ডোম ইনো’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 13-03-2024

ডোম ইনো’র বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

বাংলাদেশের স্বনাম ধন্য ডেভলপার কোম্পানী ডোম ইনো কর্তৃক প্রতারণার অভিযোগ এনে জমির মালিকরা বর্তমান সংকট নিরসনে প্রধান বিচারপতিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একটি রুল জারি করতে আহবান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি আইন, গণপূর্ত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শক্ত হাতে এ সংকট সমাধানের অনুরোধ জানান।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এদাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে মঈনুল আলম, হুমায়ুন হাসান, কাজী আদনান সোবহান, শিহাব উদ্দিন আহমেদ, রুমানা আহমেদ প্রমুখ ডোম ইনো কর্তৃক প্রতারনার অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য দেন।

ডোম ইনো কর্তৃক প্রতারণার অভিযোগ এনে জমির মালিকদের পক্ষ থেকে সংব্দা সম্মেলনে বলা হয় উত্তরাধিকারসূত্রে অথবা তিল তিল করে কষ্টের উপার্জনে রাজধানীর বুকে একখন্ড জমির মালিকানা লাভ করেছি আমরা। অথচ এ জমি নিয়েই আমাদের প্রত্যেকে আজ এক ভয়াবহ সংকটে বিপর্যস্থ। নিজের জমির ওপর ভবন তৈরীর লক্ষ্যে ‘ডোম ইনো’ নামের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমাদের প্রায় পথে বসার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে। 

বলা হয় যে, রাজধানী ঢাকায় একটি আবাসিক বহুতল ভবন নির্মাণে সাধারণভাবে তিন বছরের মত সময় লাগলেও কোম্পানিটির চরম অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ১২-১৬ বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি। এমনকি চুক্তিপত্র অনুযায়ী সাইনিং মানি প্রদানের শর্ত থাকলেও সে অর্থের বড় অংশ অনেক জমির মালিক এখনও বুঝে পাননি। কোম্পানিটির বাস্তবায়নাধীন এমন প্রকল্পও আছে, যেখানে চুক্তি সইয়ের এক দশক পরও ভূমি উন্নয়নের প্রাথমিক কাজই শুরু হয়নি। এ দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশ। অথচ ডোম ইনো এরই মধ্যে তাদের প্রাপ্য অংশের নির্মাণাধীন প্রায় সব ফ্ল্যাটই বিক্রি করে ফেলেছে। বিক্রয়লব্ধ অর্থ কোন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে, কিংবা অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে কি না - তা একেবারেই অস্পষ্ট। এদিকে জমির মালিকদের পাশাপাশি ভোগান্তির শকার হচ্ছেন ফ্ল্যাট মালিকরাও। অর্থ পরিশোধ করেও তাঁরা নিজেদের প্রাপ্য ফ্ল্যাট বুঝে পাচ্ছেন না। 

কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটি দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস দিয়ে চলেছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ভবন হস্তান্তর করতে না পারলে প্রতি মাসে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ পর্যন্ত প্রায় কোনো জমির মালিককেই অর্থ পরিশোধ করেনি ডোম ইনো কর্তৃপক্ষ। অনন্যোপায় হয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু জমির মালিকরা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছেন। জানা মতে, ডোম ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ১৩৬ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও মামলার গতি হতাশজনক। 

রিহ্যাব নিরব

রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলির সংগঠন রিহ্যাবের কাছেও মৌখিক ও লিখিতভাবে ডোম ইনোর বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে। রিহাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসাবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সদস্যপদ বাতিল করতে পারে সংগঠনটি। তবে এখন পর্যন্ত সে ব্যবস্থাও নেয়নি রিহ্যাব। বরং বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করা গেছে, গত বছর রিহ্যাব মেলার গোল্ড স্পন্সর ছিল ডোম ইনো। প্রতারণা ও অসততার মূর্ত প্রতীক এই ডোম ইনোকে রিহ্যাব কীভাবে এমন অনুমোদন দেয়, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত স্বাভাাবিক।

এ ছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জমির ভুয়া নকশা তৈরির মত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আছে ডোম ইনোর বিরুদ্ধে। রাজধানীর বনানীতে এ প্রক্রিয়ায় নির্মিত একটি ভবনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ডোম ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যা বর্তমানে চলমান। ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে হুমকি দিয়ে নিয়মিত টাকা আদায় করছে ডোম ইনো। টাকা প্রদানে অসম্মতি জানালে ক্রেতার নামে বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাট বাতিলের নোটিশ দেয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতির পাশাপাশি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে অপারগতার পেছনে আর্থিক সংকটকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কোম্পানিটির মালিকানায় ঢাকা, মাওনা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে বিপুল স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংকট সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয় বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট আইনও জমি বা ফ্ল্যাটমালিক বান্ধব নয়। সেই সুযোগ লুফে নিয়ে এই কোম্পানিটি নিজেরদের খেয়াল খুশিমত ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, কালের অমোঘ নিয়মে অনেক প্রকল্পের মূল মালিকরা নিজ ভবনে বাস করার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে এরই মধ্যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এখনতাদের ওয়ারিশরা এই প্রতারণার যাতাকলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সংকট সমাধানে তারা বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। ডোম ইনো সংক্রান্ত সংকট মোকাবেলায় একটি 'সেল' বা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। এতে বলা হয় আদালতের ওপর থেকে মামলার চাপ কমবে। পাশাপাশি হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন ফ্ল্যাট ও জমির মালিকরা। প্রকল্প হস্তান্তরের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে জমির মালিক ও ডোম ইনোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রটি বাতিল বলে গণ্য করতে হবে। একই সাথে ডোম ইনোকে দেয়া জমির মালিকের রেজিস্ট্রিকৃত আম মোক্তারনামাটিও বাতিল ঘোষণা করতে হবে, যাতে এর কোনো কার্যকারিতা না থাকে। ডোম ইনো কর্তৃক জমির মালিককে প্রদানকৃত যে সব চেক ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির বিপরীতে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ ধার্য করতে হবে। জমি ও ফ্ল্যাটমালিকদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন তারা। সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আর্কষণ করেন। তারা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স অবস্থান, অসহায় মানুষদের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ মমত্ববোধ আমাদের আশান্বিত করে। তাঁর আন্তরিক অভিভাবকত্বে, সহযোগিতায় আমরা হাজারো মানুষ এই ভয়াবহ দুর্বিপাকের কবল থেকে চিরতরে মুক্তি পাবো, এ আমাদের প্রত্যাশা। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)