পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 22-11-2023

পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, দেশের ভেতরেও পরিবেশ সংকটাপন্ন জায়গাগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং দখল-দূষণের কারণে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে। এ সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা ও সংকট সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সভা সেমিনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে সমাবেশ মঞ্চে জলবায়ু বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

সুলতানা কামাল আরো বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতার অভাবে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি ও ক্ষতিপূরণে দাবি বিষয়টি কোনভাবেই অনুদানের সাথে সম্পর্কিত কোন ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বরং এটি একটি ন্যায্য অধিকার। যুগের পর যুগ ধরে ধনী দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতির কারণে আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এছাড়াও দু’দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলনে ৩৩দফা প্রস্তাাবনা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশ ও কৃষি জমির ক্ষতি করে কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাদের অংশ গ্রহণের নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান পিপলস্ মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)’র সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্ক’র স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম, জাপান থেকে আগত প্রতনিধি মাকিকু আরিমা, ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, ইউনাইটেড নেশনস্ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তা আরাফাত জুবায়ের প্রমূখ।

এপিএমডিডি’র লিডি ন্যাকপিল বলেন, জীবাশ্ব জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি সাথে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ। জীবাশ্ব জ্বালানি সস্তা হলেও নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে নিয়মিত জ্বালানি কিনতে হয় না বলে এটাতে তুলনামূলক খরচ কম ও নিরাপদ। ফলে অনবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর এই ক্ষতিপূরণ কোন দান-দক্ষিণা নয়, এটা আমাদের ন্যায্যপ্রাপ্য। 

গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্ক’র স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম বলেন, জলবায়ু সংকট মূলত, জীবাশ্ম জ্বালানি সংকট। যা মোট বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৯১ ভাগ নিঃরণের জন্য দায়ী। এছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসলে শুধুমাত্র যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কাজে আসবে তা নয়। জনস্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সহজলভ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। 

শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে আয়োজিত সমাবেশে সারাদেশ থেকে আসা ভূক্তভোগী নানা শ্রেণি-পেশার জনগণ সমস্যা ও সংকট চিত্র তুলে ধরেছেন। ওই সকল বিষয়ে দেশি-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন। যার ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাাবনাগুলো আগামী জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, স্থানীয় বাস্তুসংস্থান ও মানুষের উপর জীবাশ্ম জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্মসংস্থান হারানো ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মিথ্যা ও কপটতাপূর্ণ প্রতিশ্রুত কর্মসংস্থান নয়, বরং স্থানীয় লোকদের আগের কর্মসংস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহু পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। জীবাশ্ম ও অপরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ফিরে আসতে এর বিকল্প জ্বালানি ব্যাবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা নিতে হবে যাতে সবুজ কর্মসংস্থান তৈরি হতে ভূমিকা রাখবে। 

সমাবেশের আয়োজক হচ্ছেন ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থা, গণসাক্ষরতা অভিযান (সিএএমপিই), সেন্টার ফর আত্মস্ফেরিক পলিউশন (সিএপিএস), স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), কোস্ট ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল ল থিংকার্স সোসাইটি (জিএলটিএস), ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস), লোকাল এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট এন্ড এগ্রিকালচার সোসাইটি (লিডার্স),ন্যাশনাল রিভার আলাইন্স, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ (ডব্লিউকেবি)।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)