কয়েকজন।  সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুবাদে তাদের সাথে আমার হার্দিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

শিক্ষা জীবনে একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে এলাকায় জুলহাসের বেশ পরিচিতি ছিল।  আশি দশকের শেষের দিকে   জুলহাস তখন নিয়মিত কবিতা লিখত। সেইসময় ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে প্রতিবছর বের হত কয়েকটি সাহিত্য সংকলন। সে গুলোতে জুলহাসের কবিতা প্রকাশিত হত। ন্যাশনাল ডেইলি নিউজ পেপার “ অবজারভার” পত্রিকায় একাধিক কবিতা ইংরেজীতে প্রকাশিত হয়েছে।


কবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বিপুল সম্ভাবনা ছিল তার। জুলহাসের লেখা কবিতা গুলো আমার হাতের নাগালে নেই। যদি তার কবিতা গুলো তুলে ধরতে পারতাম তাহলে তার মনন, কবিমানস ফুটে উঠত।) তাদের বন্ধুর পিতা, ফেঞ্চুগঞ্জের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ডাঃ আর, কে, দাসের মৃত্যুর পরে জুলহাস,পাপ্পু'বিষণ্ণ মলাট' নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করেছিল। তাদের স্কুলছাত্রত্বের সময়ে একটি স্মরণিকা প্রকাশের বিষয়টি আমার মন জয় করে নেয়। এর মূদ্রণব্যবস্থাপনায় আমিও যুক্ত হয়ে পড়ি। আমেরিকার কঠিন প্রবাসজীবনের আবর্তে ঢুকে তার কলমের গতি কিছুটা কমে গেলেও থমকে যায়নি।

 দুই যুগের প্রবাসজীবনে জুলহাস বাহুল্য-বিলাসিতায় গা ভাসায়নি। ফুটবল মাঠের গোলরক্ষক জুলহাসের সতর্ক সাবধানী জীবন ছিল। কাঁধে নিয়েছিল পারিবারিক দায়িত্বের ভার। ভাইবোনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে অনেকটা নির্ভার হয়েছিল। এই বিবেচনায় জুলহাস একজন সফল মানুষ। সুখী মানুষ। জীবনের এই প্রান্তে হৃদাঘাতে তার আকস্মিক মৃত্যু বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মত। পবিত্র তারাবীহের নামাজরত অবস্থায় হৃদযন্ত্রের বিগড়ে যাওয়াজনিত মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন হলেও আল্লাহর ইচ্ছাতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। জুলহাসের অবুঝ সন্তানদের, শোকাহত পরিবারকে শান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই। 


জুলহাস আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার পরে তার একমাত্র অনুজ, সাংবাদিক জুয়েল খান আমার আত্মার মানুষ হয়ে যায়। জুলহাস, জুয়েল দুইভাইয়ের বিনয়ী আচরণ যে কারোর ভালবাসার পাত্র বানিয়ে দেয়। আমার প্রতি জুয়েল খানের আলাদা সংবেদনশীলতা আছে। বড়ভাই জুলহাসের প্রতি জুয়েলের অসীম শ্রদ্ধা ও মান্যতার কথা আমার জানা আছে। জুয়েলসহ তার পরিবার, সুহৃদ-স্বজনদের সমব্যথী হই। জুলহাসের অর্ধেক জীবন কেটেছে আমেরিকায়। আমার এই লেখায় তার তরুণকালের স্মৃতি আছে। তার প্রবাসজীবনকেও তুলে ধরার তাগিদ অনুভব করছি। তাই কবি জুলহাস খান স্মরণে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করার প্রয়োজন অনুভব করছি। তার প্রকাশিত, অপ্রকাশিত কবিতা গুলো এবং ঘনিষ্টজনদের স্মৃতিচারণা প্রকাশ করতে পারলে একজন ভালো মানুষের কথা, একজন সফল মানুষের কথা আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। আমি বিনীত চিত্তে জুলহাস খানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

রিয়াজ উদ্দীন ইসকা, সভাপতি, ফেঞ্চুগঞ্জ প্রেসক্লাব, সিলেট।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)