উপায় না দেখে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি


আলমগীর কবির , আপডেট করা হয়েছে : 21-02-2024

উপায় না দেখে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি

জয়া আহসান। বর্তমান সময়ের অলরাউন্ডার অভিনেত্রী। সিনেমা, মডেলিংয়ের পাশাপাশি সামাজিক কার্যক্রমেও তাকে বেশ সরব দেখা যায়। চলতি মাসে মুক্তি পেয়েছে তার দুটি ছবি। নাম ‘পেয়ারার সুবাস’ ও ‘ভূতপরী’। এসব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির 

প্রশ্ন: সম্প্রতি আপনি বিনোদনের কাজে হাতিকে ব্যবহার ও হাতিকে বাধ্য করতে নির্যাতনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন। এর কারণ কি? 

জয়া আহসান: হাতিদের যেভাবে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়, কয়েক মাস ধরে কঠিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়; এটা আমার কাছে একেবারেই বর্বরতা মনে হয়। একটা আধুনিক বাংলাদেশে আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। এ ছাড়া হাতি একটি বিপদাপন্ন প্রাণী, এটা নিয়ে খেলা দেখানো অপরাধ ও নৈতিকতার পরিপন্থী। হাতি নিয়ে চাঁদা নিতে গিয়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। এই বর্বরতা বন্ধ করার জন্য আমরা বহুবার বন বিভাগকে অনুরোধ করেছি। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে আমাদের দেশের এই সম্পদকে রক্ষা করতে আমরা মহামান্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আশা করছি মহামান্য আদালত আমাদের রাষ্ট্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য যুগান্তকারী রায় দেবেন।

প্রশ্ন: আপনি সিনেমা নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন। এই অর্থ ফেরত দিলেন কেন?

জয়া আহসান: ‘রইদ’ নামের একটি সিনেমার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পেয়েছিলাম। যে কারণেই হোক নির্মাণ প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে। সুমনকে বারবার তাগাদা দিয়েছি, এদিকে অনুদানের অর্থ নিয়ে ছবি নির্মাণ না করাটা অশোভন মনে হয়েছে আমার তাই ফেরত দিয়েছি।

প্রশ্ন: চলতি মাসে আপনার দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?

জয়া আহসান: এটা সত্যি যে, সরাসরি দর্শকদের মন্তব্য নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তারপরও দুটি ছবির জন্য দুই দেশের বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে ঘুরেছি, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের প্রায় সবারই সিনেমা দুটি ভালো লেগেছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দুটি নিয়ে অনেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করছেন। আমি যেমন ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি দর্শকদের আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি। দর্শকের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। কারণ দুটি কন্টেন্টই ভালো। ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার মাধ্যমে নির্মাতা ভিন্ন এক গল্প বলতে চেয়েছেন। এতদিন আমরা বলে এসেছি ছবিটি শুধু সংবেদনশীল মানুষের জন্য। আসলে তা নয়। বলতে পারেন, এটা সব ধরনের মানুষের জন্য। যে গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ হয়েছে তা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে। ছবিটি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পেয়েছে। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাচ্ছে। আর ভূতপরী শুধু ভূত আর ভয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; নারী চরিত্রের মৃত্যু রহস্যের মাধ্যমে ক্রাইম থ্রিলার ধাঁচেরও বটে। ফলে কলকাতার মানুষেরা ছবিটি বেশ পছন্দ করছেন।

প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন ‘পেয়ারার সুবাস’-এ অ্যাডালভ সিন বেশি। 

জয়া আহসান: এরকম কোনো কথা আমার কানে আসেনি। দেখুন, গল্পের প্রয়োজনে একটি সিনেমা, সিরিজ বা নাটকে অনেক কিছুই দেখাতে হয়। একটা ছবিতে দুঃখকষ্ট, হাস্যরসসহ নানা কিছু থাকে। তারচেয়ে বড় বিষয়- নির্মাতা কিভাবে গল্পটি উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টার সঙ্গে অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কী না, তাই মুখ্য। আমি দর্শকদের বলবো আপনারা সিনেমাটি দেখুন, তারপর নিজেরাই বুঝতে পারবেন।

প্রশ্ন: ইদানিং আপনি নাকি কলকাতায় বেশি থাকেন। কারণ কি?

জয়া আহসান: জানি না লোকে কেন এমন মনে করেন। আমি ঢাকায় থাকি। ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৩০ মিনিট যখন। যখন শুটিং হয় তখন ব্যাগ-বাক্স গুছিয়ে সেখানে যাই। শুটিং শেষে ফিরে আসি। এখানে ধরে নেওয়ার কোনো বিষয়ই নেই যে আমি শুধু বাইরে কাজ করি।

প্রশ্ন: নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে সংকোচ হয়?

জয়া আহসান: না। আমার কোনো নির্মাতার সঙ্গে কাজ করতে সংকোচ হয় না। কারণ আমি কোনো সিনেমায় চুক্তি করার আগেই গল্প, নির্মাণ আর চরিত্র নিয়ে আলোচনা করি। সব মিললেই রাজি হই। সেই ক্ষেত্রে নির্মাতা তরুণ না বয়স্ক তা মেটার করে না। অবশ্যই আমি চাই এখনে যারা নতুন পরিচালক আছেন তাদের সঙ্গে কাজ করতে। সে ক্ষেত্রে গল্পের আগে নির্মাতারা কথা দিয়ে আমাকে তো পটাতে হবে। কারণ, আমার মাথাটা তো এখন পাকা। জেনে বুঝে কাজ করি। 

প্রশ্ন: কলকাতার অভিনেত্রীদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের দূরত্ব আছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে। 

জয়া আহসান: এটা ঠিক নয়। ওখানকার প্রত্যেকের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়েছে। বিশেষ করে বলতে হয় পাওলির [পাওলি দাম] কথা। কলকাতায় আমি থাকলে, শুটিং শেষ করে ওর সঙ্গে আড্ডা দেই। স্বস্তিকার সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলি। আমাকে তারা কখনোই হুমকি হিসেবে নেয় না। তারা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। বলতে গেলে তারা আমাকে ভালোবেসে আগলে রাখেন। 

প্রশ্ন: বলিউডে আপনার যাত্রা শুরু হলো। হিন্দি সিনেমা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

জয়া আহসান: আমি অভিনয়েরই মানুষ। এটা আমার রক্তে মিশে আছে। বলিউড নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভাবনা নেই। আমি বোহেমিয়ান। ব্যক্তি জীবন ও কাজের বেলায়ও তা-ই। কাজের জন্য শুধু কলকাতা, বলিউড নয়, চীন-জাপানেও ছুটে যাব।

প্রশ্ন: বলিউডে কাজ করলেই কি অন্তর্জাতিক শিল্পী হওয়া যায়?

জয়া আহসান: বলিউড-হলিউডে কাজ করলেই যে আন্তর্জাতিক হওয়া যায় তা নয়, নিজের দেশের ছবি নিয়ে আরও বেশি আন্তর্জাতিক হওয়া যায়। আমাদের দেশের বহু ছবি অনেক দেশ ভ্রমণ করে প্রশংসা পাচ্ছে। অন্য দেশের ছবির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে। আমি মনে করি, দিন দিন আমাদের দেশের কন্টেন্টগুলোই আরও বেশি অন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)