শিল্পীর ক্ষুধা কখনো মেটে না


আলমগীর কবির , আপডেট করা হয়েছে : 15-11-2023

শিল্পীর ক্ষুধা কখনো মেটে না

আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশি অভিনেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মূলত বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন। তার অভিনয় ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠক প্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির। 

প্রশ্ন: আপনার অভিনয়ের শুরুর দিক নিয়ে একটু স্মৃতিচারণ করবেন?

আসাদুজ্জামান নূর: অভিনয়ের ভাবনাটা ছাত্র অবস্থায়ই ছিল। তবে টেলিভিশনে প্রথম নাটক করেছি ১৯৭৪ সালে। ওই নাটকের নাম ছিলো ‘রঙের ফানুস’। আবদুল্লাহ আল-মামুনের লেখা। নাটকের মূল চরিত্রে ছিলেন ফেরদৌসী মজুমদার আর হায়দার রিজভী আমাদের গওহর রিজভী সাহেবের বড় ভাই। আমার ২-৩ মিনিটের ছোট্ট একটা চরিত্র ছিল পাশের বাড়িতে থাকি আরকি। এটা দিয়েই শুরু।

প্রশ্ন: আপনার পরিচিতির ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ নামটি বারবারে উঠে এসেছে। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

আসাদুজ্জামান নূর: টেলিভিশনে আমার যা কিছু সফলতা, সেটার পেছনে আমি হুমায়ূন আহমেদকে অনেক বড় করে দেখি। আমার নিজের যেটা মনে হয়েছে, টেলিভিশনে আমাদের সময়ে যে অভিনয়টা হতো, সেটা একটু...ঠিক কী বলব?

প্রশ্ন: শিল্পী হিসাবে অভিনয়ের ক্ষুধা কি মেটে?

আসাদুজ্জামান নূর: না, শিল্পীর ক্ষুধা কখনো মেটে না। বার বার ওই জায়গায় ফিরতে ইচ্ছে করে। শিল্পীর ক্ষুধা থেকেই যায়। থাকাটাই স্বাভাবিক। একটি নাটকে বা সিনেমায় যত ভালো অভিনয় করা হোক না কেন, পরের কাজটির জন্য আকাঙ্খা আরও বেড়ে যায়। ফলে শিল্পীর ক্ষুধা কখনো মেটে না।

প্রশ্ন: বিভিন্ন মাধ্যমে সুদীর্ঘকাল ধরে অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে প্রিয় জায়গা কোনটি?

আসাদুজ্জামান নূর: অবশ্যই মঞ্চ। মঞ্চে অভিনয় করার আলাদা একটা আনন্দ আছে। সরাসরি দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়া যায়। দর্শকরা কতটুকু গ্রহণ করলেন, তা সরাসরি দেখা সম্ভব। বার বার আমি মঞ্চেই ফিরতে চেয়েছি। রিমান্ড নামে নতুন একটি নাটক করছি মঞ্চে। আমার চরিত্রটি একজন লেখকের। রিমান্ড নাটকটি করে অনেক ভালো লাগছে। নাটকটি আমার জন্য খুব শ্রমসাধ্য ব্যাপার ছিল। তারপরও করেছি। একজন পারফরমার হিসেবে এই নাটকটি করে আমি তৃপ্ত। একজন অভিনেতা হিসেবে মঞ্চে ফেরার ইচ্ছেটা আমার ভেতরে প্রবল। ফিরেছিও। সামনে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে মঞ্চে। যখনই সুযোগ পেয়েছি, তখনই মঞ্চে বা টেলিভিশনে অভিনয় করার চেষ্টা করেছি।

প্রশ্ন: অভিনয়ের ক্ষেত্রে এই বয়সে এসে সেভাবে মনের মতো চরিত্র কি পাচ্ছেন?

আসাদুজ্জামান নূর: না। মঞ্চে আমি ওই জায়গাটা পাই। মঞ্চে পছন্দমতো চরিত্র পাই। কিন্তু টেলিভিশন নাটকে বয়স অনুযায়ী সেরকম চরিত্র এখানে কম হয়।

প্রশ্ন: আপনার কোনো আফসোস কিংবা অপূর্ণতা আছে কি?

আসাদুজ্জামান নূর: না, কোনো আফসোস নেই। এসব নিয়ে ভাবি না। কাজ নিয়েই ভাবি। কর্মটাই সব। সারাজীবন কাজের মধ্যে থাকতে চেয়েছি। তাই হয়েছে। আফসোস, অপূর্ণতা এসব নিয়ে কখনো ভাবিনি। মানুষ বেঁচে থাকে কর্মের মধ্যে দিয়ে।

প্রশ্ন: আপনার জীবনটা তো নানাদিকে ছড়ানো। এটা কি প্রভাব ফেলেছে?

আসাদুজ্জামান নূর : সম্প্রতি আমি একটা লেখা লিখেছি। ওটা এখনো ছাপা হয়নি। ওখানে আমি লিখেছি- জীবন তো নানাক্ষেত্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল। একদিকে ব্যবসা, একদিকে সাংস্কৃতিক অঙ্গন, আরেকদিকে রাজনীতি। নানামুখী ব্যস্ততা। তারপরও সময় করে প্রতিটি কাজ করার চেষ্টাটা ছিল। তবে, আমার মধ্যে থিয়েটারে ফেরার ইচ্ছেটা প্রবল নানা কাজের ভিড়েও। জীবন নানা ক্ষেত্রে ছড়ানোর পরও মঞ্চের প্রতি টানটা অনেক বেশি।

প্রশ্ন: নিজের এলাকা নীলফামারীর সঙ্গে যোগাযোগ কীভাবে করেন?

আসাদুজ্জামান নূর: প্রতি মাসে বেশ কবার নিজের এলাকায় আসা-যাওয়া করি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। আমার এলাকার মানুষকে আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি। তারাও আমাকে খুব ভালোবাসেন। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করি। এলাকার প্রতি টান আমার সবসময়ই আছে।

প্রশ্ন: আপনার পূর্বপুরুষের আদি বাড়ি কোথায়?

আসাদুজ্জামান নূর: টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে। বেশ কয়েকবছর আগে একবার গিয়েছিলাম। আমার চাচাত ভাইয়েরা আছেন। গিয়ে খুব ভালো লেগেছিল।

প্রশ্ন: সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন?

আসাদুজ্জামান নূর: হ্যাঁ, মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমা করেছি। হাসান আজিজুল হকের গল্প অবলম্বনে। সিনেমাটির নাম ‘একাত্তর করতলে ছিন্নমাথা’। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বলেই করেছি। চেষ্টা করি মাঝে মাঝে সিনেমায় অভিনয় করার। চাঁদের অমাবস্যা নামে আরও একটি সিনেমা করেছি।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)