জলবায়ু সম্মেলনে নিয়ে হতাশা টিআইবি’র


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 20-12-2023

জলবায়ু সম্মেলনে নিয়ে হতাশা টিআইবি’র

ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলের জন্য বরাদ্দ থেকে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য কতটুকু বাস্তব সুফল বয়ে আনবে দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে তার কোনো দিক-নির্দেশনা নেই বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অভিযোজনের জন্য তহবিল বৃদ্ধি এবং তা সময়াবদ্ধভাবে সরবরাহের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্ত না হওযায় হতাশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

তবে দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৮) জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার ঘোষণা ও ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলের আনুষ্ঠানিক যাত্রাকে যদিও ইতিবাচকভাবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে টিআইবি। তবে উভয় ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য এর বাস্তব সুফল কখন, কীভাবে, কতটুকু আসবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

 সম্মেলনের খসড়া প্রস্তাবনায় প্রাথমিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ‘‘পর্যায়ক্রমে বন্ধ’’ করার কথা উল্লেখ করা হলেও দৃশ্যত জীবাশ্ম জ্বালানি লবির প্রভাবে, তা শেষ পর্যন্ত রাখা হয়নি। বরং সম্মেলনে নেট জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৫০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভরতা থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার বিষয়ে বাধ্যবাধকতাহীন অনির্দিষ্ট একটি ঘোষণা দিয়ে দায় সারা হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ‘‘পর্যায়ক্রমে সরে আসার’’ কথা বলা হলেও চূড়ান্ত চুক্তিতে সময়াবদ্ধ কোনো পরিকল্পনা বা পথরেখা নেই। অধিকন্তু, ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলের জন্য যে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মাত্র ঘোষণা করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য কতটুকু বাস্তব সুফল বয়ে আনবে তারও কোনো দিক-নির্দেশনা নেই।

গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলনে ২০০টি দেশের প্রতিনিধিদের ২০৫০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার ঘোষণা প্রদান ঐতিহাসিক বলে বিবেচিত হলেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাষাগত অস্পষ্টতা ও ত্রুটিযুক্ত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পথরেখা উল্লেখ না করে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই ‘‘যথাযথ’’, ‘‘সুশৃঙ্খল’’ ও ‘‘ন্যায়সঙ্গত’’ জাতীয় কিছু শব্দবন্ধ উল্লেখ করে দায়মুক্ত থাকার প্রবণতা উদ্বেগজনক। বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কথা বলা হয়েছে, যা বিগত ত্রিশ বছর আগেই সকল পক্ষ স্বীকার করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত অর্থায়নসহ তাদের কর্তব্য পালন করেনি। এ ছাড়া, উল্লিখিত ঘোষণা দুইটি মানার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়নি, যা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের প্রসারে যেমন কোনো বাধা না থাকার নামান্তর, তেমনি ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলের যাত্রাও বাগাড়ম্বরের (বুবধিংয) বেশি কিছু হবে-এমন প্রত্যাশা করা অমূলক।’ 

ড. জামান বলেন ‘এবারের সম্মেলনে শুরু থেকেই প্রত্যাশা ছিলো কয়লার ব্যবহার বন্ধে অন্তত সুনির্দিষ্ট একটি ঘোষণা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার মোড়কে ভাষাগত মারপ্যাচে চুক্তিতে ‘‘অদক্ষ’’ কয়লা প্রযুক্তিতে ভর্তুকি না দেওয়া এবং এমন প্রযুক্তিকে ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’’ বন্ধ করার মতো অস্পষ্ট ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে কয়লার ব্যবহার অব্যাহত রাখার সুযোগ বাস্তবে অবারিত রাখা হয়েছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বড় সফলতা।’

চুক্তির চূড়ান্ত নথিতে উন্নয়নশীল দেশের অভিযোজনে প্রতিবছর ২১৫ থেকে ৩৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজনের কথা স্বীকার করা হলেও অর্থায়নের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রতিফলন নেই উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নথিতে অভিযোজন বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলো অগ্রহণযোগ্যভাবে দুর্বল, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অভিযোজন কার্যক্রম এবং সে আনুযায়ী জলবায়ু অর্থায়নকে গুরুত্বই প্রদান করা হয়নি। উন্নত দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় তা প্রদান নিশ্চিত করতে এই সম্মেলনেও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।’ 

ড. জামান আরও বলেন ‘ক্ষতির শিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তায় ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলে ধনী দেশগুলো মাত্র ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদানের অঙ্গীকার করেছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। এই তহবিল পরিচালনা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশ কর্তৃক এই তহবিল থেকে অর্থপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া এবং সময়াবদ্ধাভাবে তা ছাড়করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পথরেখা নির্ধারিত হয়নি। বরং উন্নয়নশীল ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও বিশ্ব ব্যাংককে এই তহবিলের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাসহ ট্রাস্টির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে, যা ক্ষয়-ক্ষতি তহবিলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মালিকানা এবং স্বত্ব প্রতিষ্ঠায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’

জ্বালানি খাতের লবিস্ট ও প্রভাবশালীদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ; অভিযোজন ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ এবং তা ছাড়করণে সুনির্দিষ্ট পথরেখা নির্ধারণে সকল অংশীজনকে একত্রে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)