রওশনকে ছুড়ে ফেলা নিয়ে নানা গুঞ্জন


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 29-11-2023

রওশনকে ছুড়ে ফেলা নিয়ে নানা গুঞ্জন

সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাপা’কে নিয়ে চলছে নানান ধরনের গুঞ্জন। প্রথম দিকে দলটি প্রকাশ্যে বীর দর্পে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে ধরি মাছ না ছুই পানি’র অবস্থানে ছিলো। কিন্তু শেষ-মেষ ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় জাপা। আবার দলের অন্যতম অংশীদার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেনো? এই নিয়ে চলছে দেশের রাজনৈতির মাঠে নানান ধরনের আলোচনা। প্রশ্ন হচ্ছে কি হচ্ছে জাতীয় পার্টি? কারা চালাচ্ছে জাপা’কে? ঠিক এই সময়ে জাপা’র লাগাম কার হাতে?

জাপা’র ঠিক আগের অবস্থান

মাস কয়েক আগে জাতীয় পার্টি’র নেতারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবে কিনা এ নিয়ে এখনো ভাবছে না দলের হাই কমান্ড। তারা এ-ও বলেন যে, পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। বলা হয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে-পরের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অংশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেনি বলে জানায় জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি-বিশেষত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘চলমান বিরোধিতা’ কোন দিকে গড়াবে, এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। 

বর্তমান অবস্থান ও প্রেক্ষাপট

কিন্তু তফসিল ঘোষণার বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও জল্পনা কল্পনা দেখা দেয় আসলে জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কি-না? দলটির সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ায় রাজনীতিতে দেখা দেয় নানান ধরনের গুঞ্জন। বলা হয়, দলটি মাঠের আন্দোলনরত প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র সাথে গোপনে গাটছাড়া বেধেছে। আবার গুঞ্জন রটে জাপা রাজনৈতিক অঙ্গনে বড়ো ধরনের খেলোয়াড়ের ভূমিকায় নেমেছে। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনা ফেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে দেয় জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষে এ ঘোষণা দেন মহাসচিব মুজিবুল হক। 

অংশ নেয়া প্রসঙ্গে রহস্যজনক বক্তব্য

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা’র হুট করে অংশগ্রহণের ঘোষণা নিয়ে নানান রহস্যের ডালপালা গজায়। বলা হয় যে, ২০১৮’তে সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করাতে কিছু অভাবনীয় আরাজনৈতিক কায়দা ব্যবহার করা হয়। বলা হয় এবারও দলের বর্তমান দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বেলায় তেমনটাই ঘটেছে। কেননা খোদ দলের মহাসচিব মুজিবুল হক কিছু বাড়তি কথা বলে একধরনের রহস্যেরই সৃষ্টি করেছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে মুজিবুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটাররা ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন।’ যদিও তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের নাম উল্লেখ করতে চান না। এপ্রসঙ্গে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তাদের এই আশ্বাসের কারণে, তাদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস সৃষ্টি হওয়ার কারণে আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁর পক্ষ থেকে আপনাদের সামনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করছি।’ প্রশ্ন হচ্ছে কারা জাপা’কে আশ্বস্ত করেছেন? কেনো তাদের নাম বলতে চাইলেন না জাপা’র নেতারা? কাদের পরামর্শে জাতীয় পার্টি কোনো জোটে যাবে না, তিনশ আসনেই নির্বাচন করবে? এমন সিদ্ধান্ত নিলো? এসব কোনো কিছুরই উত্তর মেলেনি জাপা’র নেতার কাছে। ঠিক যেমনটা কোনো উত্তর মেলেনি গত সেপ্টেম্বরে চার দিনের ভারত সফর শেষে ঢাকায় ফিরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে। কেননা সে-ই সফর শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে সময়মতো একটি সুন্দর নির্বাচন চায় ভারত। এবং তারা চায়, নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলাদেশে যাতে কোনো ক্রমেই সহিংসতা, অরাজকতা না হয়। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর খোলামেলা আলোচনা হয়েছে তার। কিন্তু কার কার সঙ্গে সে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং কী বিষয়ে হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না। 

কঠোর চাপ? বডি ল্যাংগুয়েজে কি বলে?

আসলে কি কারণে নির্বাচন প্রশ্নে জাপা’র সব কিছু উল্টে গেলো? যে-ই জাপা’র নেতারা কয়েক দিন আগে বলেছিলেন যে, তারা নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। জানিয়েছিলো পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখছে তারা। জানিয়েছিলো দলের চেয়ারম্যান ৩০ নভেম্বরের আগে নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তা-হলে প্রশ্ন কেনো এই জাপা তাদের বিপ্লবী ভূমিকা থেকে সটকে পড়েছে? অনেকে বলাবলি করে রহস্য খোঁজার চেষ্টা করছে যে, জাপা’কে কে বিশেষ মহল থেকে চাপ দেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যেদিন সংবাদ সম্মেলন করে জাপা নির্বাচনে যাওয়া ঘোষণা দেয় জাপা অর্থাৎ সেদিন বিকেল সোয়া ৩টায় রাজধানীর বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে বেশ উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। অর্থাৎ বেশ চকচকেই মনে হয়েছে অনেকের কাছে। কোনো টেনশন বা মুখ গোমড়া মনে হয়নি। অবশ্য জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে এমন ঘোষণার সময়ে মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর পাশে না দেখা অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। সে হিসাবে শেষ বিচারে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাপা হয়তো চাপের পড়ার ভান ধরে নির্বাচনে অংশ নেয়ার উপায় খুঁজছিল। আসলে এমনটাই তারা যে করবে তা অনেকেই আগে ভাগেই মনে করছেন। কারণ হিসাবে বিশ্লেষকরা মনে করেন এই সে-ই জাপা যে দলটি কি-না ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছিলো। গত দুই নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টিতে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করে সংসদের বিরোধী দলের আসনে বসে দলটি।

রওশনকে ছুড়ে ফেলে দেয়া নিয়ে নানান গুঞ্জন

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের আসন শূন্য রাখা হলেও তার ছেলেসহ অনুসারীদের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলো না। অর্থাৎ রওশন গ্রুপের কাউকেই মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আর এমন কর্মকান্ডে প্রশ্ন দেখা দিয়ে কি হতে যাচ্ছে সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নিজে হাতে গড়া দলটির আসলে এখন চাবি কার হাতে? কে চালাচ্ছে দলটি? কি তাদের পরিকল্পনা? কারা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সহধর্মিনী রওশন এরশাদকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে ছুড়ে ফেলে দিলো? কেনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে তাকে রক্ষায় হাত বাড়ালো না? এমন নানান প্রশ্ন রাজনীতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেননা এই রওশন এরশাদ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে শেষ রক্ষা করেছিলেন। সেদিন রওশন এরশাদ পাশে না থাকলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে অনেক বিপদে পড়তে হতো। আর সে-ই কৃতজ্ঞতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখা গেছে বিভিন্নভাবে রওশন এরশাদের পাশে থাকতে এমনকি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা’র পক্ষ থেকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি রওশন গ্রুপের কাউকেই মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার ব্যাপারটি খুবই অসম্মানজন ঠেকেছে। কিন্তু কেনো রওশন এরশাদ এভাবে একা পড়ে গেলেন? জানা যায় রওশন এরশাদ জাপা’য় তার ব্যাপারে এমন সঙ্কটে পাশে চেয়েছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যেনো তিনি ভূমিকা রাখেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়,আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে রওশন এরশাদের এমন সঙ্কটকালীন সময়ে তেমন সাড়া দেয়নি। ফলে রওশন গ্রুপের কাউকেই মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে ফেলে জি এম কাদেররা। জানা গেছে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের এখন একটি প্রতিবেশী দেশের পাশাপাশি পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্রের বেশ আস্থা অর্জন করেছে। তারাই জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের একপ্রকার দেখভাল করছে। আর সে-ই খুঁটির জোড়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের গংরা রাজনৈতিক মাঠে খেলোয়াড়ের ভূমিকা নেমেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এমনটাই রাজনৈতিক মাঠ চষে খবর পাওয়া গেছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)