নতুন ক্রয় করা বাড়িতে অনুষ্ঠান করা হলো না বাংলাদেশি দম্পতির


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 14-02-2024

নতুন ক্রয় করা বাড়িতে অনুষ্ঠান করা হলো না বাংলাদেশি দম্পতির

২০২৩ সালের গ্রীষ্মে নিউইয়র্কের অদূরে বিনহামটনে নতুন বাড়ি ক্রয় করেছিলেন। সেই স্বপ্নের বাড়িতে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল গত ১০ ফেব্রুয়ারি হাফিজ আহমেদ অ্যাঞ্জেল ও সাথী আহমেদ দম্পতির। নতুন বাড়িটি এআরবিএনবির জন্য প্রস্তুতও করেছিলেন। যে কারণে এআরবিএনবি চালুর আগে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন। নিমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন পরিচিত জনদের। এর মধ্যে নিউইয়র্ক থেকে যাওয়ার কথা ছিল কয়েকজনের। কিন্তু কারো যাওয়া হলো না। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! নতুন বাড়িতে যাওয়ার পূর্বেই স্থায়ী বাড়ির বাসিন্দা হয়ে গেলেন নিউইয়র্কের অতিপরিচিত মুখ এবং ইয়েলো সোসাইটির সক্রিয় সদস্য হাফিজ আহমেদ অ্যাঞ্জেল ও সংগীতশিল্পী সাথী আহমেদের। তারা থাকতেন নিউইয়র্কের রকওয়েতে। একসময় ইয়েলো ট্যাক্সি চালালেও হাফিজ আহমেদ অ্যাঞ্জেল ইউএস আর্মিতে কাজ করতেন। ইউএস আর্মিতে কাজ করলেও তিনি তার লাইসেন্স রেখে দেন এবং খণ্ডকালীন উবার চালাতেন। হাফিজ আহমেদ অ্যাঞ্জেলের বন্ধু এবং বাংলাদেশ ইয়েলো সোসাইটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল ভূইয়া জানান, বাসার অনুষ্ঠান করার জন্য তারা গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় একমাত্র কন্যাসন্তান রাইদা আহমেদকে নিয়ে বিনহামটনের উদ্দেশে রাওয়ানা হয়েছিলেন।

নিউইয়র্কের কাছে অরেঞ্জ কাউন্টির উডবারির লং মাউন্টেন পার্কওয়েতে তারা মারাত্মক এক সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এবং সেখানেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে বলে নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে। নিহত হাফিজ আহমেদ অ্যাঞ্জেলের বয়স (৫২) ও সাথী আহমেদের বয়স (৪১) বছর। হাফিজ আহমেদের দেশের বাড়ি কুমিল্লার চাঁদপুরে এবং সাথী আহমেদের বাড়ি বরিশাল। গাড়িতে থাকা তাদের মেয়ে রাইদা আহমেদ (৭) আহত হয়েছে। তার অবস্থা উন্নতির দিকে এবং সে স্টাবল। আউয়াল ভুইয়া আরো জানান, হাফিজ আহমেদের সঙ্গে আমার ৮টার দিকেও কথা হয়। সে আমার পরিবারিক বন্ধু। সাধারণত কল দিলে সে সহজে ছাড়তে চায় না। কথা বলতেই থাকে। কিন্তু ওই দিন তার মেয়ের কারণে লম্বা কথা বলা সম্ভব হয়নি। ৮টা ১৭ মিনিটের সময় সে ফোন রেখে দেয়। তার মেয়ের রাইদা আহমেদ স্পেশাল চাইল্ড। তাই মেয়ের প্রতি খেয়াল রাখছিল। তিনি বলেন, হাফিজ আহমেদ অ্যাঞ্জেল খুবই ভালো মানুষ এবং দক্ষ সংগঠক। সে দীর্ঘদিন ইয়েলো সোসাইটির কার্যকরি কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে। 

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, হাইওয়েতে শতাধিক মাইল বেগে চালানো নিজের গাড়ির গতি কমাতে চেষ্টা করছিলেন বাংলাদেশি হাফিজ আহমেদ। সে সময় পেছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। তাতে বাংলাদেশি পরিবারের গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায়, টহল পুলিশের একটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আব্দুল আউয়াল ভুইয়া জানান, আমরা পুলিশ সূত্রে যা জেনেছি, একটি মার্সিডিজ গাড়ি অন্যটি ইনফিনিটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়, আর ইনফিনিটি গাড়িটি হাফিজ আহমেদের টয়োটা সিয়েনা গাড়িকে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা দেয়। প্রচণ্ড ধাক্কায় হাফিজ আহমেদের গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা করে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

আব্দুল আউয়াল ভুইয়া আরো জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভ্রান্তির তথ্য দেওয়া হচ্ছে। হাফিজ আহমেদ ও সাথী আহমেদের একমাত্র পুত্রসন্তান ইশাম আহমেদও ইউএস আর্মিতে রয়েছেন। তিনি ছিলেন আর্মি কলেজের ডর্মে। তিনি তার বাবা- মায়ের সঙ্গে যাননি। অন্যদিকে বাংলাদেশি এই দম্পতির লাশ এখনো অরেঞ্জ কাউন্টির মর্গে রয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের লাশ পাওয়া যাবে। লাশ পাওয়া গেলে জানাজার সময় জানানো হবে। তবে একটি জানাজা হবে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। জানাজা শেষে তাদের লাশ ইয়েলো সোসাইটির লং আইল্যান্ড মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হবে। তাদের লাশের সব দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ ইয়েলো সোসাইটি। তিনি পার্কওয়েতেও আরেক জানাজা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই দম্পতির মৃত্যুতে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশ ইয়েলো সোসাইটির কর্মকর্তারা এই দম্পতির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আব্দুল আউয়াল ভুইয়া তার বন্ধু এবং তার স্ত্রীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)