পুরুষ রাজনীতিবিদরা মর্যাদা দেন না নারী রাজনীতিবিদদের


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 06-12-2023

পুরুষ রাজনীতিবিদরা মর্যাদা দেন না নারী রাজনীতিবিদদের

সাবেক সংসদ সদস্য ও খালেদ মোশাররফ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মাহজাবিন খালেদ বলেছেন, পুরুষ রাজনীতিবিদরা নারী রাজনীতিবিদদের মর্যাদা দেন না। নারী রাজনীতিবিদদের অন্য নারীদের এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে হবে। গত ৪ ডিসেম্বর সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নির্বাচনী ইশতেহার ও নারী অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। নারী অধিকার ফোরাম বাংলাদেশ (অরফবি) এটির এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। মাহজাবিন খালেদ আরো বলেন, সমাজ ও রাজনীতিতে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হলে পুরুষের চিন্তাধারা বদলাতে হবে। ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব কোন দলই নিশ্চিত করতে পারেনি।

আলোচনা সভায় সামাজিক কর্মী ও নারীবাদী খুশি কবীর বলেন, প্রত্যেকটা দল যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, তাদের বলব নারী অধিকারের বিষয়টা যেন তারা নির্বাচনী ইশতেহারে সামনে নিয়ে আসেন। যারা নির্বাচনে আসবেন না, তারাও যেন এ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়াতে নারীর অগ্রাধিকারের ব্যাপারে বেশ নাম করেছে, এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। কিন্তু তারপরও আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই সমঅধিকার। তিনি বলেন, আমাদের সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার ছিল এবং আমাদের নির্বাচন কমিশনেরও অঙ্গীকার ছিল, এক তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের নমিনেশন দিতে হবে। একটা সময়সীমাও দেওয়া ছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। এখনো আমরা দেখছি, ৩০০ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেটাও মাত্র ৮ শতাংশ। এটা আমাদের আরও বাড়াতে হবে।

খুশি কবীর বলেন, আরেকটি বিষয় হলো, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন যেটা আছে, অন্য সংসদ সদস্যরা যারা ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসছে তারা সমান দৃষ্টিতে দেখছে না। এই যে সংরক্ষিত আসন এবং সরাসরি নির্বাচিত আসনের মধ্যে যে পার্থক্যটা আছে, সেটা আমরা বারবার বলে আসছি-আমরা নারীদের কোটা সিস্টেম চাই অথবা কোনো ব্যবস্থা চাই। এখানে যেন কোনো ব্যবধান না থাকে।

এসময় তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন- ১. উত্তরাধিকার ও অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে অভিন্ন পারিবারিক আইন করা। ২. শিক্ষার্থী বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ায় যানবাহন চালু ও উচ্চ শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো। ৩. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে মেয়ে ও কন্যাশিশুদের জন্য দেশের সব প্রান্তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ। ৪. কর্মক্ষেত্রে নারী নিয়োগ বাড়ানো। ৫. নারীবান্ধব বিচারব্যবস্থা।

নারী নেত্রী মমতাজ লতিফ বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিহত করতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে কমিটি গঠন করে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। বইপত্রের চেয়েও প্রচারণা বেশি কার্যকরী।

আমাদের অর্থনীতি’র সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি বলেন, নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে গেলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ অনেক কম। উচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবর্তন আসবে না।

সভায় অরফবি’র সভাপতি মাহমুদা খানম মিলি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই ধর্ম, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্যের কারণে নারী অধিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান এবং মতপার্থক্য রয়েছে। এক পক্ষের কাছে যা অধিকার, অপর পক্ষের কাছে তা অনধিকার বলে বিবেচিত হয়। অনেকে আবার পুরুষের সমকক্ষতার অর্জনকেই নারীর প্রকৃত অধিকার বলে মনে করেন। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক সচেতনতার সাথে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা অতি জরুরি।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী দেশে নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দল ৪৪টি হলেও আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। খুব শিগগির দেশ ও জাতির কাছে আগামীর বাংলাদেশ কিভাবে নির্মাণ করবে, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কতটা নিশ্চিত করবে কিংবা উন্নয়নশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা ইশতেহারের মাধ্যমে তুলে ধরবে।

আমরা মনে করি, নারীর অধিকার, নারীর শিক্ষা, চিকিৎসা, সুরক্ষাসহ সমঅধিকারের বিষয়গুলো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতিবন্ধভাবে লিপিবদ্ধ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মোট ভোটারের অর্ধেক নারীদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তিনি বলেন, দাবি আদায় ছাড়া আমরা পিছিয়ে যাবো না। সমাজে খালি পুরুষ নেতৃত্ব দেবে তা হবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। এখন আর পেশিশক্তি নয়, যোগ্যতা ও মেধাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এটিই আমাদের দাবি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারী অধিকার ফোরাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি রোকসানা বিলকিস, সহ-সভাপতি সাবিহা সুলতানা লাবনী, সাধারণ সম্পাদক কোহিনূর আজাদ মলি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরজাহান শামসসহ অনেকে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)