২০২৪-২৫ সাল বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং ও সংকটের


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 07-02-2024

২০২৪-২৫ সাল বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং ও সংকটের

তিন মাসের বাংলাদেশ সফরে দেশের বেশ কিছু স্থান ঘুরে, বিভিন্ন পর্যায়ের নানা জনের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করে আমার মনে হয়েছে ২০২৪- ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটময় হতে চলেছে। রিকশাওয়ালা, উবার চালক, সব্জি, মাছ ফেরিওয়ালা, মাঠের কৃষক, বাজারের সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে মধ্যম, শীর্ষ শিল্পপতিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আলাপ করেছি বন্ধু, পরিজন, সরকারি, বেসরকারি কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারিদের সঙ্গে, খেলোয়াড়, সংগঠক, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের সঙ্গে, মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে। আমার উপলব্ধি হলো বাংলাদেশ এখন গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট, জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে নিমজ্জিত। নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্যের কারণে সীমিত আয়ের মানুষদের এখন নুন আন্তে পান্তা ফুরানো অবস্থা। ব্যাঙ্ক, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তারল্য সংকটে। সিন্ডিকেটের অশুভ প্রভাবে সকল সেক্টর সমস্যাসংকুল। মানুষের মাঝে আস্থাহীনতা। তরুণ সমাজ হতাশ, দ্বিধাগ্রস্ত, বিদেশমুখী। সমাজসচেতন হিসাবে গভীর দেশপ্রেম থেকে বলছি বাংলাদেশের সংকটগুলো নিম্নরূপ-

অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানিবিদ্যুৎ সংকট, বাজার সিন্ডিকেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অবকাঠামো কাঠামো নির্মাণ, ভূমি প্রশাসন, আইন বিচারব্যবস্থা সর্ব ক্ষেত্রে অনাস্থা ও সুশাসনের অভাব। স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিকদের মনে কেন দ্বিধাগ্রস্থতা, আস্থাহীনতা বিরাজ করবে। মানুষ কেন নানা বিষয়ে স্বাধীনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছে না? কেন সবার মাঝে চাপা ক্ষোভ বারুদের মত জ্বলছে? আমি দেখেছি বাজারে নিত্যপণ্য সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, কৃষক নিয়মিত বাম্পার ফলন ঘটাচ্ছে। কিন্তু মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীরা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করে রেখেছে। এমন না সরকার এই সিন্ডিকেটদের চিনে না। সিন্ডিকেট নির্মূল করা সরকারের জন্য কঠিন কিছু না। সত্যিকার অর্থে আন্তরিক হলে কয়েক সপ্তাহে সরকার সিন্ডিকেট নির্মূল করে বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনতে পারে। সীমিত আয়ের সৎ মানুষদের স্বার্থে সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন নিত্য পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ। খাদ্য এবং কৃষি যেন সরকারের প্রাধিকার তালিকায় সর্বোচ্চ স্থান পায়। এর সঙ্গেই আসবে সমাজের সর্বস্তর থেকে থেকে দুর্নীতি নির্মূল। তবে সেটি করতে হলে সরকার প্রধানকে নিজের চারপাশ থেকে প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের (কিছু মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আত্মীয়, পরিজনদের) পরিশুদ্ধ করতে হবে। শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি দমন সংস্থাকে প্রথম দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদদের আয়, উপার্জনের সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। অনেকের বিরুদ্ধেই নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এহেন ব্যক্তিবর্গ দিয়ে সরকারপ্রধান কখনো ঘনায়মান সংকট মোকাবিলা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। 

জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে অনেক কথা বলেছি। আবারো বলছি নিজেদের কয়লা, গ্যাস সম্পদ নানা অজুহাতে মাটির নিচে রেখে বিদেশনির্ভর হয়ে বাংলাদেশ কখনো দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে না। কয়লা তুলতেই হবে, স্থলভাগ এবং সাগরের সম্পদ আহরণে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেই হবে। জ্বালানির দক্ষ এবং পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করণে সিস্টেম লস নিয়ন্ত্রণ এবং এখানেও সিন্ডিকেটের অশুভ প্রভাব মুক্ত হতে হবে। একসময় ভারত বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানিতে আগ্রহী ছিল। এখন বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য আমদানি করে, ভারত থেকে পাইপ লাইন দিয়ে গ্যাস আমদানির তোড়জোড় চলছে। বাংলাদেশ কেন জ্বালানি, বিদ্যুৎ বিষয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে প্রভাবমুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না? কেন জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর একান্ত আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে? 

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। অনেক বিষেশায়িত হাসপাতালসহ কমিউনিটি হাসপাতাল দেশে আছে। কিন্তু তাবু দেশের স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে জনগণ আস্থাহীন। কেন বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিয়ে জনগণকে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর যেতে হচ্ছে? 

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বলার কিছু নেই। শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থা কতটা আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। একই দেশে নানামুখী শিক্ষা ব্যবস্থা দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে ব্যর্থ হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা সামর্থ অনুযায়ী বিদেশমুখী হওয়ায় মেধা পাচার হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে নিজ দেশে ভারত, শ্রীলংকা, চীন থেকে বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী আসছে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং শিল্পকাখানা পরিচালনায়। 

পরিশেষে বলবো, সাধারণ জনগণের বদ্ধমূল ধারণা সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থায় প্রচ্ছন্নভাবে প্রভাবশালী এক বা একাধিক দেশের প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। দেশে বিকল্প থাকা সত্ত্বেও সঠিক দক্ষ মানুষদের সঠিক স্থানে পদায়ন করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আইনের শাসন আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ১৫ বছর বাধাহীনভাবে কাজ করে আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনীতির আকার বহুগুণ বাড়িয়েছে, অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, তবে সুশাসনের অভাবে ব্যয় নিয়ন্ত্রিকভাবে বেড়েছে, ঋণের দায় অক্টোপাসের মত বেঁধে ফেলেছে। হয়ত সরকার চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপ্তি এবং গভীরতা অনুভব করছে। আশা করি সরকারপ্রধান সর্বত্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সঠিক উদ্যোগ নিবেন সকল অনুরাগ-বিরাগ মুক্ত হয়ে, নাহলে কিন্তু সমস্যাগুলো গভীর সংকটে রূপ নিয়ে অচিরেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)